একজন আতাউর রহমান প্রধান ও সোনালী ব্যাংক লিমিটেড

প্রকাশিত: ৬:৫৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২

“আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি ….”
একজন আতাউর রহমান প্রধান ও সোনালী ব্যাংক লিমিটেড

মো. আবুল কালাম আজাদ :

শুনো শুনো দেশবাসী শুনো দিয়া মন, সোনালীর এমডি’র কথা করিব বর্ণন। এই গল্পের শিরোনামটাই এমনতর হতে পারতো। কিন্তু তা না করে পাঠককে সরাসরি পুরো লিখার ভিতর প্রবেশ করিয়ে দেয়ার মানসে এমনতর শিরোনাম না করে বরং লিখার শুরুতেই পালাগান, জারিগান অথবা কিচ্চার বন্ধনাগীতের ঢঙটা রেখেছি।

পৃথিবীর সকল সফল এবং বিফল ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে মানুষ! নব নব সভ্যতার গোঁড়া পত্তন করেছে সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ জাত এই মানুষ! পবিত্র কালামে পাকে সৃষ্টিকুলের অধিকর্তা কর্তৃক বিবৃত বাণীর বাঙলা তর্জমায় অর্থ দাঁড়ায় “আল্লাহ ততক্ষণ কোন জাতির ভাগ্যের পরিবর্তন করেনা যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে সচেষ্ট হয়।” হিন্দু ধর্মের শাস্ত্র পরিচয় ঋগ্বেদে (৬/৭৫/৯) বলা আছে “— সত্য-ন্যায় আর সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে ভুমিকা রাখার শক্তি-সাহস অর্জন কর।”

হ্যাঁ পাঠক, আমি বয়ান করছিলাম এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংক লিমিটেডকে ইতিবাচক আর যুগান্তকারী পরিবর্তন করিয়ে দেয়া কিংবদন্তী একজন আতাউর রহমান প্রধান’র বন্ধনাগীত। আর কিতাবে যেসব কাহিনী সংলাপ বিবৃত রয়েছে, বিবৃত রয়েছে যেসকল মহানায়কের ইতিহাস আর সভ্যতা পরিবর্তনের কিচ্চা আতাউর রহমান প্রধান তাদের একজন। হয়তোবা জীবদ্দশায় রচিত হবেনা তার কীর্তি কাহিনীর পালাগান, কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম কিচ্চা আর পালাগানে রোদন করবে আলোকচ্ছটা আতাউর রহমান প্রধান’র কীর্তি।

 

প্রসঙ্গেক্রমে মহাত্না গান্ধীর উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, “নেতৃত্ব মানেই হচ্ছে অন্যদের জীবনকে সুন্দর করবার সুবর্ণ সুযোগ, এটা নিজের লালসা পূরণ করার সুযোগ নয়।” আর আতাউর রহমান প্রধান মহাত্না গান্ধীর বিবৃত সেই নায়ক যিনি কেবল নিজের স্বার্থ বিবেচনায় না নিয়ে ইতিবাচক আর ঈর্ষনীয় পরিবর্তনের নেশায় পাগল প্রায়।

 

আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি …..। আমি একজন আতাউর রহমান প্রধান’র কথা বলছি ….। …. যিনি দায়িত্বে অবিচল থেকে শতভাগ নিষ্ঠা আর কর্মচাঞ্চল্যে পরিপূর্ণ ম্যানেজিং ডিরেক্টর আমি তার কথা বলছি। যিনি ২০ আগস্ট ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন পেয়ে ২৮ আগস্ট সিইও এন্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে যোগদান করেছিলেন। যার অভূতপূর্ব, সুশৃঙ্খল আর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড আড়াই বছরে ব্যাংকিং জগতে শীর্ষ স্থান নিশ্চিত করেছে এবং সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। জীবন্ত কিংবদন্তী আতাউর রহমান প্রধান স্বপ্ন দেখেন এবং স্বপ্নপুরণে নিজেকে নিবেদন করে চলেন প্রতিদিন-প্রতিক্ষণ।

কিংবদন্তী আতাউর রহমান প্রধান সময়ের চাহিদার নিরিখে ‘সময়ের প্রয়োজনে’ সময় এবং পরিপার্শ্ব বিবেচনায় ব্যাংকিং কার্যক্রমে ডিজিটালাইজেশন নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে ৮০ ভাগ সফল হয়েছেন। যদিও ৫ বছরের সময়কাল নিয়ে শতভাগ আধুনিকায়ন করার কথা ছিল অথচ ২ বছরে তার সিংহভাগ অর্জন করেছেন। বৈদেশিক রেমিট্যান্স হাতে পৌঁছতে আগে যেখানে ৭২ ঘণ্টা লাগতো এখন ব্রেইজ প্লাটফর্মের মাধ্যমে মাত্র ৫ সেকেন্ডে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে দেশের স্বজনেরা তা পেতে পারছে। সোনালী ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে এখন গড়ে প্রতিদিন ৬ হাজার ট্রানজেকশন সম্পাদন হচ্ছে।

 

বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী এবং সোনালী ব্যাংকের ৫০ বছর পূর্তিতে সোনালী ব্যাংক এবং তার অভিভাবক আতাউর রহমান প্রধান লক্ষ্যে অবিচল, দায়িত্ব-কর্তব্যে শতভাগ নিষ্ঠার অংশ হিসেবে ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণের অংক সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনবার লক্ষ্যে অবিরাম কাজ করছে।

 

বাংলদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে সোনালী ব্যাংক প্রথমবারের মত ন্যায়পাল নিয়োগ করে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করেছে এবং একইসঙ্গে গভর্ণেন্সের বিভিন্ন সূচকে অভূতপূর্ব সফলতা দেখিয়েছে।

সোনালী ব্যাংক ২০২১ সাল শেষে রেকর্ড ২ হাজার ২ শত ৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে। ২০২০ সাল শেষে ব্যাংকের মুনাফা ছিল ২ হাজার ১ শত ৫৩ কোটি টাকা। বিদায়ী বছর শেষে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ কমেছে প্রায় ১ হাজার ২ শত ৭৭ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ নেমে এসেছে ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশে, যা ২০২০ শেষে ১৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ ছিল। অর্থাৎ গত এক বছরে শ্রেণিকৃত ঋণ কমেছে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। বর্তমানে ব্যাংকে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ৯ হাজার ৮ শত কোটি টাকা, যা ২০২০ সাল শেষে ছিল ১০ হাজার ৭ শত ৬৭ কোটি টাকা।

একজন আতাউর রহমান প্রধান খন্ডকালীন/দৈনিক/অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, পিআরএল গমনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসিয়াল বিদায় অনুষ্ঠান আয়োজন, বিদায় অনুষ্ঠানেই ব্যাংক কর্তৃক ফুলেল শুভেচ্ছা, বিদায়ী ক্রেস্ট এবং ১৮ মাসের ছুটি নগদায়নের অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন। সুপার নিউমেরারি পদ সৃষ্টি করে আটকে পড়া জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগণকে প্রমোশন প্রদান করে তাদের মধ্যে কাজের অনুপ্রেরণা অনেকখানি বাড়িয়ে ব্যাংকের গতি বৃদ্ধি করেছেন। কর্মচারী গৃহনির্মাণ ঋণের সিলিং গ্রেড ভিত্তিক বৃদ্ধি করেছেন। অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের গৃহনির্মাণ ঋণের আরোপিত অনারোপিত সকল সুদ মওকুফ করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। অসুস্থ অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি সব সময় মাঠের যোদ্ধাদের গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এই লক্ষ্যে ১ হাজার ২ শত ২৮ টি শাখার ম্যানেজার ও অঞ্চল প্রধানদের নিয়ে সোনালী ব্যাংকের ইতিহাসে প্রথমবারের মত দক্ষ ব্যবস্থাপনায় বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করেন।

 

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে কৃষকদের মাঝে ৫০ কোটি টাকা সুদবিহীন ঋণ বিতরণ করেন। করোনাকালীন বিভিন্ন খাতে সাফল্যের সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ বিতরণ করেন। সোনালী ব্যাংকের কর্পোরেট সোশাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) এর আওতায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দুঃস্থ অসহায় মানুষের মাঝে অর্থ ও খাদ্য সামগ্রী প্রদান করেন। করোনার মধ্যে ২০০৮ এর পর যোগদানকারী কর্মকর্তাদের সিপিএফ থেকে জিপিএফ এর অন্তর্ভুক্ত করা তার একটি যুগান্তকারী অর্জন। করোনাকালীন কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুইটি প্রণোদনা প্রদান করে সকলের মধ্যে উৎসাহ জুগিয়েছেন। করোনার মধ্যে একইদিন বার্ষিক সাধারণ সভা, পরিচালনা পর্ষদে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং অনুমোদন ও পরিপত্র জারী করে প্রথম বছর তিনটি বার্ষিক ইনসেনটিভ বোনাস এবং দ্বিতীয় বছর ৪ টি বার্ষিক ইনসেনটিভ বোনাস প্রদান করেছেন ।

 

