শেরপুর প্রতিনিধি : আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় পৌরসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী শেরপুর পৌরসভায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপিতে মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাপ দেখা যাচ্ছে। উভয় দলে তারুণ্যদীপ্ত ডজনখানেক সম্ভাব্য প্রার্থীর সমর্থকদের ‘মেয়র হিসেবে দেখতে চাই’ মূলক ডিজিটাল বা ফেসবুক প্রচারণার পাশাপাশি পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার প্রচারণা ইতোমধ্যে শহরবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সেইসাথে সচেতন মহলকে তুলেছে ভাবিয়ে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় মনোনয়ন কে কে পাচ্ছেন- তা নিয়ে চায়ের আড্ডাসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা গুঞ্জনের পাশাপাশি চুলছেরা বিশ্লেষণ।
জানা যায়, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন শেরপুর পৌরসভাসহ সারাদেশে ২৩৪টি পৌরসভায় আগামী ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর পরপরই অন্যান্য এলাকার মতো ১৫০ বছরেরও অধিক সময়ের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী শেরপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের প্রাথমিক তৎপরতা শুরু হয়।
আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন দু’দফার মেয়র, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন, জেলা আইনজীবী সমিতি ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য-গবেষণা সম্পাদক এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল হাসান উৎপল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক, ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক, শ্রমিকনেতা আরিফ রেজা।
তাদের মধ্যে সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিনের জ্যেষ্ঠ পুত্র, বর্তমান মেয়র লিটনের পক্ষে মাঠ পর্যায়ে প্রচার-প্রচারণা না থাকলেও ব্যবসায়ী সংগঠন চেম্বার অব কমার্সসহ নানা সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি তিনি তুলনামূলকভাবে জনপ্রতিনিধি হিসেবে পরিচ্ছন্ন হওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গণে তাকে নিয়েই যেমন চলছে গুঞ্জন, ঠিক তেমনি দলের দায়িত্বশীল মহলসহ উচ্চ পর্যায়ে ঠিকই রয়েছে তার যোগাযোগের পাশাপাশি দৌড়-ঝাঁপ।
আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার ছাত্রলীগ ও কৃষকলীগের পথ বেয়ে তৃণমূল থেকে তিলে তিলে উঠে এসেছেন। অন্যান্য প্রার্থীদের চেয়ে স্বৈরাচার এরশাদ এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনে তার যেমন ছিল সক্রিয় ভূমিকা, তেমনি তিনি এলাকার শিক্ষা ও ধর্মীয়-সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের গোড়াপত্তনের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে রয়েছে তার নিবিড় সম্পর্ক।
আর তাই তিনি এখনও সরাসরি প্রচারণায় মাঠে না নামলেও তার পক্ষে ডিজিটাল প্রচারণা রয়েছে সবার শীর্ষে। সেইসাথে তার বৃহৎ এলাকাসহ সর্বত্র তাকে নিয়ে চলছে গুঞ্জন। সম্ভাব্য ৫ প্রার্থীর মধ্যে দলের বিদ্রোহী রুমান-ছানু বলয়ের তিনিই এখন পর্যন্ত একমাত্র প্রার্থী। রয়েছেন বলয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। সহসাই চমক সৃষ্টি করে ও সবাইকে তাক লাগিয়ে মাঠে নামতে পারেন তিনি- এমনই শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতা উৎপল রাজনীতির পাশাপাশি নবারুণ শিক্ষা পরিবারের চেয়ারম্যান। তার পক্ষে ফেসবুক প্রচারণার পাশাপাশি শহরে চলছে লিফলেট প্রচারণা। সেইসাথে সতীর্থ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় চলছে গণসংযোগ।
রাজধানী ঢাকায় গার্মেন্টস ব্যবসার সাথে যুক্ত আনিসুর রহমান সরাসরি ২০১৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীতে স্থান করে নেন। গুঞ্জন রয়েছে, তারপর থেকেই ‘গ্রীন সিগনাল’ পেয়ে মাঠে রয়েছেন তিনি। বিভিন্ন এলাকার ধর্মীয়-সামাজিক প্রাতিষ্ঠানে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি সম্প্রতি শহরের মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তার দর্শনীয় ব্যানার। সেইসাথে থেমে নেই ফেসবুক প্রচারণার পাশাপাশি গণসংযোগও।
বয়সে সবচেয়ে তরুণ শ্রমিকনেতা আরিফ রেজা সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি এডভোকেট ফাতেমাতুজ্জহুরা শ্যামলীর ছোটভাই ও প্রয়াত শ্রমিক নেতা সেলিম রেজার ছেলে। তিনিও সম্প্রতি নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করে ফেসবুক প্রচারণার পাশাপাশি শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে টানিয়েছেন আকর্ষণীয় ব্যানার। এখন সম্ভাব্য ওই ৫ প্রার্থীর মধ্যে কে পাচ্ছেন বা পাবেন দলীয় টিকেট সেটাই দেখার বিষয়।
এদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন শহর বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এডভোকেট আব্দুল মান্নান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত এডভোকেট একেএম ছাইফুল ইসলামের একমাত্র পুত্র প্রভাষক মামুনুর রশিদ পলাশ, জেলা বিএনপির অপর সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবু রায়হান রূপম, জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও শহর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এমদাদুল হক মাস্টার, জেলা বিএনপির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক পৌরপতি প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক আশীষের পুত্র হাসানুর রেজা জিয়া এবং শহর বিএনপির সদস্য সচিব, সাবেক ছাত্রনেতা শহর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক রমজান আলী।
এদের মধ্যে এডভোকেট আব্দুল মান্নান সরাসরি রয়েছেন বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগে। অন্যরা ফেসবুক প্রচারণার পাশাপাশি দলীয় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তবে ক’দিন যাবত সাবেক ছাত্রনেতা রূপম তার সতীর্থ ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের নিয়ে নেমেছেন গণসংযোগেও। তাদের মধ্যে এতদিন এডভোকেট মান্নানই দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন- এমন কথা শোনা গেলেও নানা সমীকরণে এখন সেটিও যেন অস্পষ্ট হয়ে উঠছে।