শাহ্ আলম ভূঁইয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক, নান্দাইল থেকে:
শীতকালীন ফসল হিসেবে ভোক্তাদের কাছে মুলার প্রচুর চাহিদা থাকায় মুলা চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। বেশি দাম পাওয়ায় কৃষক লাভবান হচ্ছেন। শ্রম ও খরচ কম, লাভ বেশি তাই ময়মনসিংহের নান্দাইলে কৃষক মুলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
শীতকালীন সবজি মুলা। সবজি আর সালাদ হিসেবে মুলা সবার কাছে অত্যন্ত প্রিয়। তাই এ ফসলটির ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষক ঝুঁকছেন মুলা চাষাবাদের দিকে। এতে বাড়ছে মুলা চাষের আবাদ।
চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উপজেলার চরাঞ্চলসহ অন্যান্য এলাকায় মুলার বাম্পার ফলন হয়েছে।বিশেষ করে উপজেলার চরবেতাগৈর ইউনিয়নে মুলার ব্যাপক আবাদ ও বাম্পার ফলন হয়েছে।
মুলা চাষ করে অনেক কৃষক স্বাবলম্বী হয়েছে। লাভ হয়েছে দ্বিগুণ। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরেও মুলার ব্যাপক ফলনে কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির হাসি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষক খেত থেকে মুলা তুলতে এবং বাজারে বিক্রি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।অনেকে খেত থেকে মুলা উঠিয়ে তা ধুয়ে আঁটি বাঁধছেন বাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের হাটশিরার চরাঞ্চল,চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চরকামট খালী, চরকোমরভাঙা, চরশ্রীরামপুর, লক্ষিরচর, চরলক্ষিদিয়া, চরভেলামারী মুলা চাষের জন্য বিখ্যাত।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় ৬৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মুলা চাষ হয়েছে। বাজারে দাম ভালো আর চাহিদা থাকায় অল্প পরিশ্রমের এ ফসলটি চাষ করে কৃষক স্বাবলম্বী হচ্ছেন। সবাই অপ্রত্যাশিত আয় করে সংসারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি কিছু করছেন প্রতিবছরই। সঞ্চয় করছেন টাকা-পয়সা।
বাজারে মুলার চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় বড় প্রতি হালি মুলা ৪০ টাকা,মাঝারি ৩০ টাকা এবং ছোট মুলা ২০ টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুলা তোলার আগে অনেক কৃষক শাক বিক্রি করেও ব্যাপক লাভবান হন। এছাড়া মুলার গাছ গবাদিপশুর খাবার হিসেবেও বেশ চাহিদা রয়েছে।
এবার মুলা চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণও অনেক কম ছিল। মূলার আকারও বড় হয়েছে। দেখতেও সুন্দর লাগছে। যার কারণে পাইকাররা মুলা দেখেই বায়না করে যাচ্ছে। বাজারেও ব্যাপক চাহিদা।
স্থানীয় বাজারগুলো সাদা সাদা মুলা’র সারিতে ভরে যায়। স্থানীয় পাইকাররা বাজারে ভীড় জমায় মুলা কিনার জন্য।পাশাপাশি কৃষকের খেত থেকেও মুলা কিনে নিয়ে আসেন পাইকাররা।
চৈতনখালী গ্রামের কৃষক রনি মিয়া জানান,৩ কাঠা জমিতে তিনি চায়না জাতের মুলা চাষ করেছেন। ৩০ শতক জায়গায় মুলা চাষে তার খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত তিনি ২৫ হাজার টাকার মুলা বিক্রি করেছেন।
চরকামট খালী গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন জানান,এ বছর তিনি ১৫ শতক জমিতে বোম্বাই জাতের মূলা চাষ করেছেন।এ পর্যন্ত বিক্রি হয়ছে ১৫ হাজার টাকা। আরো ১০ হাজার টাকার মুলা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন।
চরকামট খালী,চরভেলামারী, চরশ্রীরামপুর, চরউত্তরবন্দ, চরকোমরভাঙা এবং হাটশিরা গ্রামের কৃষক হায়দার আলী শিকদার,ফজলুল করিম, মোফাচ্ছেল, হুমায়ুন,আবুল কালাম, আমজাদসহ একাধিক কৃষক জানান, এবার মুলা চাষে খরচের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ লাভ হয়েছে। আগামীতে তারা আরো বেশি করে মুলা চাষ করবেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন,চলতি মৌসুমে নান্দাইলে শীতকালীন সবজি মুলা চাষ করে কৃষক অনেক লাভবান হচ্ছেন।ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।ভালো ফলন পেয়ে কৃষক অনেক খুশি। মুলা উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে তাদের আরো বেশী সহযোগিতা দেওয়া হবে।