গৌরীপুর প্রতিনিধি :
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে আধুনিক মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ভবন আছে, সেবা নেই! জনবল সংকট ও যন্ত্রপাতির অভাবে ভবন নির্মাণের ৬বছর ৫মাসেও চালু হয়নি। সুচিকিৎসার অভাবে নবজাতক আর শিশুর মৃত্যু বাড়ছে। হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা চালুকরণের দাবিতে ইতোমধ্যে মানববন্ধন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হয়েছে।
বুধবার (২৫ নভেম্বর/২০২০) হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, নিচতলায় রোগীদের পরিচর্যা, নিয়মিত সেবা কার্যক্রম, ২য় ও ৩য় তলায় অবস্থিত অপারেশন থিয়েটার, আল্ট্রাসনো, ডিউটি ডক্টরস রুম, স্টোর রুম, ওয়ার্ড, ডেলিভারী রুমে তালা ঝুলছে।
নিচতলায় পৌর শহরের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কার্যক্রম চলছে। দায়িত্বে রয়েছেন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা আঞ্জুমানারা বেগম। তিনি জানান, হাসপাতালের কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। পরিবার পরিকল্পনা সেবা কার্যক্রম চলছে।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে ২০১৪সালের ১২ এপ্রিল তারিখে ১০ শয্যা বিশিষ্ট এ কেন্দ্র নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির এমপি। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল ভবন ও এক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় আবাসিক ভবন।
এ হাসপাতালটি চালু হলে মায়েদের মৃত্যুর হার কমানো, মা-শিশুর স্বাস্থ্য ভালো রাখা, অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ রোধ, যৌন রোগসহ এইচআইভি/এইডস থেকে রক্ষা, পরিকল্পিতভাবে স্বামী-স্ত্রী পরিবার গঠন, সন্তান কমে স্বল্প আয়েও আর্থিকভাবে সচ্ছলতা, সন্তানদের পুষ্টিকর খাবারসহ মৌলিক চাহিদাপূরণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধের প্রয়োজনে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি কার্যক্রমও বেগবান হবে।
আধুনিক মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি চালু হলে সেখানে একজন এমও (মেডিকেল অফিসার), ২জন এফডব্লিউডিসহ নানা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সার্বক্ষনিক থাকবেন। সুরম্য ভবনে ১০টি বেডেও গর্ভবর্তী মা ও তার নবজাতক শিশু উন্নত সেবার সুযোগ পাবেন। সুসজ্জিত ডাক্তারদের কক্ষ, রয়েছে আবাসিক কক্ষও নেই ডাক্তার। প্রতিদিনই রোগীরা চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন।
উপজেলা মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ অফিসার ডা. ফেরদৌস আরা আক্তার জানান, জনবল সংকট ও যন্ত্রপাতি প্রদানের জন্য উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ বরাবরে পত্র দিয়েছি। ভবনটি সচল রাখার জন্য পৌরসভার নিয়োজিত এফডব্লিউভিকে দিয়ে সেখানে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বহিঃ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
এ দিকে এফডব্লিউভি আঞ্জুমারা বেগমের সাহসিকতার কারণেই এ অচল হাসপাতালে চলছে গর্ভবতী মায়ের সেবা, প্রসব উত্তর ও পরবর্তী সেবা কার্যক্রম এবং নবজাতক শিশু স্বাস্থ্য সেবা। পুর্বদাপুনিয়ার প্রসূতি রোকেয়া আক্তার জানান, আপা (আঞ্জুমারা বেগম) সাহস দিয়েছে। তাই এখানে এসেছি। স্বামী রিস্কা চালায়, ৪ সন্তান। ওদের খরচ চালিয়ে টাকা-পয়সা দিয়ে আমার চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই।
গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শফিকুল ইসলাম মিন্টু বলেন, মা ও নবজাতকের সুচিকিৎসার জন্য অবিলম্বে হাসপাতালটির কার্যক্রম করার দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জনবল ও যন্ত্রপাতি প্রদানসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করে ৯বার পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। ১৪৮ ময়মনসিংহ-৩ গৌরীপুরের জাতীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ জানান, জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরপর্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেছিলাম। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে জনবল প্রদানের আশ্বাস দিয়ে ছিলেন। আমরা চেষ্টা করছি, এবার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে হাসপাতালের কার্যক্রম দ্রুত চালু করতে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মাজহারুল হক চৌধুরী জানান, হাসপাতালে পদ সৃষ্টি হয়েছে। জনবল নিয়োগ হয়নি। হাসপাতালের কার্যক্রম দ্রুত চালু করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।