শাহ্ আলম ভূঁইয়া, প্রধান প্রতিবেদক, নান্দাইল আঞ্চলিক অফিস :
ভালোবেসে বিয়ে করে নগদ ৩০ লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার সহ সর্বস্ব খুইয়েছেন সৌদি প্রবাসী এক নারী! সৌদি আরবে অবস্থান করা অবস্থায় দু’জনের পরিচয়। সে সূত্র ধরে হয় প্রেম ও বিয়ে। আট মাস সংসার করার মধ্যে বিভিন্র অজুহাতে নগদ ৩০ লাখ টাকা সহ স্ত্রীর জমানো টাকা ও ১০ ভরি সোনার গহনা নিয়ে পালিয়ে দেশে আসে প্রতারক কথিত স্বামী। খবর পেয়ে সপ্তাহ পর স্ত্রী স্বামীর গ্রামের বাড়িতে এসে অবস্থান নিলে সেখানেই মারধরের শিকার হন। এ অবস্থায় রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। স্বামীর বাড়ির লোকজনের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে ওই নারী স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আলোচিত এই ঘটনাটি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের সুরাটি গ্রামের।
ওই নারীর সাথে কথা বলে ও তাঁর লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর উপজেলার মাইজবাড়ি গ্রামের মো. নূরুল ইসলামের কন্যা মোসা. নুরজাহান বেগম গত প্রায় ১৩ বছর আগে সৌদি আরবে যান কাজের সন্ধানে। সেখানে একটি মাদ্রাসায় ও একটি হাসপাতালে কাজ নেন। এর মধ্যে পরিচয় ঘটে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার দক্ষিণ জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের মো. জজ মিয়ার পুত্র সোহাগ মিয়ার (২৫) সাথে। পরিচয়ের একপর্যায়ে দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠলে ২০২০ সালের ৪ মে তাদের বিয়ে হয়।
ভুক্তভোগী নারী জানান, সংসার চলা অবস্থায় বাড়িতে ঘর করার কথা বলে ও বিভিন্ন অজুহাতে কয়েক দফায় স্বামী সোহাগ তাঁর কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নেয় বলে জানা যায়। গত ১৭ জানুয়ারি দু’জনের কর্মস্থলে চলে গেলে রাতে এসে ওই নারী দেখতে পান স্বামী সোহাগ মিয়া বাসায় আসেননি। পাঁচ ছয়দিন সৌদি পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে অনেক জায়গায় খোঁজাখুজি করেও তাঁর কোনো সন্ধান পাননি। এর মধ্যে সোহাগের এক মামা (সৌদিপ্রবাসী) সবুজ মিয়ার মাধ্যমে জানতে পারেন সোহাগ বাংলাদেশে চলে গেছে। এরমধ্যে বাসায় খোঁজ করে দেখতে পান তাঁর ড্রয়ারে থাকা রিয়েল ( নগদ প্রায় আড়াই লাখ টাকা ) ও সুকেসে থাকা বিভিন্ন সোনার গহনা (যার পরিমাণ প্রায় ১০ ভরি) নিয়ে চলে গেছে সোহাগ।
এ ঘটনার প্রায় ২০ দিন পর তিনি দেশে এসে সরাসরি স্বামীর গ্রামের বাড়িতে এসে উঠেন। সেখানে কথিত স্বামীর দেখা পেলেও স্ত্রী হিসেবে তাকে অস্বীকার করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় ওই প্রতারক। এরপর থেকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তিনি স্বামীর অপেক্ষায় শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করলে স্বামীর বাবা ও পরিবারের অন্যরা তাঁকে রবিবার গলাধাক্কা দিয়ে বের করার চেষ্টার পর ব্যাপক মারধর করে। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
পরদিন সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ওই নারী নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসা নিতে এসে ভর্তি হন।
নির্যাতিত মোসা. নুরজাহান বলেন, সরল মনে আমি বিশ্বাস করে এখন সবকিছু হারিয়েছি। আমি বাংলাদেশের সরকার ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
জানতে চাইলে নান্দাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ঘটনার সুত্রপাত সৌদি আরবে। তবে স্বামীর বাড়িতে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় ওই নারীর কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ নেওয়া হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে এ বিষযে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।