সাইফুল ইসলাম তালুকদার ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) :
পরিবেশ বান্ধব ও লাভ জনক একটি কৃষি প্রযুক্তি হচ্ছে মালচিং পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্রথমে জমিতে পরিমিত রাসায়নিক ও জৈব সার দিয়ে সারি সারি বেড তৈরী করা হয়। পরে সারিবদ্ধ বেড গুলো পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এরপর বেডে নির্দিষ্ট দূরত্বে পলিথিন ফুটো করে সবজির বীজ বা চারা রোপণ করতে হয়। চারা রোপণের পর শুধু দেখভাল করা ছাড়া তেমন কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। মালচিং পেপার দ্বারা ঢেকে দেওয়ার কারণে ছত্রাক বা রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ হয় না বললেই চলে। ক্ষেতের পরিচর্যার জন্য তেমন শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। ফলে উৎপাদন খরচ হয় খুব কম। এই পদ্ধতিতে ফলন হয় দ্বিগুণ। পরিশ্রম কম হয়। মালচিং পদ্ধতি অনেক সহজলভ্য লাভজনক ও পরিবেশ বান্ধব। তাই অনেক কৃষক এই পদ্ধতিতে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। দ্বিগুণ ফলন ভালো বাজার দরে সবজি বিক্রি করে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার অনেক সবজি চাষি লাভবান হয়ে তারা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন।
উপজেলার বালিসিতা গ্রামের কৃষক শামসুদ্দিন জানান, তিনি ইউটিউব দেখে ও কৃষি উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ৪০ শতক জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে মেসি ও তামিম উফশি জাতের শসা চাষ করেন। জমি প্রস্তুত থেকে রোপন পর্যন্ত তার খরচ হয় ৮০ হাজার টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে চারা রোপন করার ২১ দিন পর থেকে শসার ফলন শুরু হয়। ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত তিন ধাপে ক্ষেত থেকে ৩শ মন শসা উত্তোলন করে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করেন। এতে তাঁর লাভ হয় ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। আশানুরূপ ফলন ও বাজার দর পেয়ে বেজায় খুশি চাষি শামসুদ্দিন। তার এই অভাবনীয় সাফল্য দেখে পাশের তারাকান্দি গ্রামের কৃষক বাবু মিয়া মালচিং পদ্ধতিতে ৪০ শতক জমিতে শসা চাষের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ইতিমধ্যে ২০ শতক জমিতে শসার চারা রোপণ কাজ সম্পন্ন করেছেন বলে জানিয়েছেন চাষী শামসুদ্দিন।
এওয়াজ নগর গ্রামের চাষি ইব্রাহিম জানান, তিনি ২০ শতক জমিতে পার্পল কিং জাতের বেগুন আবাদ করেছেন। আবাদ করতে তাঁর খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। আবাদকৃত বেগুন ১০ মাস ফলন দেবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ক্ষেত থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করার আশা করছেন তিনি।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ জানান, সংশ্লিষ্ট চাষীর ক্ষেতে যাতে অবাঞ্চিত পোকামাকড়ের আক্রমন না হয় সে জন্য সেক্স ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে।
মাইজবাগ ইউপির চাষী রাকিবুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালে সর্ব প্রথম উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের হারুয়া ব্লকে প্রযুক্তি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৎকালীন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা সোহেল রানা মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করার জন্য আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তখন থেকেই আমরা এ প্রযুক্তিতে সবজি আবাদ করে আসছি। তিনি এবার ১ একর জমিতে সুগার কুইন জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। ৬০ থেকে ৭০ দিনের মাঝে তরমুজ গুলো পরিপক্ক হবে। উৎপাদিত তরমুজ ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে সিলেটের পাইকারদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। এবার তিনি ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। বাড়ির আঙিনায় পুকুরপাড়ে পতিত জায়গায় অনুরূপ প্রযুক্তিতে বড়জোড়া গ্রামের আমানুল্লাহ ৪০ শতক, হেলিম মড়ল ৩০ শতক, সামির উদ্দিন ৩০ শতক জমিতে সুগার কুইন তরমুজ চাষ করেছেন। সংশ্লিষ্ট চাষীরা বলছেন প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না ঘটলে সকলেই লাভবান হবেন।
কৃষক আমান উল্লাহ বলেন, কম সময়ে অল্প খরচে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায় মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান জানান, উপজেলায় প্রায় ৫/৭ হেক্টর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা হচ্ছে। দিন দিন এই পদ্ধতিটি সারা উপজেলায় সম্প্রসারিত হচ্ছে। এটি একটি সম্পূর্ণ নিরাপদ ও লাভজনক পদ্ধতি। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবজি চাষ করলে জমিতে একবার সেচ ও সার দিলেই চলে। বার বার দেয়ার প্রয়োজন হয় না। আগাছা কম হয়। নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত ফসল বেঁচে থাকে। এবং ফলন দেয়। যেকোন আগ্রহী ব্যক্তি নিজ জমি কিংবা বর্গাচাষ করেও এ প্রযুক্তিতে সবজি চাষ করে অল্প সময়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন।