স্টাফ রিপোর্টার : ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী ২৩ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। ময়মনসিংহ নগরকে একটি কর্পোরেশনকে একটি আধুনিক, স্মার্ট ও মডেল সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরের প্রত্যয়ে রবিবার সকালে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সামনে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।
এ সময় তিনি বলেন, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে প্রায় ৫ বছর নগরবাসীর কল্যানে নিজেকে সব সময় নিয়োজিত রেখেছি। বিভিন্ন পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞগণের মতামতের ভিত্তিতে সিটি এলাকাকে নান্দনিক সাজে সাজাতে কাজ শুরু করি। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন মোড় সমূহ প্রশস্থকরণ, তিনটি বাস টার্মিনাল ও একটি ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ, শেখ রাসেল শিশুপার্ক নির্মাণ, নগর ভবন নির্মান, নগরীর বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য নিবাস, কবরস্থান শশ্মান ঘাট নির্মান, পানি প্রবাহবৃদ্ধির লক্ষ্যে খাল সমূহখনন ও সংস্কার বিষয়ে প্রকল্প প্রনয়ন করা হয়। যা অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তাব স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে বিদুৎ বিস্তারে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রক্রীয়াধীন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, সড়ক অবকাঠামো, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও ফুটপাত উন্নয়নে অনুমোদিত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৩টি ওয়ার্ডে উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে, সড়কবাতি নির্মানের জন্য গৃহীত প্রকল্পের মাধ্যমে ১৭১ কিঃমিঃ সড়কেবাতি স্থাপন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, দায়িত্ব গ্রহনের ৬/৭ মাসের মাথায় করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নগরবাসীকে নিরাপদ রাখার স্বার্থে বিভিন্ন উদ্যোগ ও সরকারী সিদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন এবং দৈনন্দিন কার্যাবলী পালনে সকল সময় সচেষ্ট ছিলাম। মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হবার পরপরই প্রায় দুই বছর করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও পরবর্তীতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধাবস্থার মধ্যে দিয়ে নগরের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়েছে। সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা জানেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করে, যার ফলে সরকার সাশ্রয়ী নীতি গ্রহন করায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের ফলে নতুন প্রকল্প অনুমোদন এবং অর্থায়নে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। তারপরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বৌদলতে ময়মনসিংহ নগরীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রা চলমান রেখেছি। আপনাদের পরম মমতা, নিরন্তর সহযোগিতা আমাকে গত পাঁচ বছর নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে নাগরিক সেবায় নিয়োজিত থাকতে অনুপ্রেরণা প্রদান করেছে। আমি পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হলে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চলমান প্রকল্প সমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন, বিভিন্ন দপ্তরে দাখিলকৃত প্রকল্প সমূহ অনুমোদন ও দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনকে একটি আধুনিক, স্মার্ট ও মডেল সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।
তিনি আরো বলেন, আপনার কাছে আপনার পরিবার যেমন, আমার কাছে এ নগরীটি তেমন। এই নগরীর বাসিন্দা হিসেবে আপনার, আমার সকলের চাওয়াগুলো অভিন্ন। আপনারা আমাকে অসমাপ্ত ও প্রস্তাবিত কাজগুলো সমাপ্ত করার সুযোগ দিলে আগামীর ময়মনসিংহ নগরী হবে দেশের স্মার্ট নগরী ইনশাআল্লাহ। এসময় জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমীন কালাম, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব, চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক শংকর সাহা, জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ, সেচ্ছাসেবকলীগ, ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নিম্নে মেয়র প্রার্থী ইকরামুল হক টিটুর ঘোষিত ২৩ দফা ইশতেহার উপস্থাপন করা হলো,
(১) নগরীর প্রধান সমস্যা যানজট নিরসনে সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত সড়ক সমূহ প্রশস্থকরন দাখিলকৃত ও প্রধান সড়কের মোড় সমূহ প্রশস্থকরনে প্রকল্প বিদ্যমান সমূহ অনুমোদনের মাধ্যমে বিদ্যমান যানজট নিরসন ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে ওভারপাস বা ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ।
(২) যানজট নিরসনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তা প্রশস্তকরণ, রেলপথ বিভাগের ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ ট্রাফিক সহ বিভাগের জনবল বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ প্রদান ও আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপনে সকল বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ।
(৩) নগরীর প্রবেশদ্বারের সন্নিকটে তিনটি বাসটার্মিনাল ও একটি ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের দাখিলকৃত প্রকল্প দ্রুত অনুমোদনের মাধ্যমে নগরীর যানজট নিরসনে উদ্যোগ গ্রহন।
(৪) নগরবাসীর যাতায়াতের সুবিধার্থে চলমান রাস্তা সমূহ পাকাকরণ প্রকল্প দ্রুত সম্পন্নকরণ ও নতুন পুরাতন সকল ওয়ার্ডের সমস্ত রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও কালভার্ট দ্রুত নির্মাণ।
(৫) নগরীর খাল সমূহ দখলমুক্ত করণের মাধ্যমে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান ড্রেনেজ নির্মাণ প্রকল্প সমূহ দ্রুত সম্পন্নকরণের উদ্যোগ গ্রহণ।
(৬) হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়ে নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি ও ট্রেড লাইসেন্স ফি যুক্তিসঙ্গত ও সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং সিটি করকে আরো সহনীয় করতে সম্মানিত নাগরিকবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়।
(৭) পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত নগরী গড়ার লক্ষ্যে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নির্মাণাধীন প্ল্যান্ট দ্রুত বাস্তবায়ন ও অন্যন্য কার্যক্রম সমূহ আরও জোরদার করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। পাশাপাশি নগরীর সর্বত্র দুষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির করা।
(৮) বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রক্রিয়াধীন প্রস্তাবটি দ্রুত অনুমোদনের ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বর্জ্যমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে উদ্যোগ গ্রহণ।
(৯) বিভিন্ন অপতৎপরতা রোধ করে আলোকিত নগরায়নের লক্ষ্যে নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে চলমান ‘সড়ক বাতি’ স্থাপন প্রকল্প দ্রুত সম্পন্নকরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ।
(১০) সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময় প্রদত্ত বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা সমূহ সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করা ও অন্যান্য নাগরিক
সেবাসমূহ জনগণের নিকট সহজলভ্য করার ব্যবস্থা করা।
(১১) নাগরিক সেবা আরও সহজলভ্য করতে প্রস্তাবিত আধুনিক ‘নগর ভবন’ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন ও নাগরিক সেবা সমূহ ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ গ্রহণ।
(১২) নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের লক্ষ্যে নানাবিধ যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন্ন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে ও সবুজ নগরায়নের লক্ষ্যে রাস্তার দুই পাশে ও খোলা জায়গা পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণ ও জলধার নির্মাণ ও সংরক্ষণের উদোগ গ্রহণ।
(১৩) নগরবাসীর সুচিকিৎসা নিশ্চিতের লক্ষ্যে চলমান চারটি নাগরিক সেবাকেন্দ্রের পরিধি বৃদ্ধি ও দুটি নির্মাণাধীন হাসপাতাল দ্রত সম্পন্নকরণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
(১৩) নগরবাসীর সুচিকিৎসা নিশ্চিতের লক্ষ্যে চলমান চারটি নাগরিক সেবাকেন্দ্রের পরিধি বৃদ্ধি ও দুটি নির্মাণাধীন হাসপাতাল দ্রুত সম্পন্নকরণের উদ্যোগ গ্রহণ।
(১৪) নগরবাসীর বেকারত্ব রোধে নারী- তরুণদের নানাবিধ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদেরকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া।
(১৫) বেকারত্ব রোধে ময়মনসিংহ নগরীকে শিল্পনগরী ও পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা উৎসাহ ও সহায়তা প্রদান করার উদ্যোগ গ্রহণ।
(১৬) বর্ধিত নতুন এলাকাসমূহে নগর বিন্যাসের পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে আগামী নগরীকে সাচ্ছন্দ্যময় করে তোলা।
(১৭) নগরীর প্রত্যেক এলাকায় সহজাত তারুণ্যের বিকাশে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্লাব গঠন ও পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত মঞ্চ তৈরি করণে সহযোগিতা প্রদান।
(১৮) বিভাগীয় সাংস্কৃতিক পল্লী নির্মাণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ।
(১৯) শিশুদের শারিরীক বিকাশের জন্য প্রস্তাবিত ‘শেখ রাসেল শিশু পার্ক’ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন ও ‘বিপিন পার্ক আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ।
(২০) সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও কবরস্থান, শ্মশান ঘাট সমূহ আরও সুবিধা সম্বলিত উন্নত করণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
(২১) মাদকসেবন ও অপরাধমূলক কর্মকান্ড হতে বিরত রাখতে যুবসমাজের মাঝে সচেতনতাবৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা প্রদান।
(২২) সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যমান ৫টি অনলাইন সেবাসমূহ ছাড়াও অন্যান্য সেবা সমূহ ডিজিটালাইজেশন এর মাধ্যমে সম্মানিত নাগরিকবৃন্দের হাতের মুঠোয় পৌছে দেওয়া এবং ৩৩ (তেতত্রিশ) টি ওয়ার্ডে স্মার্ট কর্ণার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ।