কেন্দুয়ায় তানিয়াকে হত্যার অভিযোগ পরিবারের : একমাত্র কন্যাকে হারিয়ে শোকে পাথর মা-বাবা

প্রকাশিত: ৯:৫০ অপরাহ্ণ, মে ৬, ২০২১

মজিবুর রহমান, কেন্দুয়া ( নেত্রকোণা) প্রতিনিধি :
তানিয়া আক্তার। সে বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যা সন্তান। কিশোরী বয়স পার হওয়ার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে বাবার ঘর ছাড়ে। আর স্বামীর নির্যাতনে শিকার হয়ে মাত্র ৫ মাসের মাথায় লাশ হয়ে ফেরেন বাবার বাড়িতে।

এই নির্মম হত্যাকান্ডে একমাত্র কন্যা সন্তানকে হারিয়ে শোকে পাথর মা-বাবা। বোনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ ভাই জাহাঙ্গীর। হতবাক স্বজন-এলাকাবাসী। যার কথা বলছি তিনি হলেন নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের বাঘবেড় গ্রামের বুলবুল খাঁ’র কন্যা।

গত বছর ৭ ডিসেম্বর পারিবারিক সম্মিতে তানিয়াকে বিয়ে দেয়া হয় একই উপজেলার গন্ডা ইউনিয়নে মনকান্দা গ্রামের লিয়াজ উদ্দিনের ছেলে পুলিশ সদস্য শফিকুল ইসলাম বাবু’র সাথে। বর শফিকুল ইসলাম বাবু চাকুরী করেন পুলিশে।

তানিয়া ২০২১ সালে এসএসসি পরীার্থী ছিলেন। চাকুরীজীবি পাত্র পেয়ে বিয়ের প্রাপ্ত বয়স না হলেও তানিয়াকে বসানো হয় বিয়ের পিঁড়িতে। স্বামীর কর্মস্থল হবিগঞ্জের পুলিশ লাইন হওয়ায় বিয়ের পর তানিয়া স্বামী সাথে হবিগঞ্জে চলে যায়।

কর্মজীবী বর হওয়ায় বিয়ের সময় দেড় লাখ টাকা যৌতুক দিতে হয়। কিছুদিন পরেই আরো ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। এরপর পুলিশ জামাই জিকির তুলেন দামী মোটরসাইকেলের জন্যে। জামাইয়ের আবদার মিটানোর জন্য কিছুটা সময় চেয়েছিল শ্বশুর বুলবুল খা। এর পরেও নানা অজুহাতে তানিয়াকে নির্যাতন করতো স্বামী।

গত দেড় মাস আগে তানিয়াকে বেধড়ক মারপিট করে স্বামী শফিকুল ইসলাম। ঘটনাটি জানাজানি হয় উভয় পরিবারে। পরে উভয় পরে আত্মীয়-স্বজনরা বিষয়টি মিটমাট করে দেন। তবে চোর কি শোনে ধর্মের কাহিনী। কিছুদিন পর আবার সেই হোন্ডার জিকির তুলে। এদিকে জামাইয়ের আবদার মেটাতে সময় চায় শ্বশুর। কিন্তু তা মানতে চায় না জামাই।

এনিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকতো। এরমাঝে তানিয়ার স্বামী শফিকুল ইসলাম বাবু শ্বশুর-শ্বাশুরির সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। এঘটনায় তাদের সম্পর্কে আরো টানাপোড়ন ঘটতে থাকে।

গত ৩ মে দুপুরে স্বামী-স্ত্রী মধ্যে কথার কাটাকাটির একপর্যায়ে তানিয়াকে নিয়ে যায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে ৪ মে সন্ধ্যায় বাবার বাড়িতে তানিয়াকে সমাহিত করা হয়। তানিয়াকে হারিয়ে বাবা-মা শোকে পাথর হয়ে পড়েছে । নাওয়া-খাওয়া নেই। যাকে দেখে শুধু নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

দীর্ঘণ অপো করেও প্রতিবেদক কথা বলতে পারেনি তাদের সাথে। তানিয়ার পরিবারের লোকজন বলছে যৌতুকের চাহিদা মেটাতে না পাড়ায় স্বামী তাকে হত্যা করেছে। এদিকে স্বামীর লোকজন বলছে স্বামী-স্ত্রী কথার কাটাকাটির একপর্যায়ে তানিয়া আত্মহনন করেছে। তানিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তানিয়ার ভাই জাহাঙ্গীর কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বোনের বিয়ের সময় বরকে দেড় লাখ টাকা যৌতুক দেন। কিছুদিন পরে আবার দিতে হয় ২০ হাজার টাকা। এরপর দামী একটি মোটরসাইকেল কিনে দিতে তার বোনকে চাপ দেয়। আমিও তাকে জানিয়ে ছিলাম বৈশাখে ধান কেটে মোটরসাইকেল কিনে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু বাবু তা মানতে ছিলনা। একপর্যায়ে তাদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় বাবু।

মোটরসাইকেলের জন্য তার বোনকে নির্যাতন করে পরিকল্পিতভাবে তার বোনকে হত্যা করেছে। বোনে মূখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতে চিহ্ন ছিল। তার বোন হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান তিনি। তানিয়ার মামা আবুল কাশেম জানান, প্রায় দেড় মাস আগে তানিয়াকে খুব বেশি মারপিট করে বাবু। এসময় বাবুর মা বাসায় ছিলেন।

বিষয়টি আমরা জানার পর বাবুর আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে হবিগঞ্জে গিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করে দেই। তিনি আরো বলেন, তানিয়ার মৃত্যুর আগেরদিন রাতে স্বামীর মোবাইল ফোনে মায়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন।

তানিয়া শুধু তার মাকে এইটুকু জানিয়ে ছিল যে,’ মা তুমি আমারে আর মায়া ডাইক না, আমারেতো তোমরা বিয়ে দিয়ে অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করার জন্য এই কথা বলতে ওপর প্রান্তে লাইন খেটে দেয়া হয় বলে জানান তিনি। নিহত তানিয়ার স্বামীর বড় ভাই সেনা রাশেকুল হাসান খান বলেন,ঘটনার খবর পেয়ে হবিগঞ্জে গিয়েছিলাম।

ঘটনার দিন তারা স্বামী-স্ত্রী কথার কাটাকাটির একপর্যায়ে তানিয়া পাশে রুমে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আতহত্যার করে। পরে তাকে মেডিকেল নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে। নিহত তানিয়ার মামা আবুল কাশেম অভিযোগ করে বলেন, আমরা হত্যা মামলা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পুলিশ অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে।

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি এটি আত্মহত্যা ঘটনা।
এঘটনায় সদর থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।