মজিবুর রহমান, কেন্দুয়া (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি :
আশ্রয়ন প্রকল্পের সারি সারি ঘরগুলো জালিয়া হাওড়ের সৌন্দর্য্য বাড়ালেও,থাকার মানুষ নেই। যারা আছেন তারাও যেন নেহাত ঠেকায় পড়ে আছেন। বিদ্যুৎ,বিশুদ্ধ খাবার পানি, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা,নিরাপত্তার অভাব ছাড়াও কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় কষ্টের কথা জানিয়েছে নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফরপুর ইউনিয়নের জালিয়া হাওড়ে ‘বড়তলা আশ্রয়ন প্রকল্প-১ ও ২’ এর বাসিন্দারা।
ওই আশ্রয়ন প্রকল্প দু’টির অধীনে ৮৫টি ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারের বসবাসের জন্য ১৭টি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। প্রতি ব্যারাকে ৫টি করে পরিবার থাকা ব্যবস্থা করা হয়। সুত্র জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করে আনুষ্ঠানিকভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্প স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা।
বর্তমানে ৮৫ পরিবারের মধ্যে প্রায় ৫০ টি পরিবার বসবাস করছেন। বাকিরা জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমিয়েছেন বিভিন্ন এলাকায়। উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়িত হলেও ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে আজও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। যেকারণে এই কাঠপোড়া রৌদ্রের তাপে বাসিন্দাদের চেহেরা পাল্টে যাওয়ার অভিযোগ তুলছেন তারা।
প্রতিটি ব্যারাকের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য একটি করে নলকূপ স্থাপন করা হয়েছিল। ওইসব নলকূপ দিয়ে বিশুদ্ধ খাবার পানির বদলে বের হয় ময়লা পানি। যেকারণে এই পানি খাওয়া তো দুরের কথা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যায় না। যেই বছর হস্তান্তর করে সেই বছরই ১৩ নং ব্যারাকটি ঝড়ো হাওয়ায় টিনের চাল উড়িয়ে ফেলে। ওই ব্যারাকটি মেরামত না করা ৫টি পরিবার আজো উঠতে পারেনি তাদের ঘরে। সমতল ভূমির থেকে তেমন উচ্চতা না হওয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে বন্যার পানি ওঠে। গত বছর বর্ষায় দু’টি প্রকল্পই পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। আর একটু বেশি পানি হলেই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঢুকবে ধারণা করছেন বাসিন্দারা। তাছাড়া আরো নানান সমস্যায় ভূগছেন বাসিন্দারা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০ নং ব্যারাকের ৩নং রুমের বাসিন্দা লিটন মিয়া জানান,আগে ঢাকা-সিলেট থাকতাম ভালই ছিলাম। এইখানে এসে ভাল নেই। আমাদেরকে বলা হয়েছিল বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেবেন। এখনতো ঘর ছাড়া কিছুই নেই। নিচু ঘরে থাইকা (থেকে) রৌদ্রে (রইদে) আমাদের চেহেরা পাল্টে যাইতাছে। বর্ষায় পানি ওঠে। ৯নং ব্যারাকের ২ নং রুমের বাসিন্দা মার্জিনা আক্তার জানান, আমাদের এইখানে বড় দুই সমস্যা হলো বর্ষাকালে ঘরে পানি ঢুকে আর গরমে শরীরির পুড়ে যাইতেছে। দুই হয়েছে আমরা এখানে এসেছি তখন থেকেই শুনছি বিদ্যুৎ (কারেন্ট) আসবে আসবে শুনছি কিন্তু আর আসে না। এই অসহ্য গরমে বাচ্ছা-কাচ্ছা নিয়ে থাকা কঠিন। গরমের কারনেই এই জায়গা থেকে যাইয়ামগা।
১১ নং রুমের ১ নং রুমের বাসিন্দা হাফিজা বেগম জানান, ঈদের সময় ভিজিএফ ১০ কেজি চাউলের সুবিধা ছাড়া কিছুই ঝুটে না তাদের কপালে। ছেলে-মেয়ে পড়া-শোনা নিয়ে খুবই চিন্তিত। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না। ঘর যেভাবে দিয়েছিল এখন আপনে আপনে ভেঙ্গে পড়ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন বলেও জানায় এই মহিলা। ১১ নং রুমের ৫ নং রুমের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কর্মসংস্থান না থাকায় অনেকেই বিভিন্ন দিকে চলে যাইতেছে।
৮৫ টি পরিরারের মধ্যে এখন মনে হয় ৫০ টি পরিবার আছে। প্রকল্পের সময় যে নলকূপগুলো বসায়েছিল এই নলকূপের পানি খাওয়া তো দুরের কথা অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা যায় না। অনেক দুরে থেকে আমরা খাওয়ার পানি আনতে হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর চৌধুরী ৫টি নলকূপ দেওয়াতে এখন পানি খাইতে পারি।
১৩ নং ব্যারাকটা যে বছর করছে সেই বছরই ঝড়ে ভাংছে এখনও ঠিক করার খবর নাই। এছাড়া আরো কয়েকটি ঘর ভাংছে ওইসব ঘরে রশি দিয়ে বেঁধে জীবনযাপন করতেছি। বর্ষার পানিতে তো হাবুডুবু খাওন লাগে। বিভিন্ন সমস্যার কারনে অনেকেই চলে যাচ্ছেন। এব্যাপারে নেত্রকোণা পল্লীবিদ্যৎ সমিতির কেন্দুয়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মুজিবুর রহমান জানান,এখন যেগুলো আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মিত হচ্ছে সেগুলোতে আমরা নিজ উদ্যোগেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে। আর ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হলে এককালীন নিদৃষ্ট পরিমান ডিপোজিট জমা দিতে হবে। এই উপজেলা প্রশাসনকে ২০২০ সালে ছিটি দেওয়া হয়েছিল কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.মইনউদ্দিন খন্দকার জানান,পল্লীবিদ্যুতের পত্র অনুযায়ী বরাদ্ধ চেয়ে উধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনেক টাকার ব্যাপার স্থানীয়ভাবে মেনেজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বরাদ্ধ না আসা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগসহ ঘর মেরামতের কাজ করা সম্ভব না।