গৌরীপুরে যত্ন প্রকল্পের টাকা উত্তোলনে হুড়াহুড়ি : গৌরীপুরে দুই শিশু মৃত্যুর গুজব, দুর্নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ৯:৩৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০২১

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নে শনিবার (২৩ অক্টোবর/২০২১) আইএসপিপি ‘যতœ’ প্রকল্পের আওতায় নির্বাচিত শিশুর মায়েদের মাঝে ক্যাশ কার্ডের মাধ্যমে ১হাজার ৫৭৭জন শিশুর মায়েদের মাঝে ৬২লাখ ৫০হাজার ৯শ টাকা বিতরণকে কেন্দ্র করে সুবিধাভোগীদের হুড়াহুড়ির কারণে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।

এ সময় প্রচন্ড গরম মায়েদের কোলে থাকা ৪/৫জন শিশু অচেতন হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে দু’জন মারা গেছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে টাকা বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ প্রকল্পে তালিকাভুক্ত হতে জনপ্রতিনিধিদেরকে ৪/৫হাজার টাকা করে নেয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে। প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বঞ্চিতকরণ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেন এলাকাবাসীও।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গৌরীপুর থানার সাবইন্সপেক্টর মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সময় দারিয়াপুর গ্রামের হাসু মিয়ার স্ত্রী খাদিজা খাতুন জানান, তার দুই জমজ বাচ্চা। দু’টি স্লিপে ৩হাজার ৬শ টাকা করে আছে। তাকে দেয়া হয়েছে একটি স্লিপের টাকা। সুবিধাভোগী হাজেরা খাতুন জানান, তার দু’টো স্লিপে ৮হাজার ৪শ টাকা লিখা রয়েছে। তাকেও ৪হাজার ২শ টাকা দিয়ে পরিশোধিত লেখা সিল মেরে দেয়া হয়েছে। আয়শা আক্তার জানান, তার স্লিপে ৬হাজার ২শ টাকা, তাকেও দেয়া হয়েছে ৩হাজার ১শ টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সুবিধাভোগী জানান, ৫হাজার টাকা দিয়ে নাম তুলেছি, বলেছে ১৪হাজার টাকা পাবো, এখন দিয়েছে মাত্র ৩হাজার ১শ টাকা।

এ নারীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে আরেক অভিযোগকারী বলেন, ৪হাজার টাকা লগ্নী (সুদে) করে এনে দিয়েছি এখন আমাকে দিয়েছে ৩হাজার ৬শ টাকা। সুবিধাভোগীদের আন্দোলন ও প্রতিবাদের মুখে টাকা বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেন যতœ প্রকল্পের কর্মকর্তাগণ। সালমা আক্তার জানান, আমার সামনেই লাইনে কয়েকজন শিশু জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তবে কেউ মারা যায়নি। এ প্রকল্পের সুপারভাইজার শেখ মো. ফজলে রাব্বী বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে টাকা বিতরণ সম্ভব নয়। ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরাও এ সময় চলে যান। মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ মারা গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

খবর পেয়ে নিজগাড়ীতে আকবর মাইক সার্ভিসের মাইক ও মাইকম্যান মো. আকরব আলীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ। ইউনিয়ন পরিষদের সামনে উপস্থিত হাজারো সুবিধাভোগীর উদ্দেশ্যে তিনি বক্তব্য রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তিনি জানান, যত্ন প্রকল্পের প্রত্যেকের ভাতা এক নয়, দু’টো স্লিপের একটি অফিসে জমা থাকবে, আরেকটি গ্রাহক কপি। তিনি বলেন, এ প্রকল্পে কোথাও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বোকাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাবিব উল্লাহ জানান, মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে আমার সুনাম নষ্ট করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। সামনে নির্বাচন তাই আমাকে হেয়-প্রতিপন্ন করতে একটি পক্ষ মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। গৌরীপুর থানার এসআই মো. মনিরুল ইসলাম জানান, শিশুমৃত্যুর বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। পুলিশের উপস্থিতিতে এখন সুশৃঙ্খলভাবে টাকা বিতরণ করা হচ্ছে।