কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিত্র প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ৮:৩৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৫, ২০২৩

মতিউর রহমান সেলিম, ত্রিশাল ( ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
একজন চিত্রশিল্পী নিজেকে হারায় দুর অজানায়। তারপর গভীর মগ্নতায় মনের মাধূরিতে রং মিশিয়ে তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলে তার ভেতরের বোধ, কল্পনা বা বাস্তবতার জীবন্ত চিত্র। দীর্ঘ সাধনা ও শ্রম ছাড়া আসে না সফলতা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং এন্ড পেন্টিং বিভাগের এমএফএ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ৬ শিক্ষার্থী তাদের দীর্ঘ নয় বছরের জ্ঞান, দক্ষতার সঙ্গে প্রয়োগ ঘটিয়ে তার ব্যঞ্জনা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে “প্রজ্ঞা ও প্রয়োগের ব্যঞ্জনা” প্রতিপাদ্যকে ধারন করে চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করেন। টানা ৮ দিনব্যাপি চলে ওই প্রদর্শনী।


শিল্পকলায় কেন্দ্রমুখী আধুনিকতার শেকল পরায় কেবল মানুষ। শিল্পের শাখা প্রশাখার ভাবনা সুদুর প্রসারি, যা বহুভাবে বেঁচে থাকার রাস্তা তৈরি করে দেয়। চিত্র প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্যই হলো এদেশের শিল্পকলার কেন্দ্রমুখীতা ভেঙে বহুমুখী শিল্পচর্চার ভবিষ্যৎ খুঁজে বের করা।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং এন্ড পেন্টিং বিভাগের এমএফএ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের জবা রায়, লামিয়া আক্তার, সাদ আদনান, সানজিদা পারভীন মুন, সাবিহা আফরোজ, নিখিল চন্দ্র সরকার নামে ৬ শিক্ষার্থী তাদের জ্ঞান, শিক্ষা জীবনের নয় বছরের অভিজ্ঞা ও দক্ষতার সঙ্গে প্রয়োগ ঘটিয়ে তার ব্যঞ্জনা সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে গত ৩০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের নীচতলায় নজরুল গ্যালারিতে “প্রজ্ঞা ও প্রয়োগের ব্যঞ্জনা” নামে একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। ৮দিন ব্যাপি ওই চিত্র প্রদর্শনীর শেষ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে।
প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর। অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা করেন, চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুম হাওলাদার ও দ্রাবিড় সৈকত। প্রদর্শনী দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত।


বুধবার বিকেলে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনীতে গিয়ে কথা হয়, এইচআরএম বিভাগের শিক্ষার্থী নিবেদিতা দত্ত, নাহিদা আক্তার ও শতাব্দী পালের সঙ্গে। তারা বলেন, প্রদর্শনীতে এসে আপু-ভাইয়াদের কাছ থেকে আমরা চিত্রকর্ম সম্পর্কে অনেক ধারনা নিতে পেরেছি, এবিভাগের অন্য শিক্ষার্থীরা অনুপ্রানিত হবে। এ উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
চিত্র প্রদর্শনীর আহবায়ক শিল্পী জবা রায় বলেন, ড্রয়িং এন্ড পেইন্টিং বিভাগের এমএফএ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আমি সহ মোট ৬জন শিল্পীর চিত্রকর্ম নিয়ে প্রথমবারের মতো এই প্রদর্শনী আয়োজন করেছি। আমাদের এই উদ্যোগ ভবিষ্যত প্রজন্মের শিল্পীদের জন্য অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে আশা রাখছি।
তিনি আরো বলেন, প্রদর্শনীতে আমার ছয়টি চিত্রকর্ম আছে। আমি মূলত ইকোফেমিনিজম বিষয়টি আমার চিত্রকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। “কারণ সভ্যতার আধুনিকায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা ভুলে যাচ্ছি প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের নিবিড় সম্পর্কের কথা। ভোগবাদী চিন্তার যাতা কলে আমরা ভুলে যাচ্ছি যে, আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতির কাছ থেকে আমরা শুধু অক্সিজেনই পাচ্ছি না, সঙ্গে সমস্ত খাদ্যের যোগান আমরা প্রকৃতি থেকে পেয়ে থাকি। প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের দূরত্ব বেড়ে যাবার ফলে নির্বিচারে ধ্বংস করছি প্রকৃতির নানান উপাদান। পরিবেশ বিপর্যয় রোধকল্পে পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব দেয় ইকোফেমিনিজম। মূলত এ বিষয়টিই চিত্রকলার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
সানজিদা পারভিন মুন বলেন, নিজের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ক্যানভাসে তুলে ধরার চেষ্টা করি। জীবনে চলতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন অভিজ্ঞতার স্বাক্ষী হই। দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন বিষয়ই আমি আমার চিত্রকর্মে স্থান দিতে পছন্দ করি।
সাবিহা আফরোজ বলেন, শিল্প মানুষের চিন্তা ,বিশ্বাস এবং সৃজনশীলতার সম্মিলিত প্রয়াস। আমি আমার পেইন্টিং বাস্তব এবং অধিবাস্তব বিষয় উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। আমার একটি পেইন্টিং- ‘স্ট্রাগল এন্ড দ্য ডেসটিনেশন’। প্রত্যেক মানুষকে তার সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছাতে গেলে স্ট্রাগল করতে হয়।
চিত্রশিল্পী লামিয়া আক্তার বলেন, প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষার্থীকেই তার স্টাডির ওপর প্রদর্শনীটা নিশ্চয় অন্যদের অনুপ্রানিত করে, নিজের সাবজেক্টের প্রতি আস্থা সৃষ্টি করে। অন্যদের উৎসাহ যোগাতেই আমাদের এই প্রয়াস।
চারুকলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নগরবাসী বর্মণ বলেন, প্রতিভা প্রকাশে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এ প্রদর্শনী যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে,আমরা এই চিত্রকর্মে মুগ্ধ।