নান্দাইলে রঙিন ফুলকপি চাষে সফল বাদল বৰ্মণ

প্রকাশিত: ৮:৫১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩

শাহ্ আলম ভূঁইয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক, নান্দাইল থেকে

ময়মনসিংহের নান্দাইলে পৌরসভার চন্ডীপাশা এলাকার বাসিন্দা বাদল চন্দ্ৰ বৰ্মণ (৬৩) প্রথমবারের মত পরীক্ষামূলকভাবে রঙিন ফুলকপি চাষ করে চমক দেখিয়েছেন। রঙিন ফুলকপি চাষে খুশি স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

কপির বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পেয়ে খুশি তিনি। তার এমন সফলতা দেখে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরাও।প্রতিদিন উৎসুক মানুষ ছুটে আসছেন রঙিন কপি দেখতে।স্থানীয় হাট-বাজার রয়েছে এর অনেক চাহিদা।

হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপি চমকে দিয়েছে সবাইকে।রীতিমত তারকা বনে গেছেন কৃষক বাদল। আকারে বড় এবং দামেও বেশি এসব ফুলকপি থেকে যথেষ্ট লাভেরও প্রত্যাশা করছেন তিনি।

সরেজমিন বাদলের কপি বাগানে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক বাদল ক্ষেত থেকে বিক্রির জন্য কপি তুলছেন। রঙিন ফুলকপির সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন সকাল-বিকাল তার ক্ষেতে ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক মানুষ। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ফুলকপি কিনছেন, কেউ বা পরামর্শ নিচ্ছেন। আবার অনেকেই রঙিন ফুলকপির সঙ্গে ছবি তুলছেন ও ভিডিও করছেন।

বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবীড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ২০ শতক জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করেছেন কৃষক বাদল।

কৃষি অফিস বলছে, এই ফুলকপি চীনে খাওয়া হয় সালাদ হিসেবে। তবে সাদা ফুলকপির তুলনায় রঙিন জাতের ফুলকপির পুষ্টিগুণ বেশি। বাজারেও এর চাহিদা বেশি, দেখতেও সুন্দর। সাদা ফুলকপির মতোই কম খরচ ও কম পরিশ্রমে রঙিন কপি চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব।

সবজি হিসেবে নিরাপদ ও এলাকায় নতুন ফসল হওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই এই রঙিন ফুলকপির চাহিদা অনেক বেশি। আর অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে অন্য চাষিদের মাঝেও। প্রতিদিনই রঙিন ফুলকপির বাগান দেখতে আসছেন আশপাশের কৃষকরা।

পৌরসভা সদরের কাকচরের বাসিন্দা আবু সাঈদ বলেন, রঙিন ফুলকপি দেখতে এলাম। দেখে অনেক ভালো লাগলো।দুটি কপি ১২০ টাকা দিয়ে কিনেছি।

কৃষক বাদল চন্দ্র বর্মণ বলেন হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপির দুই হাজার চারা রোপণ করেছিলাম। ফুলকপির বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি জানান,২০ শতক জমিতে চারাসহ সব মিলে তার খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। কোনো কীটনাশক-সার ব্যবহার না করেই শুধু জৈব সার ব্যবহার করেন তিনি। চারা রোপণের ৭০-৭৫ দিন পর বাগানে আসে রঙ্গিন ফুলকপি। বর্তমানে বিক্রি শুরু করেছেন তিনি।

এ পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করেছেন তিনি। বর্তমান বাজার অনুযায়ী আরও অন্তত ৩০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি হবে বলে আশা করছি।

ইতিমধ্যে তিনি নান্দাইল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায়, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান সুমনের সার্বিক তত্বাবধানে ‘চাষাবাদে নান্দাইল ভালোবসার মাসে রঙিন ভালোবাসা বিপণন’এর মাধ্যমে তিনি ফুলকপি বিক্রি করছেন।

বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ‘ভালোবসার মাসে রঙিন ভালোবাসা বিপণন’ থেকে কৃষক বাদল চন্দ্র বর্মনের নিকট থেকে রঙিন ফুলকপি কিনে নিচ্ছেন।

ময়মনসিংহের নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোস্তাফিজার রহমান, নান্দাইল আসনের এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন, উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হাসান মাহমুদ জুয়েল,উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবুল মনসুর, উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আনিসুজ্জামানকে রঙিন ফুলকপি উপহার দিয়েছন কৃষক বাদল চন্দ্র বর্মণ।

পৌরসভা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান (সুমন) বলেন, আমরা সবসময় কৃষি অফিস থেকে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। বাদল চন্দ্র বর্মণকে আমরা দুই হাজার রঙ্গিন ফুলকপির চারা প্রদান করেছি। রঙ্গিন ফুলকপির ফলন ভালো হয়েছে।

নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান বলেন, চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে এই বাহারি রঙের ফুলকপির বীজ। তাছাড়া বাহারি রঙের ফুলকপি গুলো ক্যারোটিন সমৃদ্ধ এবং ক্যান্সার প্রতিরোধক। সমসাময়িক সবজি গুলোর পাশাপাশি এই বাহারি রঙের সবজি, কৃষক চাষ করলে অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারবে বলে আমি মনে করি।