শাহ্ আলম ভূঁইয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক, নান্দাইল থেকে:
ময়মনসিংহের নান্দাইলে বোরো চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। বোরো চাষে আগামীর স্বপ্ন বুনছেন তারা।পরিবার- পরিজন নিয়ে একটু সুখে থাকবেন এটিই তাদের প্রত্যাশা।
সকালের কুয়াশামাখা শীত উপেক্ষা করে সন্ধ্যা অবধি বোরো চাষের জমি প্রস্তুত ও চারা রোপণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণী।
বর্তমানে বোরো চাষে জমির আইল কোদাল দিয়ে সমান করা, সেচের জন্য ড্রেন নির্মাণ,গভীর নলকূপ থেকে পানি সেচ, ট্রাক্টর,পাওয়ার টিলার দিয়ে হালচাষ, মই দিয়ে চলছে মাঠ সমান করার কাজ, সার প্রয়োগ, বীজ উঠানো ও প্রস্তুতকৃত জমিতে চারা রোপণ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে কৃষকরা।
আমন ধানের ভালো ফলন এবং ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের বোরো আবাদে এবার আগ্রহ বেড়েছে।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি এলাকায় ইরি-বোরো ধানের চারা রোপনের কাজ শুরু হয়েছে পুরোদমে। কৃষকদের যেন দম ফেলার সময় নেই।নাওয়া-খাওয়া নেই তাদের ঠিকমত।
কৃষকদের মধ্যে কেউ বীজতলা থেকে চারা তুলছেন, কেউ চারা রোপণ করছেন,আবার কেউ জমিতে হালচাষ করছেন। কৃষকরা জানান, সঠিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলে চলতি মৌসুমেও ইরি-বোরোতে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা।
নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলার১৩টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় ২২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি ধান২৮,ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান ৫৮,ব্রি ধান ৮৮,ব্রি ধান ৮৯, ব্রি ধান৯২,বঙ্গবন্ধু ধান- ১০০ এবং হাইব্রিড ছক্কা, হীরা, ঝলক ইত্যাদি জাতের ধান রোপন করা হয়েছে।
বোরো চাষাবাদের জন্য বীজতলা তৈরি করা হয়েছে ১ হাজার ২০১হেক্টর জমিতে।এরমধ্যে হাইব্রিড ১০০ হেক্টর,উফশী ১১০০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ১ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। আদর্শ বীজতলা তৈরি করা হয়েছে ১১২ হেক্টর জমিতে।
এ পর্যন্ত ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ অর্জিত হয়েছে। আর বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৯ হাজার ৯৬৪ মেট্রিক টন।
বোরো আবাদে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়ায় মজুরিও বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষককে ১ কাঠা (১০ শতক) জমি লাগাতে শ্রমিককে ৬০০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে।
বীরকামট খালী গ্রামের কৃষক মিলন, মুজিবুর রহমান, মতিউর,এবং হাবিবুর রহমান বলেন,“বর্তমানে বোরে ধান লাগাইতাছি। অহন আমরা খুব ব্যস্ত আছি।অনেক পরিশ্রম করতাছি।”
খড়িয়া গ্রামের কৃষক হারেছ, আলাল মিয়া, বলেন, শ্রমিকের মজুরি খরচও বেশি। কাজের লোকের অভাবে নিজেরাই ধান লাগাইতাছি। বোরো চাষে অনেক টাকা খরচ হইতাছে।
ধান লাগানোর শ্রমিক সেলিম,ইলিয়াস শিকদার, আকবর,মুনসুর,আলীমুদ্দিন,
মোসলেম বলেন, “বোরো ধান লাগাইতাছি।
অহন আমরার অবসর নাই।কিন্ত ৫শ ৬শ টেহা কাঠা বোরো লাগানোতে আমরার পোষেনা।সবকিছুর দাম বেশী। ”
এদিকে কৃষকরা যেনো সঠিকভাবে বোরো চাষ ও পরিচর্যা করতে পারে সেজন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, নান্দাইল কৃষি সমৃদ্ধ এলাকা।এবার ২২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি অফিসের সার্বিক তদারকির কারনে নান্দাইলে বোরোর বাম্পার ফলন হবে বলে আমরা আশা করি।