শাহ্ আলম ভূঁইয়া, নান্দাইল আঞ্চলিক অফিস :
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চাষীরা শীতকালীন সবজি শিমচাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এ সাফল্যের কারণে তারা দিন দিন শিম চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ভালো ফলন এবং ভালো বাজার পেয়ে খুশি কৃষক পরিবার। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন জাতের শিম চাষ করছেন চাষিরা।
উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ ভরে গেছে শিমে শিমে। সবুজের উপর লাল-সাদা ফুলের সমারোহ। শিমের রাজত্বে যেন অন্য ফসলের খোঁজ মেলা ভার।
নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর নান্দাইলে ৩৯৪ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ শিম দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে।
উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে চরবেতাগৈর ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামেই শিমের চাষ হয়েছে। এ ছাড়া বীরবেতাগৈর, আচারগাঁও, খারুয়া, শেরপুর, রাজগাতী ও গাঙ্গাইল ইউনিয়নে ও শিম চাষ চাষ করা হয়েছে। উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নেও বিক্ষিপ্তভাবে শিম চাষ হয়েছে।
এ সব এলাকায় যেদিকে চোখ যাবে, সেদিকেই শুধু শিম আর শিম। কৃষকের বাড়ির আঙিনা পেরিয়ে বিস্তীর্ণ মাঠেও হচ্ছে শিম চাষ। বর্তমান সময়ে অনুকূল আবহাওয়ায় শিমের ভালো ফলন এবং বাজারেও উচ্চমূল্য পাওয়ায় চাষিরা বেশ খুশি।
খরচের চেয়ে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষক অন্য ফসলের চেয়ে শিম চাষে ঝু্ঁকে পড়েছেন। শিম চাষের সঙ্গে জড়িত অন্তত ২ শতাধিক কৃষক। চলতি বছর কৃষকরা দেশি, বারী, নলডুক এবং স্থানীয় উন্নত জাতের শিম চাষ করেছেন। রাজধানী ঢাকাসহ আশেপাশের উপজেলার ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে এই অঞ্চলের শিম।
শিম চাষি দুলাল মিয়া, মিলন মিয়া, রোকন উদ্দিন,মতিউর রহমান, ফাইজদ্দিন, মামুন, কসুম উদ্দিন, সালাম, খোকন, আহাদুলসহ বেশ কিছু কৃষক শিম চাষ করে বদলে ফেলেছেন তাদের নিজেদের ভাগ্যের চাকা। এ বছর শিমের বাজার বেশ ভালো। প্রথম দিকে কেজি প্রতি বাজার দর ৯০ থেকে ১০০ টাকা হলেও বর্তমানে শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ১ মণ শিম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে। এক একর জমিতে শিম চাষ করতে সব মিলিয়ে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। পুরো মৌসুমে কমপক্ষে এক একর জমি থেকে শিম বিক্রি হবে ৭৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকা।
লোহিতপুর গ্রামের ফাইজদ্দিন জানান, এক একর জমিতে শিম চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। তিনি এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন। তিনি আরও ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করেন। মামুন নামে আরেক চাষী ৭০ শতাংশ জমি থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন বলে জানান।
নান্দাইল উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আজিজুর রহমান জানান, কৃষি অফিস থেকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঠিক পরামর্শ ও তদারকির কারণে এ বছর শিমের ভালো ফলন হয়েছে।
নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, ‘কৃষি বিভাগের পরামর্শ, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে সঠিক তদারকি ও সুষ্ঠু পরিচর্যায় শিমের ফলন ভালো হয়েছে। লাভজনক হওয়ায় এ এলাকার কৃষক শীত মৌসুমে ব্যাপকভাবে শিম চাষ করে থাকেন। শিম চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।’