ঈশ্বরগঞ্জে শিম চাষ করে স্বাবলম্বী দশ গ্রামের মানুষ

কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে শত শত নারীর

প্রকাশিত: ৩:৩৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৮, ২০২০

সাইফুল ইসলাম তালুকদার,ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ)
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বুকচিরে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদ বিধৌত রাজীবপুর ইউনিয়নের দশটি গ্রামে ১৮শ একর জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে শিম।

এই শিম চাষ করে ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী উজানচরনওপাড়া ,মাছুয়াডাঙ্গা, খুলিয়ার চর, যাদুয়ার চর, সীমার বুক, চর রামমোহন, ভাটিরচরনওপাড়া, গড় পাড়া, মড়ল পাড়া, দীঘলাপাড়া গ্রামের প্রায় ৫ হাজার কৃষক তাদের জমিতে কৃষি বিভাগের পরামর্শক্রমে আধুনিক চাষ পদ্ধতিতে বারি-৪ জাতের শিম চাষ করেছেন।

দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে শিমের আশাতীত ফলন হওয়ায় আর্থিক ভাবে লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। চরাঞ্চলের দশটি গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠের যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই দেখা যায় বাঁশের মাঁচায় ঝুঁলে আছে সবুজ রংয়ের শিম আর শিম।

ভাটিরচরনওপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, এবার শিমের যেমন বাম্পার ফলন হয়েছে তেমনি বাজার দরও ভালো। বর্তমানে প্রতি মণ শিম ১১শ থেকে ১২শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই চরাঞ্চলের শিম ক্ষেত থেকে প্রতিদিন প্রায় ১শ ৮০ টনের মত শিম উত্তোলন করা যায়।

এসব শিম স্থানীয় বাজারসহ ঢাকা, মাওনা চৌরাস্তা, তাড়াইল, ভৈরব, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হয়ে থাকে। কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে চরাঞ্চলের মানুষ শিম চাষ করে আসছে। শিম চাষ করে এ অঞ্চলের কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে তাদের ভাগ্য বদলিয়েছেন।

সাইফুল ইসলাম এবার আধুনিক চাষ পদ্ধতিতে জৈব ও রাসয়নিক সার ব্যবহার করে বিশ কাঠা জমিতে শিম চাষ করেছেন। এতে তার ব্যয় হয়েছে ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। খরচ বাদে তিনি ৬ লক্ষ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান।

শিম চাষ করে কৃষকরা যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার শত শত বেকার নারীদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, একজন নারী শ্রমিক দৈনিক ক্ষেত থেকে শিম তুলে দুইশত টাকা মজুরি পেয়ে থাকেন।

চরাঞ্চলের মাঠ ঘুরে দেখা যায় শত শত নারী মাঠ থেকে শিম তোলাসহ নানা কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। নারী শ্রমিক ফজিলা ও আলপিনা খাতুন জানান , তারা মাঠে কাজ করে প্রতি মাসে ছয় হাজার টাকা আয় করে থাকেন। এই উপপার্জনের টাকায় তাদের সংসার চলে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ভূইয়া জানান, আষাঢ় মাসে এসব জমিতে জৈব, ডিএপি, এমওপি, বোরন, ইউরিয়া সার ব্যবহার করে বীজ রোপন করা হয়। পরবর্তীতে যখন ফুল ও ফল ধারণ করে তখন কৃষকরা জৈব বালাই নাশক ব্যবহার করায় কীটনাশকের ব্যবহার করতে হয় না। ফলে এ অঞ্চলের শিম বিষ মুক্ত হওয়ায় এর প্রচুর চাহিদার কারণে পাইকাররা মাঠ থেকেই শিম কিনে নিয়ে যান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার বলেন, রাজীবপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের কৃষকরা উন্নত জাতের শিম চাষ করে এলাকায় বিপ্লব ঘটিয়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ শিম চাষ ছাড়াও কৃষকদের সব ধরণের চাষাবাদে উন্নত প্রযুক্তির পরামর্শসহ প্রণোদনা দিয়ে সহায়তা করে থাকে।