জাহাঙ্গীর হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার, নকলা :
শেরপুরের নকলা পৌর এলাকার দড়িপাড়া মহল্লার মর্তুজ আলী (৪০) । একসময় ঠেলাগাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। সারাদিন ঠেলাগাড়ি চালিয়ে যা পেত তা দিয়েই খেয়ে না খেয়ে চলত মর্তুজ আলীর সংসার ।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজ সেই মর্তুজ আলীই এখন ভ্যানগাড়ির যাত্রী। যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে কংকালসার দেহ নিয়ে আজ সে মৃত্যুর পথযাত্রী।
নিঃস্ব, অসহায়, অসুস্থ্য মর্তুজ আলীকে ভ্যানগাড়িতে শুইয়ে তার একমাত্র স্ত্রী ও অবুঝ ৩ শিশু সন্তান সাহায্যের জন্য সারাদিন ছুটে বেড়ায় পৌরশহরের অলিতে গলিতে। কেউ মন চাইলে দু’একটি টাকা সাহায্য করে আর না চাইলে তো কথাই নেই। এ চলার যেন শেষ নেই মর্তুজ আলীর স্ত্রী-সন্তানের। কারণ বেঁচে থাকতে গেলে চাই দু’মুঠো খাবার। আর তাদের খাবার আটকে আছে ভ্যানগাড়ির চাকায়। চাকা ঘুরলে পেটে সামান্য কিছু পড়তে পারে আর না ঘুরলে তো পানি দিয়েই উদরপুতি।
এভাবেই অসুস্থ্য পিতার চিকিৎসা খরচ ও পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে স্ত্রীসহ মর্তুজ আলীর ৩ অবুঝ শিশু সন্তান। কিন্তু মর্তুজ আলীর অবুঝ শিশু সন্তানেরা জানেনা তাদের এ দুর্বিসহ জীবনের শেষ কোথায়।
নকলা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের দড়িপাড়া মহল্লার মৃত দিনমজুর কালু মিয়ার পুত্র মর্তুজ আলী। মাথা গুজার ঠাঁই ছাড়া আর কোন সহায় সম্বল না থাকায় মর্তুজের বড় ভাই মনসুর আলী (৫৫) ও ছোট ভাই জিয়ারুল (৩৫) দিনমজুরের কাজ করে দিনাতিপাত করে।
মর্তুজ আলীও দিনমজুরের কাজ করে ঠেলাগাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে তার দেহে বাসা বাঁধে যক্ষা। উপযুক্ত চিকিৎসা আর সঠিক পরিচর্যার অভাবে মর্তুজ আলী চলন শক্তি হারিয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ায় পরিবারে নেমে আসে অমাবস্যার ঘোর অন্ধকার।
পেটের ক্ষুধা সইতে না পেরে মর্তুজ আলীর স্ত্রী ৩ শিশু সন্তানকে নিয়ে মৃত্যু পথযাত্রী মর্তুজ আলীকে ভ্যানগাড়িতে শুইয়ে জীবিকার সন্ধানে মাঠে নামে। হাত পেতে যার কাছে যা পায় তা দিয়েই খেয়ে না খেয়ে চলছে তাদের জীবন।
এসব করতে গিয়ে অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে মর্তুজ আলীর ২ ছেলে সন্তানের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবন। মর্তুজ আলীর স্ত্রী-সন্তানেরা জানেনা তাদের এ দুর্বিসহ জীবনের শেষ কোথায়। ৩টি শিশু সন্তান জানেনা তাদের আর কোনদিন বিদ্যালয়ে ফেরা হবে কিনা। প্রকৃতি তুমি বড়ই নির্মম।