গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা : ময়মনসিংহ জেলার ও গফরগাঁও উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উচ্চ আদালত আদেশ দিয়েছিল অবৈধ ইটভাটাটি বন্ধ করতে। হাইকোর্টের আদেশ কার্যকর না হওয়ায় ইটভাটায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকসহ চার কর্মকর্তার নামে আদালত অবমাননার একাধিক নোটিশ পাঠানো হয়, হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা ফাইলিং (রুজু) করা হয়। এত কিছুর পরও উপজেলার নিগুয়ারি ইউনিয়নের চামুর্থা গ্রামে স্থানীয় (৭ নং ওয়ার্ড) ইউপি সদস্য, প্রভাবশালী হাবিবুল্লাহ মেম্বার ও তার সহযোগিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে, লোকালয়ে, তিন ফসলি জমিতে স্থাপিত অবৈধ ইটভাটাটি চলতি মৌসুমে ভিন্ন নামে চালু করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে, অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে নাম পরিবর্তন করে অবৈধ ইটভাটাটি চালু থাকায় হতাশ স্থানীয় কৃষক ও গ্রামবাসি।
মোঃ হাবিবুল্লাহ, আসাদুল্লাহ, নুরুল্লাহ, শহিদুল্লাহ, মোঃ মিজান ও মোঃ জামান নামে ছয় ব্যক্তি যৌথ মালিকানায় ২০১৮ সালে গ্রামের শামছুল হক ফাজিল মাদ্রাসার পাশে, লোকালয়ে, তিন ফসলি জমিতে এমবিবি নামক অবৈধ, অনুমোদনহীন একটি ইটভাটা স্থাপন করে। এলাকাবাসী জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বিহীন এই অবৈধ ইটভাটাটি বন্ধের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন ও গফরগাঁও উপজেলা প্রশাসনে বার বার ধর্না দেয়। উপায়ন্তর না পেয়ে অবৈধ, অনুমোদনহীন, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ এবং কৃষির জন্য ক্ষতিকর এই অবৈধ ইটভাটাটি বন্ধ করতে এলাকাবাসীর পক্ষে এই এলাকার আব্দুল্লাহ হাছান নামে এক ভুক্তভোগী গত বছরের ১৬ নভেম্বর সুপ্রীম কোর্টেও হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট পিটিশন দাখিল করে (রিট পিটিশন নং (১০৪৬১/২০২১)। বিচারপতি এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ ১৫ কার্যদিবেেসর মধ্যে ইটভাটাটি বন্ধ করতে আদেশ দেয়। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর একবার আবার পুনরায় চালু করা হলে গত ১৬ জানুয়ারি তারিখে উপজেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ইটভাটাটি বন্ধ করে দেয়।
স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, গত মৌসুমে ইটভাটাটি দুইবার বন্ধ করে দেওয়া হলেও কখনোই তা বন্ধ হয়নি। ভ্রাম্যমান আদালত চলে যাওয়ার পরপরই ইটভাটাটি আবার চালু করা হয়। ইটভাটার মালিকপক্ষ ইটভাটাটি পুনরায় চালু করে এলাকাবাসীকে হুমকি দিয়ে দম্ভোক্তি করে বলে কোথায় তোমাদের আদালত। আদালতের আদেশ কার্যকর না করায় রিট পিটিশনকারি আব্দুল্লাহ হাছান গত ২২ জানুয়ারি ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক, পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ জেলার উপপরিচালক মিহির লাল সরদার, গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী মোঃ তাজুল ইসলাম, গফরগাঁওয়ের সহকারি কমিশনার (ভূমি) কাবেরী রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা ফাইলিং (রুজু) করে (নং-৪৩/২০২২)। রিট পিটিশনকারি উচ্চ আদালতের আদেশ কার্যকর করে এই অবৈধ ইটভাটাটি বন্ধ করতে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মিহির লাল সরদার ও গফরগাঁও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তিনটি উকিল নোটিশও পাঠিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এই মৌসুমে ইটভাটাটি চালু রাখা হয়েছে। এই ইটভাটার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে বিবিবি। গ্রামবাসির সাথে কথা বলে জানা যায় এই ইটভাটা স্থাপিত হওয়ার পর থেকে তাদের গাছগুলো থেকে ঝড়ে যাচ্ছে আম, লিচু, পেয়ারা ও ডাবের গুটি। নষ্ট হচ্ছে শাকসবজি ও ফসলের জমি। মাঝে মধ্যেই মারা যাচ্ছে কবুতরসহ গৃহপালিত হাসঁ-মুরগি। শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন গ্রামের বৃদ্ধ ও শিশু এবং ইটভাটার পার্শ্ববর্তী শামছুল হক ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। ইটভাটার পাশে শীলা নদীতে মাছের আধার কমে গেছে।
ভুক্তভোগী আমানুল্লাহ (৩৫) বলেন, এই অবৈধ ইটভাটা পুরোপুরি বন্ধ করা না হলে এক সময় আমাদের কৃষি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। সর্বোচ্চ আদালতের রায় যদি মানুষ না মানে, আমরা যদি বিচার নাই, তবে কোথায় যাবো আমরা ?
রিট পিটিশনকারি আব্দুল্লাহ হাছান বলেন, প্রশাসন লোক দেখানো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। মোবাইল কোর্ট চলে যাওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আবার ইটভাটাটি চালু করা হয়। উচ্চ আদালতের আদেশ বিন্দুমাত্র কার্যকর করে নাই। তাই আমি সংশ্লিষ্টদের নামে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেছি।
রিট পিটিশনকারি পক্ষের সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি এডভোকেট মোঃ হারুনুর রশিদ বলেন, হাইকোেের্টর আদেশ বাস্তবায়ন করতে পরিবেশ অধিদপ্তর ও ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। উকিল নোটিশের অসত্য, নয়ছয় জবাব দিয়েছে।
ইটভাটার মালিক মোঃ হাবিবুল্লাহ বলেন, ইটভাটা কিভাবে চলছে এটা পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানেন। আপনারা ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তর অফিসে গিয়ে খোঁজ নেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মিহির লাল সরদার বলেন, ইটভাটাটি বন্ধ করে অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, অনতিবিলম্বে ইটভাটাটি বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।