স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ। ময়মনসিংহে ইটভাটার সংখ্যা ২৫৫টি। এর মধ্যে অবৈধ ২১২টি। আইন অমান্য করে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এসব ইটভাটা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য । উর্বর মাটি ইট ভাটাগুলোতে ব্যবহার হওয়ায় কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও বন্ধ হচ্ছে না এসব অবৈধ ভাটার কার্যক্রম। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার ২৫৫টি ইটভাটার মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাঙপত্র রয়ে ছে মাত্র ৪৩টির ।
ময়মনসিংহে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাঙা চলছে ২১২ ভাটা বাকি ২১২টি চলছে অবৈধভাবে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ সদরে অনুমোদন আছে তিনটির, অনুমোদন নেই ৩৩টি ভাটার। ত্রিশালে অনুমোদন আছে ১৩টির, অনুমোদন নেই ৩৮টির। ভালুকায় অনুমোদন আছে সাতটির, অনুমোদন নেই ২০টির। গফরগাঁও উপজেলায় অনুমোদন আছে একটির, অনুমোদন নেই ১৭টির।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় ‘অবৈধ ইটভাট ১৫টি। মুক্তাগাছায় অনুমোদন আছে তিনটির, অনুমোদননেই ১৯টির। হালুয়াঘাটে অনুমোদন আছে আটটির অনুমোদন নেই ।
ধোবাউঙায় অবৈধ ভাটা তিনটি। ফুলপুরে অনুমোদন আছে চারটির, অনুমোদন নেই ১৬টির।তারাকান্দায় অনুমোদন আছে একটির অনুমোদন নেই ছয়টির। গৌরীপুরে অবৈধ ইটভাটা ১২টি। ঈশ্বরগঞ্জে অবৈধ ইটভাটা পাঁচটি। নান্দাইলে বৈধ ভাটা তিনটি, অবৈধ ১৮টি।
পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া পরিসংখ্যানের চেয়ে ও বাস্তবে অবৈধ ইটভাটা বেশি বলে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে। ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুযায়ী, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি, – প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা নিষিদ্ধ ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইটভাটাগুলো স্থাপন ও পরিচালনায় কোনো ধরনের বিধিমালা মানা হয় না। যত্রতত্র স্থাপন করা ভাটায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি। কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে পুকুর, ডোবা হয়ে যাচ্ছে । এতে হুমকির মুখে ফসলি জমি কোনো ধরনের জ্বালানি কাঠ ব্যবহার না করার শর্ত থাকলেও দেদার পুঙছে বনের কাঠ । নিয়ম না মেনে গড়ে ওঠা ইটভাটার বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে ।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪৪টি ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। একই বছরের ১ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর গৌরীপুর, ফুলবাডড়য়া, গফরগাঁও, মুক্তাগাছা ও ত্রিশাল উপজেলার ১৭টি ইটভাটায় অভিযান চালানো হয় । এতে জরিমানা করা হয় ৪২ লাখ টাকা এবং বেশ কয়ে কটি ভাটা গুঁডড়য়ে দেওয়া হয়।
ফুলবাডড়য়া উপজেলায় গত বছরের ১০ নভেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চারটি ইটভাটায় । ৫ লাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি গুঁডড়য়ে দেওয়া হয় ভাটাগুলো। দেওখোলার জাঙ্গালিয় এলাকায় মেসার্স সেলিম ব্রিকসটি পরিচালিত হচ্ছে অন্তত ১৫ বছর ধরে। এর মালিক মো. বদিউজ্জামান বলেন, শুরুর দিকে ছাঙপত্র থাকলেও পরে পরিবেশ অধিদপ্তর তা বাতিল করে। চাহিদামতো কাগজপত্র দিয়ে ও ছাঙপত্র মিলছে না’।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয়, পরিবেশ রক্ষা ও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শিব্বির আহমেদ লিটনের সঙ্গে তিনি বলেন, ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে পরিবেশ দূষণে শিশুও ক্ষতিগস্ত হয়। বৃক্ষ ও ফসলের ক্ষতি করে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিহির লাল সরদারের ভাষ্য, ইটভাটাগুলো নীতিমালার আলোকে স্থাপন না হওয়ায় আবেদন করলেও ছাঙপত্র দেওয়া যায় না। জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান জানান, আইন অনুযায়ী যেন ইটভাটাগুলো চলে মন্ত্রণালয়ে র এমন নির্দেশনা রয়ে ছে । লাইসেন্স না থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।