করোনাকালীন সংক্রমণ রোধ এবং গ্রাহক সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে Sonali E Sheba এ্যাপ প্রবর্তনের মাধ্যমে ব্যাংকে না এসে দুই মিনিটে হিসাব খোলা এবং এই পদ্ধতি ব্যবহার করে দ্রুত বিভিন্ন ফী জমা করার ব্যবস্থা করেছেন যা অন্যান্য ব্যাংক পারেনি। ঘরে বসেই ব্যাংকিং করার জন্য Sonali E Wallet প্রবর্তন একটি অভাবনীয় পদক্ষেপ। পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে ফরেন রেমিট্যান্স এ্যাপ BLAZE প্রবর্তন করে একটি ঐতিহাসিক কার্য সম্পাদন করেছেন। পায়রা বন্দরে এবং রূপপুর পারমানবিক প্রকল্পে সোনালীর অর্থায়নে বৃহৎ প্রকল্প আশা জাগিয়েছে। দেশের সকল সম্মানিত বীর মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ভাতা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদানের দায়িত্ব আমাদেরকে উচাসনে আসীন করেছে। করোনাকালীন সংক্রমণ রোধের জন্য ব্যাংকে গ্রাহকের চাপ কমানোর জন্য প্রতিটি শাখায় একটি করে এটিএম বুথ চালু করার নির্দেশনা প্রদান করা একটি সাহসী পদক্ষেপ।

 

সারাদেশের জনসাধারণকে ব্যাংকিং চ্যানেলে নিয়ে আসার জন্য এজেন্ট ব্যাংকিং প্রবর্তন নিঃসন্দেহে মাইলফলক, যা শীঘ্রই চালুর অপেক্ষায়। সকল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় ব্যাংকিং লেনদেন সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পাদনের জন্য চুক্তি সম্পাদন প্রক্রিয়া তা ক্যারিশমাটিক লিডারশীপের পরিচয় বহন করে। করোনাকালীন ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ইউনিভার্সাল হাসপাতালের সাথে কর্পোরেট চুক্তি সম্পাদন ও করোনা আক্রান্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের সরাসরি খোঁজ খবর নেয়া এবং তাদের মনোবল অটুট রাখার জন্য পরামর্শ প্রদান অন্যতম মানবিক গুণের পরিচয়। করোনাকালীন ক্যাশ পর্যায়ের অফিসারদের সুরক্ষার জন্য পিপিই ও মাস্ক প্রদান এবং চিকিৎসক ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান।

 

একজন আতাউর রহমান প্রধান তার সুদক্ষ নেতৃত্ব ও চৌকস পরিচালনার বদৌলতে পর পর দুইবার শীর্ষস্থান অর্জন। সোনালী ব্যাংকের জন্য বহুল কাক্সিক্ষত অর্গানোগ্রাম নিশ্চিত করা তার সুদক্ষ নেতৃত্বের উজ্জ্বল উদাহরণ। যার সুফল সোনালী ব্যাংকের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ উপভোগ করছে। সোনালীর শীর্ষস্থান আনয়নে আজকের যিনি সফল নেতৃত্বের আসনে সমাসীন সেই কিংবদন্তী আতাউর রহমান প্রধানকে International Business Magazine “The In CAP” তাদের ডিসেম্বর-২০২১ সংখ্যায় “Professional Icon” হিসেবে উপস্থাপন করেছে এবং তাকে নিয়ে কভার স্টোরি করেছে। তার সুদক্ষ পরিচালনায় সোনালী ব্যাংক আজ আধুনিকতায় পরিপূর্ণ তথা শতভাগ ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় আপামর জনসাধারণকে সেবা দিচ্ছে। তিনি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়ে তার মেধা নিবেদন করছেন এবং সততা, দক্ষতা ও ইতিবাচক গুণাবলীর বলে তিনি তিনটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী হয়ে কাজ করেছেন এবং করছেন। আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি …., আমি একজন আতাউর রহমান প্রধান’র কথা বলছি, আমি তার কথা বলতে এসেছি যিনি পরিবেশ বান্ধব পেপারলেস ব্যাংকিং প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়ে লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন। আমি তার কথা বলতে এসেছি … যিনি বাংলাদেশের তথা লাল-সবুজ মানচিত্রের সুবর্ণ জয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে দেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সোনালী পরিবারের ১৮ হাজার কর্মীবাহিনী নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিদিন-প্রতিক্ষণ-ক্ষণ-ক্ষণ। আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি … আমি একজন আতাউর রহমান প্রধান’র কথা বলছি … !

মো. আবুল কালাম আজাদ
প্রিন্সিপাল অফিসার
(পিএ টু জেনারেল ম্যানেজার)
জেনারেল ম্যানেজার’স অফিস, ময়মনসিংহ।
@ বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক বিতার্কিক।