মতিউর রহমান সেলিম, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা। এই ঘন জনগোষ্ঠির খাদ্য ঘাটতি পূরণ করতে কৃষি জমি পতিত ফেলে না রাখার নির্দেশনাসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহন করেছে সরকার। একদিকে খাদ্য ঘাটতি পূরণের চেষ্টা, অপরদিকে তিন বা দুই ফসলি জমিতে পরিবেশ অধিদপ্তর ও কৃষি বিভাগের অনুমতি ছাড়াই ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবৈধভাবে অবাদে বাড়ছে ইটভাটার সংখ্যা।
ওইসব ইটভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। ফলে প্রতি বছর কমে আসছে ফসল উৎপাদনের মাত্রা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে,পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে ফসলি জমিতেই অর্ধ শতাধিক ভাটা গড়ে উঠলেও স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নেই কোন তৎপরতা।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্যানুসারে ইতিমধ্যেই ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় গড়ে উঠেছে ৬২ টি ইটভাটা। তারমধ্যে অর্ধ শতাধিক ভাটা, ইটভাটা নিয়ন্ত্রন আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গড়ে উঠেছে ফসলি জমিতে। ৮/১০টি ভাটা পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকের অনুমোদন। বাকিগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ম্যানেজ করে, ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে মালিকরা চালিয়ে যাচ্ছে ভাটা।
কৃষি জমির মাটি খেকো স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে এক হাজার টাকায় প্রতি ট্রাক মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। প্রতিদিন ৬২টি ভাটায় শত শত ট্রাক ফসলি জমির মাটি যাওয়ার ফলে প্রতিবছরই কমে আসছে ফসলের উৎপাদন। প্রতিনিয়ত ফসলি জমির মাটি উজার হওয়া, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করা এবং পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে প্রতিবছর ভাটা গড়ে উঠলেও এসব বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন অথবা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন তৎপরতা নেই।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বালিপাড়া ইউনিয়নের বিয়ারা গ্রামেই রয়েছে ১২ টি ইটভাটা। গ্রামের উত্তরপাড়া এলাকা প্রবেশ করতে গিয়ে দেখা মিলে প্রশস্ত এক সড়কের। বড় বড় ড্রামট্রাক ভর্তি মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। তবে স্থানীয়দের কাছে জানা যায়, সেটি এলজিইডি বা সরকারি কোন সড়ক নয়। কয়েক বছর ধরেই নিয়মিত মাটি নিয়ে ট্রাক চলাচলে তা সড়কে পরিনত হয়েছে। সেখানকার প্রায় তিন চার’শ একর দুই ফসলি জমির মাটি উধাও। কাঁঠাল ইউনিয়নের তেঁতুলিয়াপাড়া গ্রামে গিয়েও প্রায় একই দৃশ্য দেখা যায়।
বিয়ারা গ্রামের কৃষকরা জানায়, স্থানীয় মাটি খেকো দালাল জামাল ভাঙ্গারির মাধ্যমেই ওইগ্রামের ফসলি জমির মাটি উজার হয়েছে। দৃশ্যমান লাভ দেখে মাটি বিক্রির পর অনেক কৃষকের এখন মাথায় হাত। কেননা, মাটি বিক্রির আগে দুই ফসলের ধান উঠত কৃষকের গোলায়। এখন এক ফসল ফলানোই দায় হয়ে উঠেছে।
হদ্দেরভিটা গ্রামের কৃষকরা বলেন, মাটির দালাল চানু মেম্বার ইটভাটা মালিকদের সঙ্গে তিন হাজার টাকা ট্রাক চুক্তি করে ফসলি জমি বা পুকুর খননের মাটি পৌছে দেন তাদের ভাটায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শোয়েব আহমেদ জানান, জমির টপ সয়েলে থাকে ফসলের পুষ্টি উপাদান। সেটাই যদি কেটে নেওয়া হয় বা সরিয়ে ফেলা হয়, তবে মাটির উর্বর ক্ষমতা নষ্ট হয়ে ফসল উৎপাদনের মাত্রা কমে যায়।
পরিবেশ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের বিভাগীয় পরিচালক ফরিদ আহমদ জানান, প্রায়ই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় কার্যক্রম অব্যাহত আছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে যেকোন সময় ছাড়পত্রহীন অবৈধভাবে গড়ে উঠা ইটভাটা অপসারনে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এ ব্যাপারে ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান জানান, খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।