ময়মনসিংহ (গফরগাঁও) সংবাদদাতা :
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ে আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী এএফএম ফয়জুল্লাহ (৭০) ওরফে আবুল ফালাহ ওরফে ফাইজুল্লাহকে গ্রেফতার করেছে।
রায় ঘোষনার ১৪ ঘন্টার মধ্যেই ৭ বছর ধরে পলাতক ফাইজুল্লাহকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয় পাগলা থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাগলা থানার ওসি রাশেদুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঢাকার শাহবাগ এলাকা থেকে ফাইজুল্লাহকে গ্রেফতার করে। ২০১৪ সালে ফাইজুল্লাহ’র বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়েরের পর থেকে সে পলাতক ছিল।
গত বৃহস্পতিবার সকালে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে ফাইজুল্লাহ’র মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধের অপরাধ প্রমানীত হওয়ায় ফাইজুল্লাহসহ গফরগাঁও উপজেলার ৮ জনকে কারাদন্ড দেওয়া হয়। ফাইজুলাহসহ তিনজনকে আমৃত্যু কারাদন্ড ও অপর পাঁচজনকে ২০ বছর করে কারাদন্ড দেওয়া হয়।
আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষনা করেন। ট্রাইবুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি আমির হোসেন ও বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার।
ফাইজুল্লাহ গফরগাঁও উপজেলার সাধুয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ খানের ছেলে। থানা পুলিশ, এলাকাবাসী ও মামলার বাদীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে ফাইজুল্লাহর পিতা মজিদ খান ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান নেজামে ইসলামি পাটির সক্রিয় কর্মী হিসেবে স্থানীয় রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল।
ফাইজুল্লাহ পিতার আর্দশ অনুসরন করে নেজামে ইসলামীর কর্মী হিসেবে ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ভূমিকায় লিপ্ত হয়। সে তার সশস্ত্র রাজাকার সহযোগি আব্দুর রাজ্জাক, সামসুজ্জামান (কালাম), আব্দুল খালেক, বাদশা, খলিলুর রহমান মীর গংদের নেতৃত্ব দিয়ে গফরগাঁও উপজেলার নিগুয়ারি, টাংগাব, দত্তেরবাজার ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, অপহরন, আটক ,নির্যাতন, হত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটেনে অংশগ্রহন করে।
১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে এ সব ঘটনায় ফাইজুল্লাহ এর বিরুদ্ধে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে গফরগাঁও থানায় ৮ টি মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৫ অক্টোবর ফাইজুল্লাহকে এসব মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এরপর ফাইজুল্লাহ ঢাকার মোহাম্মদপুরের আদাবর এলাকায় বসবাস শুরু করে এবং সাপ্তাহিক জয়যাত্রা, দৈনিক নয়াদিগন্ত ও দৈনিক শক্তি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করে। ২০১৪ সালে সাধুয়া গ্রামের মরহুম আফাজ উদ্দিন বাদী হয়ে তার নামে মানবতাবিরোধী মামলা দায়ের করে। এর পর সে আত্মগোপনে চলে যায়। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর সহযোগি, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের প্রাপ্ত তালিকায় নিগুয়ারি ইউনিয়নের তালিকায় ফাইজুল্লাহ’র নাম ২৫৪ নং ক্রমিকে ছিল।
পাগলা থানার ওসি মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। পাগলা থানায় নতুন যোগদান করেছি। আমার কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল যুদ্ধাপরাধের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীদের গ্রেফতার কর। ট্রাইবুনালের রায়ে আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক ফাইজুল্লাহকে গ্রেফতার করে ময়মনসিংহ জেলা আদালতের মাধ্যমে কারাগরে প্রেরন করা হয়েছে।
এদিকে যুদ্ধাপরাধি রাজাকার ফইজুল্লাহ গ্রেফতার ও আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে রায়ে একাত্তরের রাজাকারদের শাস্তি হওয়ায় নিগুয়ারি ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধাদের রায়ে শুক্রবার বাদ জুম্মা সাধুয়া গ্রামে শুকরিয়া মিলাদ আয়োজন ও মিষ্টি বিতরন করা হয়।