গৌরীপুরে ৫বছরেও মিলেনি ৫০শয্যার হাসপাতালে জনবল!
১৭বছর যাবত অচল এক্স রে মেশিন, ১৪ বছর যাবত নেই আবাসিক মেডিকেল অফিসার
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
ঘড়ির কাটায় তখন ১০টা ১১মিনিট! বর্হিঃবিভাগের সকল দরজায় তালা ঝুলছে। কক্ষে ডাক্তার নেই, তাই ঠান্ডা আর হিমেল বাতাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে সেবা নিতে আসা মানুষও হাসপাতালের সামনে রোদে শরীরটা একটু গরম করে নিচ্ছেন। ১০টা ১৪মিনিটের দিকে কক্ষে আসলেন ডাঃ আরিফ।
তার ৩মিনিট পরেই উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার একেএম মাহফুজুল হক তার নিজ কক্ষে প্রবেশ করেন। এমন চিত্রই দেখা গেলো ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা কার্যক্রমের প্রথম ধাপ। তখনও অন্য দরজাগুলোতে তখনও তালা ঝুলছে! এ দৃশ্য বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি/২০২১) এর। দ্বিতীয় ধাপ দুপুর একটা একেরপর এক ডাক্তার বেড়িয়ে এলেন, বন্ধ হয়ে গেলো টিকেট কাউন্টারও!
এমন দৃশ্য শুধু ওইদিন নয়; সাংবাদিকরা পর্যবেক্ষণ করার জন্য ১মাসে এ হাসপাতালে যান ১৭দিন। প্রতিদিনই ছিলো অনুরূপ দৃশ্য। এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ মুহাম্মদ রবিউল ইসলাম জানান, হাসপাতালের চিকিৎসা সময় সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা ৩০মিনিট পর্যন্ত। জরুরী বিভাগে ও ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার কারণে বহিঃবিভাগ একটু দেরি হয়েছে। তিনি আরো জানান, ডাক্তারকে নির্ধারিত সময়ে বর্হিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য অফিস আদেশও দেয়া হয়েছে।
এদিকে জানা গেলো, ৫০শয্যা হাসপাতালের ভবন উদ্বোধনের ৫বছর পূর্ণ হচ্ছে শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি/২০২১) ২০১৬সালের ১৬ জানুয়ারি তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ হাসপাতালের ভবন উদ্বোধন করেন । তবে কাঙ্খিত স্বাস্থ্য সেবার কার্যক্রম আজও চালু হয়নি। ৩১শয্যার সংকটময় জনবল, যন্ত্রাংশের অপ্রতুলতা সেবা কার্যক্রম চরমভাগে বিঘিœত হচ্ছে।
৫০শয্যার হাসপাতালে জুনিয়ার কনসালটেন্ট পদে ১জন শিশু বিশেষজ্ঞ, ১জন হাড় বিশেষজ্ঞ, ১জন চক্ষু বিশেষজ্ঞ, জুনিয়ার কনসালটেন্ট (ইএন্ডটি), জুনিয়ার কনসালটেন্ট (যৌন ও চর্ম), সহকারী সার্জন সমমানের একজন এমও, একজন আইএমও, একজন ইএমও, ১জন প্যাথলজিস্ট, একজন এ্যানসথেটিষ্ট, একজন ইউনানী, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ১জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স ৫জন, মেডিকেল টেকনোলজি ১জন, প্রধান সহকারী, কার্ডিওগ্রাফার, কম্পউন্ডার, ল্যাব এটেনডেন্ট, ওটি বয় ১জন, ইমারজেন্সী এটেনডেন্ট ১জন, আউসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে টিকেট কার্ক ১জনসহ আরো ৪জন কর্মচারীর পদ রয়েছে।
এসব পদ শূন্য রেখেই ৫বছর পূর্বে শুধু ভবন উদ্বোধন হলেও আজও সেবার কার্যক্রম চালু হয়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. মুহাম্মদ রবিউল ইসলাম জানান, ২০১৮সালের ৬জুন ৫০ শয্যা হাসপাতালের প্রশাসনিক অনুমোদন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রেহানা ইয়াছমিন। এছাড়াও হাসপাতালের ৫০শয্যার রোগীর বিছানা ও খাদ্য বরাদ্দ এসেছে। পাওয়া গেছে মাত্র ৪জন স্টাফ নার্স।
এ দিকে ৩১ শয্যা হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের অভিভাবকখ্যাত ‘আবাসিক মেডিকেল অফিসার’ পদটি ১৪বছর ধরে শূন্য। ১১বছর যাবত এক্স-রে মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। যন্ত্রপাতির অভাবে প্যাথলজী প্রায় অচল। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ২৪বছর যাবত জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেশিয়া) ডাক্তারের পদটি পূরণ হয়নি। এ ডাক্তারের শূন্যতায় হাসপাতালটি গর্ভবতী রোগী ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। গাইনী অপারেশন (সিজার) কার্যক্রম না থাকায় এ অবস্থার জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গৌরীপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক মমতাজ বেগম।
এ ছাড়াও মেডিকেল অফিসার ১জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স ২জন, মিডওয়াইফ সিনিয়র স্টাফ নার্স ২জন, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ২জন, ফার্মাসিন্ট ২জন, সহকারী নার্স ১জন, স্বাস্থ্য সহকারী ০৬জন, পরিসংখ্যানবিদ ১জন, স্টোর কিপার ১জন, অফিস সহায়ক ৪জন, ওয়ার্ড বয় ২জন, আয়া ২জন, নিরাপত্তা প্রহরী ১জন, মালী ১জন, জুনিয়ার মেকানিক ১জন, পরিচ্ছন্ন কর্মী ২জনের পদ শূন্য রয়েছে।
এ হাসপাতালের এসএসিএমও মোঃ আবুল হোসেন টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার কেদারপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. মুহাম্মদ রবিউল ইসলাম জানান, জনবল সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারপরেও মানুষকে সর্বোচ্চ সেবার চেষ্টা চালাচ্ছি।