স্টাফ রিপোর্টার : ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে আদিবাসি দুই কিশোরী গণধর্ষণ মামলার ৮দিনের মধ্যে ৫ আসামীকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শুক্রবার বিকাল থেকে রাতব্যাপী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা এবং ময়মনসিংহের তারাকান্দা ও হালুয়াঘাট থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অপরদিকে পৃথক অভিযান চালিয়ে র্যাব-১৪ আরো একজনকে আটক করে। ডিবির হাতে গ্রেফতারকৃতরা হলো, শরীফ মিয়া, মিজানুর রহমান, মিয়া হোসেন, রুকন মিয়া ও আব্দুল হামিদ। এছাড়া র্যাবের হাতে আটককৃত সোলায়মান হোসেন রিয়াদ।
মামলা সুত্রে জানা গেছে, হালুয়াঘাটের ডুমনিকুড়া গ্রামের আদিবাসি ৩ কিশোরী গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথিমধ্যে রিয়াদ, শরীফ, মিয়া হোসেন, রমজান আলী, কাউছার, আছাদুল, শরিফুল ইসলাম, মিজান, রুকন ও মামুন তাদের পিছু নেয়। কাটাবাড়ি এলাকায় পৌছলে এক পর্যায়ে চক্রটি তাদেরকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে টানাহেচড়া করতে থাকে। এ সময় এক কিশোরী দৌড়ে পালিয়ে গেলেও অন্য দুই কিশোরীকে চক্রটি আটক করে পালাক্রমে জোরপুর্বক ধর্ষণ করে। এ ঘটনার তিনদিন পর ধর্ষণের স্বিকার এক কিশোরীর পিতা বাদি হয়ে হালুয়াঘাট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩ এর ৯(৩)/৩০ ধারায় গণধর্ষণ ও সহায়তার অপরাধে মামলা নং ২৪, তারিখ ৩০/১২/২০২১ দায়ের করে। মামলায় উপরোক্ত ১০জনকে আসামী করা হয়েছে।
গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুততম সময়ে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ এবং বিচার কাজ অল্প সময়ে বিচারিক কাজ শুরুর লক্ষে অপরাধীদের গ্রেফতারে হালুয়াঘাট থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশকে দায়িত্ব প্রদান করেন ময়মনসিংহের মেধাবী ও দায়িত্বশীল পুলিশ সুপার। পুলিশ সুপার মোহাঃ আহমার উজ্জামানের নির্দেশে ডিবির ওসি সফিকুল ইসলাম তার অধীনস্থ পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ঝুটন কুমার বর্মন, সেকেন্ড অফিসার আনোয়ার হোসেন, এসআই আব্দুল জলিল এবং পরিমল চন্দ্র সরকারসহ অন্যান্যদের নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে টানা অভিযান পরিচালনা করেন। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শুক্রবার বিকাল থেকে রাতব্যাপী রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহের তারাকান্দা ও হালুয়াঘাটে অভিযান পরিচালনা করে ৫ ধর্ষককে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শরীফ মিয়া, মিজানুর রহমান ও রুকন মিয়াকে ঢাকা থেকে এবং মিয়া হোসেনকে তারাকান্দা ও আব্দুল হামিদকে হালুয়াঘাট থেকে গ্রেফতার করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ইমরান আল হোসাইন বলেন, এ ঘটনা নানা মাধ্যমে পুলিশ জানতে পেরে ঘটনার তিনদিন পর ধর্ষিতার পরিবারকে ডেকে এনে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিবির ওসি সফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে পুলিশের ব্যস্ততা এবং অপরাধীরা আতœগোপনে থাকায় আসামীদেরকে গ্রেফতারে একটু সময় লাগছে। এর পরও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ধর্ষকদের অবস্থান শনাক্ত শেষে শুক্রবার বিকাল থেকে রাতব্যাপী রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর তারাকান্দা ও হালুয়াঘাটে টানা অভিযান চালিয়ে ৫ ধর্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের দায় স্বিকার করেছে। ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যদের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করার লক্ষে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে শনিবার আসামীদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে ওসি আরো জানান।
পুলিশ সুপার মোহাঃ আহমার উজ্জামান জানান, মামলা দায়েরে ধর্ষিতার পরিবার বিলম্ব করে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলার পর তারা মামলা করে। এই সুযোগে অপরাধীরা গা ঢাকা দেয়। এর পরও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে থানা ও ডিবি পুলিশের চৌকস দল অভিযুক্তদের মাঝে এজাহার নামীয় চারজন এবং সদ্বিগ্ধ একজনকে বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্তরা গা ঢাকা দেওয়ায় একটু সময় লাগছে। দ্রুততম সময়ে অন্যান্যদেরকে গ্রেফতারের চেষ্ঠা চলছে। এ জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অপরদিকে দুই কিশোরী গণধর্ষণ মামলার এজাহার নামীয় এক নম্বর সোলায়মান হোসেন রিয়াদকে র্যাব-১৪ ঢাকা থেকে আটক করে।