আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো নিউজিল্যান্ডেও ফের দ্রুতগতিতে ছড়াতে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। ভাইরাসের অতিসংক্রামক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণেই সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দেশজুড়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে নিউজিল্যান্ডের সরকার।
আর এই বিধিনিষেধের কারণে নিজের বিয়ের অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। রোববার (২৩ জানুয়ারি) সাংবাদিকদের কিউই প্রধানমন্ত্রী নিজেই একথা জানিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ৯ জন করোনার অতিসংক্রামক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হন বলে শনাক্ত হয়েছেন। এরপরই রোববার মধ্যরাত থেকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার এবং জনসমাগমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় নিউজিল্যান্ডের প্রশাসন।
রয়টার্স বলছে, নিউজিল্যান্ডের নর্থ আইল্যান্ডে একটি বিয়ে ও এ সম্পর্কিত অন্যান্য অনুষ্ঠান সেরে বিমানে করে সাউথ আইল্যান্ডের নেলসনে ফিরে আসে একটি পরিবার। পরে ওই পরিবার ও তাদের ভ্রমণ করা ফ্লাইটের একজন অ্যাটেনডেন্ট করোনায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন।
এরপর নিউজিল্যান্ডজুড়ে করোনা বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। তিনি বলেন, সংক্রমণ প্রতিরোধে আরও বেশি মানুষকে মাস্ক পরতে হবে। বার ও রেস্টুরেন্টগুলোতে এবং বিয়ের মতো ঘরোয়া অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি মানুষ উপস্থিত থাকতে পারবেন না।
এমনকি এসব ভেন্যুতে যদি ভ্যাকসিন পাস ব্যবহার করা না হয় তাহলে উপস্থিতির এই সীমা ২৫ জনে নেমে আসবে বলেও জানান তিনি।
রোববার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমার বিয়ের অনুষ্ঠানও হচ্ছে না। একই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়া সবার জন্যই তিনি দুঃখিত বলেও জানান কিউই প্রধানমন্ত্রী। আরডার্ন অবশ্য তার বিয়ের তারিখ প্রকাশ করেননি। তবে শিগগিরই তার বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতে পারে বলে গুজব ছিল।
দীর্ঘদিনের সঙ্গী ও জনপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপক ক্লার্ক গেফোর্ডের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের বাগদান হয় দুই বছরেরও বেশি সময় আগে। তারপর তাদের বিয়ে কথা থাকলেও নানা কারণে তা পিছিয়ে যায়। অবশ্য বিয়ে না হলেও নেভ নামে তাদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
বিয়ের অনুষ্ঠান বাতিলের পর কেমন লাগছে; সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেন, ‘এটিই জীবন। আমি এর থেকে আলাদা নই। আমি সাহস করে বলতে পারি যে, করোনা মহামারি আরও হাজার হাজার নিউজিল্যান্ডবাসীর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এমনকি কখনও কখনও এমনও হয় যে, কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে তারা তাদের প্রিয়জনের সাথে থাকতে পারেন না। আর এটিই আমাকে বেশি কষ্ট দেয়।’
২০১৮ সালের জুন মাসে জেসিন্ডা আরডার্ন প্রথম সন্তানের জন্ম দেন। বিশ্বের ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রীর মতো পদে থেকে মা হওয়ার দ্বিতীয় ঘটনা ছিল এটি। প্রথম জন ছিলেন পাকিস্তানের দুই বারের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো।
মা হওয়ার পর একই বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সম্মেলনে শিশু সন্তানসহ অংশ নেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। সন্তানের জন্মের পর থেকে টিভিতে ফিশিং শোর উপস্থাপক ক্লার্ক গেফোর্ড সন্তানকে দেখভালের কাজ করছেন।
এর আগে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছিল, ২০১২ সালে একটি পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে জেসিন্ডা আরডার্ন ও ক্লার্ক গেফোর্ডের প্রথম দেখা হয়েছিল।