স্বজন ডেক্স : করোনার ভ্যাকসিন কিনতে একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এক্ষেত্রে শুধু ভ্যাকসিন কিনতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। এর সঙ্গে পরিবহন সংরক্ষণসহ আনুষাঙ্গিক ব্যয় মিলে মোট যাবে ৫ হাজার ৬৫৯ কোটি ৭ লাখ টাকা।
এজন্য ‘চলমান কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডামিক প্রিপার্ডনেস’ শীর্ষক প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬ হাজার ৭৮৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ১ হাজার ১২৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঋণ সহায়তা হিসেবে বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) দিচ্ছে প্রায় ৬ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে গণভবন থেকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন কেনার ক্ষেত্রে যাতে নয়ছয় না হয় সেদিকে প্রধানমন্ত্রীসহ আমরা সবাই দৃষ্টি রাখবো। ভ্যাকসিন পাওয়াকে উচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। আমরা আশাবাদী ইতোমধ্যেই করা চুক্তি অনুযায়ী ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। এজন্য শতভাগ প্রস্ততি গ্রহণ করা হচ্ছে। বলতে গেলে আমরা শতভাগ তৈরি।
একনেক বৈঠক শেষে স্বাস্থ্য সচিব সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভ্যাকসিন কিনতে জিটুটি কিংবা যেভাবেই চুক্তি হোক পুরো বিষয়টি দুই দেশের (বাংলাদেশ ও ভারত) সরকারপ্রধান অবহিত রয়েছেন এবং তারা জড়িত। সুতরাং এ নিয়ে জটিলতার কিছু নেই। আশা করছি, সময়মতোই ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।
যারা পাবেন ভ্যাকসিন
দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর মধ্যে কারা করোনার টিকা পাবেন, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আবুল কালাম আজাদ তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এর কিছু ব্যক্তিশ্রেণির নাম এসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এর বাইরে পরিকল্পনা কমিশনও কিছু শ্রেণির জনগোষ্ঠীর নাম প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবিত জনগোষ্ঠী হলো—কোভিড-১৯ সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা সম্মুখ সারির স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মজীবী, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী, জনপ্রতিনিধি, জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মী, ধর্মীয় প্রতিনিধি, বন্দরগুলোতে দায়িত্বরত কর্মী, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কর্মী, ব্যাংককর্মী, স্বল্প বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যারা কোভিডের সঙ্গে সম্পৃক্ত, শ্রমঘন প্রতিষ্ঠানের কর্মী (গার্মেন্ট), পরিবহন শ্রমিক, শ্রমঘন হাটবাজার-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মী, এতিমখানা এবং বিদেশগামী ও বিদেশফেরত সব ব্যক্তিবর্গ।’
প্রকল্প প্রসঙ্গে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গত এপ্রিলে একনেকে পাস হওয়া মূল প্রকল্প ছিল এক হাজার ১২৭ কোটি টাকা। এখন বেড়ে হয়েছে ছয় হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১৭২ কোটি টাকা। বাকি টাকা বিদেশি অর্থায়নে হবে। এপ্রিল ২০২০ থেকে জুন ২০২৩ মেয়াদে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। চলতি অর্থবছরে এই প্রকল্পে ৪৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও খরচ হবে চার হাজার কোটি টাকার মতো। কারণ, আমরা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিতে চাই।’