গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি ঃ
ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনায় বিচারপ্রার্থীদের সহযোগিতা আর আসামীদের গ্রেফতারে সময়োপযোগী দৃষ্টান্তস্থাপন করেছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ বোরহান উদ্দিন।
স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা, গার্মেন্টকর্মী, গৃহবধূ, যুবতীকে ধর্ষণের পৃথক ৫টি ঘটনায় ৫জনকেই গ্রেফতার করেন। এছাড়াও ঘটক সেজে সাজাপ্রাপ্ত আসামী ধরে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তিনি।
সোমবার (১২ অক্টোবর/২০২০) গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে এক যুবককে বিজ্ঞ আদালতে পাঠান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ধর্ষকের ঠিকানা একমাত্র জেলখানা।
এ ধরণের ঘটনায় বিচারপ্রার্থীদের জন্য পৃথক নারী ও শিশু ডেস্ক করা হয়েছে। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা। অপরাধীদের বিচার দ্রুত নিশ্চিত করতে প্রতিবেদনও দ্রুত দেয়া হচ্ছে।
এদিকে সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের ধরতে শনিবার রাতে তিনি ঘটক সেজে অভিযানে বের হন। সিআর ও জিআর মামলার সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামীকেই একরাতে গ্রেফতার করে রোববার বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন।
তিনি আরো জানান, ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ মামলা হলে আসামীর ঠিকানা শুধু জেলখানা। পালানোর পথ নেই।
সোমাবার গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে পৌর শহরের বাড়িওয়ালাপাড়ার জিতেন্দ্র দেবনাথের পুত্র মিথুন দেবনাথ (৩৪), রোববার এক হিন্দু বধূকে ধর্ষণ চেষ্টার কাউরাট গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের পুত্র মোঃ সিরাজুল হক (৪০), সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশার এক যুবতী (২৩) কে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের গড়পাড়া গ্রামের মোঃ সেলিম মিয়ার পুত্র মোঃ এরশাদ মিয়া (২৬) কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এছাড়াও বিয়ের প্রলোভনে গার্মেন্ট কর্মী (২২) কে ধর্ষণের অভিযোগে উপজেলার অচিন্তপুর ইউনিয়নের গাগলা গ্রামের মৃত সাহাব উদ্দিনের পুত্র মোঃ রাকিবুল হাসান শান্ত (২৪), মইলাকান্দা ইউনিয়নে চর মইলাকান্দা গ্রামের ৮ম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে চরমইলাকান্দা গ্রামের মোঃ হেকিম মিয়ার পুত্র মোঃ নিজাম উদ্দিন (৩৪) কে শনিবার গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে।
এদিকে গত শনিবার ঘটক সেজে সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামীকেও গ্রেফতার করেন অফিসার ইনচার্জ মোঃ বোরহান উদ্দিন।
সময়োপযোগী পদক্ষেপ, আইনি সহযোগিতা নিতে আসা মানুষের কাজ করার এমন দৃষ্টান্তের কারণেই ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণা জেলায় ১২বারের শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত হন মোঃ বোরহান উদ্দিন।
এরমধ্যে ময়মনসিংহ জেলা শ্রেষ্ঠ অফিসার একবার, সেরা অফিসার একবার ও নেত্রকোণা জেলার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ হিসাবে ১০বার শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত হন।
তার উল্লেখ্যযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সমাবেশ, অস্ত্র উদ্ধার, আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি, দতা ও সাহসিকতা, মাদক নিয়ন্ত্রণ অগ্রণী ভূমিকা পালন, সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলের জন্য সচেতনতা সভা, ওয়ারেন্ট তামিল, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করণ, দ্রুত চোরাই মালামাল উদ্ধার-আসামী গ্রেফতার।
এছাড়াও কলোনাকালীন দুর্যোগে মানুষকে সচেতন করা, ত্রাণ সামগ্রী ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও মাঠপর্যায়ে সক্রিয় ছিলেন এ কর্মকর্তা।
তিনি ২০০০সালের ব্যাচে পুলিশে যোগদান, নেত্রকোণা সদরে পিএসআই, এসআই, ২০১২সালে অফিসার ইনচার্জ হিসাবে সিআইডিতে, এর টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) হিসাবে কাজ করেন। ২০১৫সালে অফিসার ইনচার্জ হিসাবে ঈশ্বরগঞ্জে প্রথম যোগদান করেন।
এরপর নেত্রকোণায় ছিলেন দীর্ঘদিন। এসময়ে কর্মদক্ষতার জন্য ১০বার জেলা ও রেঞ্জে শ্রেষ্ঠ অফিসার নির্বাচিত হন।
তিনি জানান, শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাসে গৌরীপুর থানায় জাতীয় জরুরী ৯৯৯’র কলসেবা দেন ৪০টি, ১২টি জুয়া মামলায় ৭৬জনকে গ্রেফতার, ৩০টি নিয়মিত অভিযান, ৩২টি মাদক মামলায় ৩৭জনকে গ্রেফতার, নারী ও শিশু নির্যাতনের ১৪টি মামলায় ১৪জন আসামী গ্রেফতার, একটি অস্ত্র উদ্ধার ও আসামী গ্রেফতার, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ১৫টি বিশেষ সভা, নিয়মিত মামলায় ৪৭জনকে গ্রেফতার, জামাত-শিবিরের সাবেক আমীরসহ ৩জন গ্রেফতার, সাজাপ্রাপ্ত ৬জন ও গ্রেফতারী পরোয়ানাভূক্ত ৮০জনকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন।
একমাসে ২১৪টি ওয়ারেন্ট নিষ্পত্তির ঘটনা এ থানার জন্য বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
তিনি নরসিংদী জেলার মাধবদী থানার মৃত রজব আলী ও আমিরুন বেগমের পুত্র। দাম্পত্য জীবনের দুই সন্তানের জনক। মেয়ে তায়িবা সুলতানা ময়মনসিংহ মুকুল নিকেতনে ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। ছেলে মোবাসির বোরহান ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।