ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
জমির সঠিক মালিকানার থাকার পরও ত্রিশাল ভুমি অফিসের দায়িত্বহীনতা ও কথিত কাগজমুলে নামজারীর ঘটনায় পাচপাড়া গ্রামের আবদুল খালেকের পরিবার প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে হন্যে হয়ে ঘুরছে। ভুমি অফিসের মাস্টাররোল ভিত্তিক প্রভাবশালী পিয়ন শহীদ মিয়া এই নামজারীর মূলহোতা বলে অভিযোগ রয়েছে। পৈত্রিক ভিটিতে ঘর নির্মানে বাঁধার সম্মুখীণ হয়ে অন্যের ঘরে ঠাঁই নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে ওই পরিবার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাঁচপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল জলিলের দুই ছেলে আবদুল খালেক ও আবদুল বারেক। আবদুল জলিলের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে আবদুল বারেক পৈত্রিকসূত্র ও ১৬৪ নং বিআরএস মূলে প্রাপ্ত ১৩ শতাংশ জমি ১৯৮৭ সালে ছোটভাই আবদুল খালেকের কাছে সাফকাওলা দলিলমূলে বিক্রি করে ভিটে ছেড়ে অন্যত্র চলে যান।
প্রায় দুই যুগ পর দাদার ভিটিতে আসেন বারেকের ছেলে আনারুল ইসলাম। নিঃস্ব প্রায় আনারুলের আকুতিতে তার দাদার বাড়িতে দয়া করে থাকতে দেন স্বজনরা। আনারুল অনুগ্রহের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বহু অপকর্মের হোতা ত্রিশাল ভুমি অফিসের মাস্টার রুলে চাকুরীরত পিয়ন শহীদ মিয়ার সহযোগীতায় পৈত্রিক সম্পত্তির অংশ খোঁজতে শুরু করেন। খোঁজে পান বাবা আবদুল বারেকের নামে ৮ শতাংশ জমি ভুলক্রমে বিআরএস হয়েছে। বিআরএস এ উল্লেখিত ওই জমি ১৯৮৭ সালে চাচা আবদুল খালেকের কাছে বিক্রির সাফকাওলা দলিল দেখালেও ৮ শতাংশ জমি দখলে নিতে মরিয়া আনারুল।
আনারুল বিআরএস রেকর্ড দেখিয়ে খারিজ করার চেষ্টা করছে এমন তথ্য জানতে পেরে, ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর নামজারী, জমা খারিজ এবং দাখিলা না দেওয়ার জন্য ত্রিশাল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর আবেদন করেন আবদুল খালেকের ছেলে মোঃ মিলন মিয়া। আবেদনের ১২ দিন পর অর্থ্যাৎ ১২ নভেম্বর বাবার বিক্রিত ৮ শতাংশ জমি মাস্টার রুলে ত্রিশাল ভুমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা পিয়ন শহীদ মিয়ার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আনারুল, তার মা ও বোনসহ ৮জনের নামে খারিজ করে দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)। তার পরদিন (১৩ নভেম্বর) নামজারী ও জমা খারিজ বাতিলের জন্য পুণরায় আবেদন করেন মিলন মিয়া।
ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে এ বছরের ২৮ জানুয়ারি মিস কেস/ জমাখারিজ মোকাদ্দমার দিন ধার্য হয়। ওইদিন সাফকাওলা দলিল ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ উপজেলা ভূমি অফিসে হাজির হন মিলন মিয়া। সব ঠিকঠাক থাকলেও আনারুলের শ্যালক উপজেলা ভূমি অফিসে মাস্টার রুলে পিয়ন শহীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ত্রিশাল সহকারী কমিশনার (ভূমি) তরিকুল ইসলাম কাগজপত্র পর্যালোচনা বা তাদের কোন কথা না শুনেই মিলন মিয়ার আবেদন বাতিল করে। এমনকি সহকারী কমিশনার (ভূমি) তরিকুল ইসলাম তাদেরকে আদালতে গিয়ে সমাধানের কথা বলে অফিস থেকে বের করে দেন।
এরই মধ্যে আবদুল খালেকের বড় ছেলে চান মিয়া তার পুরাতন টিনসেট ঘরটি ভেঙে নতুন ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করলে খারিজের কপি নিয়ে ময়মনসিংহের বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে গত ১৪ মার্চ আনারুল বাদী হয়ে মিলন গংদের বিরুদ্ধে ফৌজধারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত থেকে কোন নির্দেশনা না আসলেও ত্রিশাল থানা পুলিশের মাধ্যমে ১৪৪ ধারা জারি করে চান মিয়ার ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন চান মিয়া। পৈত্রিক ভিটিতে ঘর নির্মানে বাঁধার সম্মুখীণ হয়ে অন্যের ঘরে ঠাঁই নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে ওই পরিবার।
এমন পরিস্থিতির জন্য ভূমি অফিসের অসহযোগিতা ও স্বেচ্ছাচারিতাই দায়ী বলে দাবি করছেন ভোক্তভোগির ছোট ভাই মিলন মিয়া। তিনি আরো বলেন, ত্রিশাল সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে আমার পিতার নামে জমা খারিজের জন্য তারিখ বিহীন একটি নোটিশ আসে। নোটিশ প্রাপ্তির পর উক্ত কার্যালয়ে হাজির হতে গেলে বলা হয় আনারুলদের নামে জমা খারিজ হয়ে গেছে। নোটিশের সাত দিনের মধ্যে কিভাবে জমা খারিজ হয়ে এ প্রশ্ন করলে ভূমি অফিস থেকে মিস কেস/ জমাখারিজ মোকাদ্দমা কথা বলে আমার সাথে তালবাহানা শুরু করে এবং আমার বাবার নামে সাফকাওলা দলিল থাকার পরও আনারুলদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মিস কেস/ জমাখারিজ মোকাদ্দমার খারিজ করে দেন। মিলন মিয়া বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের হস্তপে কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে মিলন গংদের দলিলপত্রাদি নিয়ে সহকারী কমিশনার (ভুমি) তরিকুল ইসলামের কাছে গেলে, তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, দলিল গ্রহিতা খারিজ না করলে, বিআরএসমূলে খারিজ হতে পারে। তবে দলিল প্রদর্শন করে উপজেলা ভুমি অফিসে মিস কেস/ জমাখারিজ মোকাদ্দমা করলে বিক্রিত জমির খারিজ টিকবে না।