একজন ফেরিওয়ালা নাসির আলীর গল্প

প্রকাশিত: ৬:৫২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১

শাহ্ আলম ভূঁইয়া, নান্দাইল আঞ্চলিক অফিস :

মো.নাসির আলী (২৯) চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। পিতা-মাতা ও স্ত্রীকে নিয়ে তার অভাবের সংসার।
বড় হয়েছেন অভাবের সংসারে। বেড়ে উঠা পর্যন্ত অভাবের মাঝেই কেটেছে তার দিন। সুখের মুখ দেখেননি কখনো। কোনদিন খেতে পারেননি ভালো খাবার। অর্ধাহারে,অনাহারে কেটেছে একেকটি দিন। ফেরি করে আজ তার সংসারে ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা।

 

নান্দাইল উপজেলার বীরকামট খালী গ্রামে কথা হয় নাসির আলীর সাথে। জীবন-জীবিকার তাগিদে মো. নাসির আলী পরিবার পরিজন ছেড়ে ময়মনসিংহের নান্দাইলের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করেন নানা রকমের জিনিস। বাইসাইকেলে করে ভ্রাম্যমাণ দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র সাজিয়ে নিয়ে তা ফেরি করে বিক্রি করেন তিনি।তার ভ্রাম্যমাণ দোকানে পাওয়া যায় স্টিলের থালা, টিফিনবক্স, মগ,প্লাস্টিকের বাটি ,বালতি, ট্রে,মোড়া,বল বদনা,খাড়া, তালা ব্যাংক,চামিচ,খেলনা, গাড়ি,ঢালা,লবণদানি,বদনা,টুল, প্লাস্টিকের দা,বটি বাচ্চাদের খেলনা, আচার,ফিতা,ও কসমেটিক্সসহ প্রায় ১০০ প্রকারের জিনিস। ৫০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা মূল্যের জিনিস রয়েছে তার দোকানে। তিনি রাজধানী ঢাকা থেকে এ মালামাল কিনে থাকেন।

 

সকাল ৮ টার আগেই গ্রামে গ্রামে দল বেঁধে পণ্য নিয়ে শুরু হয়ে যায় তাদের হাঁকাহাঁকি। তাদের দলে রয়েছেন ৪০ জন।স্থানীয় মধুপুর বাজারে ভাড়া বাসায় থাকেন তারা। প্রতিদিন বিভিন্ন রকমের হাঁকডাক ও বাঁশি বাজিয়ে সাইকেলে পণ্য সাজিয়ে গ্রামের পর গ্রাম ছুটে চলেন নাসির আলী। তাদের বিভিন্নরকম ছন্দমাখা বাক্যে মুখরিত থাকে গ্রামীণ জনপদ। এদের ডাকে বাড়ির পুরুষরা কিছুটা বিরক্ত হলেও নারীরা কান পেতে থাকেন কখন আসবে ফেরিওয়ালা।

 

উপজেলার বীরকামট খালী গ্রামের গৃহীনী রওশন আরা, রোমেলা আক্তার জানান, সংসারের ব্যস্ততার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হাটবাজারে যাওয়া সম্ভব হয়না।এসব পণ্যই ফেরিওয়ালারা ডেকে ডেকে বিক্রি করেন।এতে ক্রেতা- বিক্রেতা উভয়ের জন্য সাশ্রয়ী।

 

চিরচেনা জীবন জীবিকার তাগিদে হরেক রকম ব্যবসার ভিড়ে সাফল্যের মুখ দেখেছেন ফেরিওয়ালা নাসির আলী।মানুষের মাঝে নিত্যপণ্য জিনিসপত্র পৌঁছে দিয়ে গ্রামের পাড়া মহল্লার গৃহীনীদের কাছে জনপ্রিয়তা কেড়েছে ফেরিওয়ালা। এতে ব্যবসায়িকভাবে সফলভাবে জীবীকা নির্বাহ করছেন ফেরিওয়ালা শ্রেণির ব্যবসায়ীরা।

 

তিন বছর হয় তিনি বিয়ে করেছেন। এখনও সন্তানাদি হয়নি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অল্প কিছু পড়ালেখা করেছেন। সংসারের অভাবের তাড়নায় কিছু দিন দিনমজুরির কাজও করেছেন তিনি। নাসির আলী জানান, সামান্য আয়ে পোষাতে না পেরে ৭ বছর ধরে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বেড়াই।

 

তিনি আরও জানান, এ ব্যবসায় বেচাকেনা ভালোই হয়। তার অধিকাংশ ক্রেতাই গ্রামের মহিলা ও শিশু। যারা কেনাকাটার জন্য বাজারে যায় না। তারাই তার কাছ থেকে নানা জিনিসপত্র কিনে থাকেন।রঙিন বিভিন্ন খেলনা শিশুরা কিনে থাকে। অন্যান্য ব্যবসার মতো বাকিতে কোন জিনিস বিক্রি হয়না। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার জিনিস তিনি বিক্রি করতে পারেন। বিশেষ করে দুই ঈদ,পহেলা বৈশাখ ও পুজার সময় তার বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি হয়। সব খরচ বাদে প্রতিমাসে তার ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় থাকে। প্রতিদিন তিনি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ফেরি করতে যান। একই গ্রামে প্রতিদিন যান না। অন্তত ১৫ দিন পর পর এক গ্রামে যান। এতে বিক্রি ভালো হয়। বাড়ি থেকে দুপুরের খাবার সঙ্গে নিয়ে যান। বেলা হলেই কোথাও একটু বসে জিরিয়ে খাবার সেরে নেন।

 

তিনি জানালেন এক দুই মাস পরপর তার গ্রামের বাড়িতে প্রিয়জনের টানে ছুটে যান। সংসারে বাবা-মা, স্ত্রী নিয়ে এখন তার দিন ভালোই কাটছে। ফেরি করে তার সংসারে দেখা দিয়েছে স্বচ্ছলতা।