গৌরীপুরে জমি গড়মূল্য বেশি থাকায় প্রতিবাদ ও মানববন্ধন

প্রকাশিত: ৬:৩৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০২১

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
‘আমার জমি আছে, বিক্রি করতে পারছি না, বেঁচে থাকার জন্য চিকিৎসা করতে পারছি না, মরে গেলে সন্তানরা কাফনের কাপড়ও কিনতে পারবে না। কেননা ১লাখ টাকার জমি বিক্রি করলে দলিল করতে হয় ১৫লাখ টাকার। জমি বিক্রির চেয়ে দলিল খরচ বেশি।

 

ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের পাছেরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর/২০২১) ‘জমি বিক্রি মূল্যের চেয়ে গড়মূল্য বেশি’ হওয়ায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনে ৫ সন্তানের জনক নওয়াব আলী হাজী (৮৫) এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাপে বেচছে দলিল হয় নাই, জমি কেনার চেয়ে, দলিল খরচ বেশি। এই সাবরেজিস্টার অফিসের গড়মূল্যের কারণে দলিল না করায় আমরা মরার পর এ গ্রামে খুনাখুনি হবে।

প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পাছারকান্দা গ্রামের কৃষক হাজী মো. আব্দুল মালেক। সঞ্চালনা করেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. আব্দুস সালাম। প্রতিবাদ সমাবেশ কৃষক ফজলুল হক জানান, তিনি পাছারকান্দা গ্রামে ২০শতাংশ জমি ২লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের বেঁধে দেয়া গড় মূল্য (সর্বনিন্ম ক্রয়-বিক্রয়ের হার) প্রতি শতাংশে ১লাখ ১৮হাজার ৪২টাকা। দলিল করতে হবে ২০লাখ ৩৬হাজার ৮৪টাকা। দলিল খরচ জমির মূল্যের চেয়ে বেশি। এখন জমিও রেজিষ্ট্রি হচ্ছে না, চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না।

পাছারকান্দা গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের পুত্র মো. শাহীন মিয়া জানান, তিনি ২০শতাংশ জমি বিক্রি করেছেন ৩লাখ ৫০হাজার টাকায়। অথচ দলিল খরচ এর চেয়েও বেশি, তাই রেজিষ্ট্রি করতে পারছেন না। কৃষক আব্দুল মতিন জানান, তিনি ১০শতাংশ জমি বিক্রি করেছে ১লাখ ৭৫হাজার টাকায়। মো. আমির হোসেন জানান, তিনি শ্রী বরুন চন্দ্র বর্ম্মনের নিকট থেকে ২বছর হয়েছে জমি কিনেছেন, তবে রেজিষ্ট্রি খরচ বেশি হওয়ায় দলিল করতে পারছেন না। আবুল কালাম বলেন, গড়মূল্য নির্ধারণের সময় কোনো গণশুনাণী হয়নি। ফলে জমির মূল্যের ১০গুণ করা হয়েছে গড়মূল্য। যার কারণে এ এলাকার জমি মৌখিকভাবে বিক্রি হচ্ছে, দলিল করতে পারছে না।

অনুরূপ অভিযোগ তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন পাছারকান্দা গ্রামের মো. ফয়েজ উদ্দিন, মো. জুয়েল মিয়া, মো. শামছুল হক, উছমান গনি, রহমত আলী, বাবুল মিয়া, বরুন চন্দ্র বর্ম্মণ, আব্দুস সেলিম, জুলহাস উদ্দিন প্রমুখ। এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম জানান, গৌরীপুর মৌজার হলেও পাছারকান্দা গ্রামটি খাল-বিল বেস্টিত নিচু এলাকা প্রত্যন্ত অঞ্চল। এ এলাকার জমির প্রতি শতাংশের গড় মূল্য কান্দা শ্রেণিভূক্ত ২০/২৫হাজার টাকা আর নামা শ্রেণিভূক্ত জমি ১০/১২হাজার টাকা হতে পারে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন খান বলেন, সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের নির্ধারিত এ গড়মূল্য অযৌক্তিক। তা পরিবর্তনের জন্য পাছারকান্দা এলাকাবাসীর দাবী যৌক্তিক। এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর সাবরেজিস্টার হেলেনা পারভীন বলেন, ২০১৬সালে সর্বশেষ গড়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিলো। সে অনুযায়ী গৌরীপুর মৌজার অন্তর্গত পাছারকান্দা গ্রামের প্রতি শতাংশের গড়মূল্য কান্দা শ্রেণিভূক্ত ১লাখ ১৮হাজার ৪২টাকা ও নামা শ্রেণিভূক্ত ৫৩হাজার সাতশত এক টাকা। তিনি আরো জানান, মৌজার গড়মূল্য গুচ্ছপদ্ধতিতে (গুরুত্ববিবেচনা অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ) নির্ধারণ করার নির্দেশনা এসেছে। তবে তা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।