স্বজন ডেক্স : চতুর্থ ধাপে ৫৫টি পৌরসভায় ভোট হবে রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি)। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে গত শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে রাতে।
নির্বাচনী এলাকা গুলোতে ভোটকে কেন্দ্র করে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যান চলাচলে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ ব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সহকারী সচিব মো. জসিম উদ্দিন ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসিকে অবহিত করেছে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ৫৫টি পৌরসভায় নির্বাচন উপলে ১২ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত ১২টা থেকে থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত মোট ৫৪ ঘণ্টা মোটরসাইকেল চলাচল নিষেধ থাকবে।
এছাড়া অন্যান্য যন্ত্রচালিত যান ১৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত ১২টা থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে না। তবে, জাতীয় মহাসড়কে যান চলাচল করবে। একইসঙ্গে জরুরি পণ্য পরিবহন ও অন্যন্য জরুরি প্রয়োজন যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে সাংবাদিক, নির্বাচনি কর্মকর্তা, প্রার্থী, প্রার্থীর এজেন্টদের গাড়ি।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ধাপে মোট ২৬টি পৌরসভায় ব্যালট পেপারের মাধ্যমে এবং ৩০টি পৌরসভায় ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
যেসব পৌরসভাগুলোতে চতুর্থ ধাপে অর্থাৎ ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে, সেগুলো- ঠাকুরগাঁও সদর ও রানীশংকৈল; রাজশাহীর নওহাটা, গোদাগাড়ী ও তাহেরপুর; লালমনিরহাট সদর ও পাটগ্রাম; নরসিংদী সদর ও মাধবদী; রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ; বরিশালের মুলাদী ও বানারীপাড়া; শেরপুর সদর ও শ্রীবরদী; চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ; নাটোর সদর ও বড়াইগ্রাম; খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, বান্দরবান সদর; বাগেরহাট সদর; সাতীরা সদর। এছাড়া হবিগঞ্জের চুনারুঘাট; কুমিল্লার হোমনা ও দাউদকান্দি; চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ ও পটিয়া; কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, হোসেনপুর ও করিমগঞ্জ; টাঙ্গাইলের গোপালপুর ও কালিহাতী; পটুয়াখালীর কলাপাড়া; চুয়াডাঙ্গার জীবননগর ও আলমডাঙ্গা; ফেনীর পরশুরাম; চাঁদপুরের কচুয়া ও ফরিদগঞ্জ; মাদারীপুরের কালকিনি; নেত্রকোনা সদর; যশোরের চৌগাছা ও বাঘারপাড়া; রাঙামাটি সদর; মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম; শরীয়তপুরের ডামুড্যা; জামালপুরের মেলান্দহ; ময়মনসিংহের ফুলপুর; জয়পুরহাটের আক্কেলপুর ও কালাই; নোয়াখালীর চাটখিল; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া; লক্ষ্মীপুরের রামগতি; ফরিদপুরের নগরকান্দা এবং সিলেটের কানাইঘাট পৌরসভায়ও এদিন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বিগত তিনটি ধাপসহ চলমান পৌরসভা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সহিংস ঘটনার প্রোপটে নির্বাচন কমিশন (ইসি) চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে সংঘাত কমাতে নানা উদ্যোগও নিয়েছে। ডিসি, এসপি, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন নির্বাচন কমিশনাররা। সহিংসতার কারণে কালকিনি পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। অন্তত ১২টিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
অবশ্য ইসি আশা করছে, সামনের নির্বাচনগুলোতে বড় ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটবে না। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে এমন আশা প্রকাশ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য দুই কমিশনার। ওই অনুষ্ঠানে সিইসি কেএম নুরুল হুদা বলেন,‘আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি আছে। কমিশনের ব্যবস্থাপনার দিক থেকে যা যা দরকার, সেগুলো ঠিকঠাক করেছি। আমি আশা করি, এরপর থেকে ভোটগুলো সুষ্ঠু হবে, রক্তপাত হবে না।’
জানা গেছে, চতুর্থ ধাপের পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বিভিন্ন প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন। অনেক স্থানে আচরণ বিধি লঙ্ঘন ও সহিংস ঘটনা ঘটেছে।
গত ৩ জানুয়ারি চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করে ইসি। পরে সোনাইমুড়ি ও ত্রিশাল পৌরসভা এ ধাপে যুক্ত হয়। অপরদিকে হাইকোর্টের আদেশে নাটোর পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ফেনীর পরশুরাম পৌরসভায় সকল পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ায় এখানে ভোটের প্রয়োজন হবে না। জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভায় নির্বাচন কার্যক্রম বন্ধের পর ফের তা চালু হয়। এছাড়া সহিংস ঘটনায় মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার ভোট স্থগিত করে কমিশন। সব মিলিয়ে রবিবার ৫৫টিতে ভোট হতে যাচ্ছে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে কয়েকটি পৌরসভায় ভোট স্থগিত ও পরে চালু হয়েছে। এ কারণে সামষ্টিক পরিসংখ্যান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ইসির। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৫৫টি পৌরসভায় মেয়র পদে ২২১ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৭৩ জন ও সংরতি কাউন্সিলর পদে ৬১৮ জন প্রার্থী আছেন। এসব পৌরসভায় ৭৯৩টি ভোটকেন্দ্র ও ৪ হাজার ৮৮৭টি ভোটক রয়েছে। ভোটার আছেন ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৮ লাখ ৪২ হাজার ৯৪৫ জন ও নারী ৮ লাখ ৪৪ হাজার ১৫২ জন। তবে সংখ্যা কিছুটা হেরফের হতে পারে।
চতুর্থ ধাপের এ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রায় পুলিশের ১৬৭টি মোবাইল ও ৫৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, ১৬৭টি র্যাবের টিম, প্রত্যেক পৌরসভায় গড়ে দুই প্লাটুন বিজিবি ও উপকূলীয় এলাকায় প্রতি পৌরসভায় এক প্লাটুন কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ১২টি পৌরসভায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপে করতে নির্দিষ্ট হারের চেয়ে অতিরিক্ত র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ৫০১ জন নির্বাহী ও ৫৫ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকছেন। ভোটের দিন কেন্দ্রের পাহারায় অস্ত্রসহ ৩ হাজার ১৭২ জন পুলিশ সদস্য ও ৫ হাজার ৫৫১ জন আনসার সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন।