আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অনলাইনে পরিচয়ের পর প্রেমের টানে প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পেরুতে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মেক্সিকোর ৫১ বছর বয়সী এক নারী। প্রেমিকের সঙ্গে তার সাক্ষাতের পরিণতি নির্মম হত্যাকাণ্ডে রূপ নেয় যখন তার কেটে ফেলা মরদেহ একটি সমুদ্র সৈকতে ভেসে ওঠে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মেক্সিকোর ব্লাঙ্কা আরেলানো নামের নারী জুলাই মাসের শেষ দিকে তার পরিবারকে জানিয়েছিলেন তিনি পেরুর রাজধানী লিমা যেতে চান। তার এই ভ্রমণের উদ্দেশ্য হলো কয়েক মাস ধরে অনলাইনে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া জুয়ান পাবলো জেসাস ভিলাফুয়ের্তের সঙ্গে সরাসরি দেখা করা।
আরেলানোর পরিবার জানিয়েছে, হুয়াচো শহরের সমুদ্র সৈকতে পেরুভিয়ান প্রেমিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। এই শহরেই প্রেমি ভিলাফুয়ের্তের বসবাস। ৭ নভেম্বর পর্যন্ত পরিবার মনে করেছিলেন প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্ক ভালোই চলছে। ওই দিনের পর থেকে আরেলানোর সঙ্গে আর তাদের যোগাযোগ হয়নি।
অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ কর্প অস্ট্রেলিয়ার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, আরেলানোর পরিবারের সদস্য কার্লা জানিয়েছেন ৭ নভেম্বর তাদের শেষ কথা হয়েছে। ওই সময় আরেলানো বলেছিলেন তাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে। এরপর কোনও যোগাযোগ হয়নি। তখন তিনি টুইটারে আরেলানোকে খুঁজে পেতে সহযোগিতা চান। এর ফলে স্থানীয় পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে।
টুইটারে তিনি লিখেছিলেন, আমার খালা ব্লাঙ্কা আরেলানো ৭ নভেম্বর পেরুতে নিখোঁজ হয়েছেন। তার জীবন সংকটে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরেলানোর পেরুভিয়ান প্রেমিক ভিলাফুয়ের্তের সঙ্গে তিনি যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু পাবলো জানায় আরেলানোর অবস্থান সম্পর্কে তার জানা নেই। কার্লার সোশাল মিডিয়া পোস্ট নেটিজেনদের মনোযোগ কাড়লে পেরু কর্তৃপক্ষ আরেলানোর খোঁজ শুরু করে।
১০ নভেম্বর আরেলানোর পরিবারের সবচেয়ে খারাপ আশঙ্কা সত্যি হয়। ওই দিন রূপোর একটি আংটি থাকা বিচ্ছিন্ন একটি আঙুল উদ্ধার করা হয়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আংটি দেখে আরেলানোর পরিবার তাকে শনাক্ত করেছেন। এই ঘটনার পরের দিনগুলোতে হুয়াচো সৈকতে আরও কিছু বিচ্ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ উদ্ধার হয়। প্রথমে একটি মুখমণ্ডলহীন একটি মাথা, পরে একটি হাত এবং ভেতর থেকে পরিকল্পিতভাবে অঙ্গ সরিয়ে ফেলা একটি ধড় উদ্ধার করা হয়।
আরেলানো হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে ভিলাফুয়ের্তের বিরুদ্ধে ১৭ নভেম্বর একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
লাটিন নোটিসিয়াস এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, হুয়ান পাবলো ভিলাফুয়ের্তেকে মানব অঙ্গ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন পেরুর অ্যাটর্নি জেনারেল।
এল পপুলার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আরেলানো নিখোঁজ হওয়ার পর ৩৭ বছর বয়সী মেডিক্যাল শিক্ষার্থী ভিলাফুয়ের্তেকে গ্রেফতারের পর আরও নৃশংসতা সামনে আসে। তার টিকটক অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত ভিডিওতে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করতে দেখা গেছে।
এল পাইস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজনের বাড়িতে তল্লাশীর সময় তদন্তকারীরা পুরো বাসাজুড়ে বিভিন্ন স্থানে রক্তের দাগ পেয়েছেন।