আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের কথা ভাবতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে সুন্দর ব্যক্তিত¦, আদর্শ ও সুচিন্তিত ধ্যান-জ্ঞানে পরিপূর্ণ হয়ে একদিন সমাজকে পরিচালনা দান করতে পারে। বুদ্ধিমত্তা, কৌশল প্রয়োগ, সৃজনশীল কাজে পারদর্শী হয়ে দেশকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, এজন্য শিশুদের সুশিক্ষা দান করা একান্ত জরুরি। শিশুরা মুলত জীবন থেকে শিখে, ওরা খুব সহজ- সরল প্রানবন্ত, অনুকরণপ্রিয়, আবেগিক, কৌতুহলী, দূরন্ত প্রকৃতির, সত্যভাষী এবং স্নেহপ্রিয় হয়। তাই যত্ন নিয়ে, ভালোবেসে, কাছে টেনে নিয়ে সবসময় ভাল কিছু শিখানো দরকার। কারণ একটি শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ ও পরিপক্কতাই দেশের উন্নয়ন সাধন করতে পারে। পরিবারে, একটি সুন্দর ও নির্মল পরিবেশেই শিশু ভালোভাবে বিকশিত হতে পারে। তাই বলা যায় যে, শিশুর প্রাথমিক শিক্ষালয় পরিবার ও মা। মায়ের ভালোবাসা ও সখ্যতা ছাড়া শিশু জীবন গঠন করতে পারে না। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা বড়াবড়ই শিশুদের চারাগাছের সাথে তুলনা করতে পারি। শিশু ভ্রণও তাই গর্ভোজাত ।
মানব জীবন শুরু হয় কর্ম প্রক্রিয়ায় এবং সময়ের চলমান গতিধারায়। জীবনের ভিডিওটা যদি মজবুত হয় তাহলে শিক্ষার মূল বিষয়টিও হবে গ্রহণযোগ্য। তাই প্রত্যেক মানুষের জীবনে একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকা খুবই জরুরী । লক্ষ্যহীন জীবন বা কাজ কোনটাই ফলপ্রসূ হয় না। হ্যাঁ, এখানে একটি বিষয় বিষয় বলতে পারি যে, লক্ষ্যহীন জীবন যা মানুষকে মাঝিবিহীন নৌকার সঙ্গে তুলনা করা যায়। মাঝি ছাড়া নৌকা তার নির্দিষ্ট গতি পথ ধরে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। তাই সকলের উচিত জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা ।
প্রত্যেক মানুষই সত্যের অনুসন্ধানী হওয়া দরকার। স¦াধীন দেশের নাগরিক হিসাবে মুক্ত মনের অধিকারী হওয়া দরকার। একটি গণতান্ত্রিক স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করার অধিকার সকল নাগরিকরে থাকা দরকার। জনগণকে অবাধ তথ্য জানার অধিকার দিতে বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে তথ্য অধিকার আইন পাস করে। এ আইন মোতাবক সকল নাগরিক যেকোন অফিসে গিয়ে তথ্য জানতে পারে। এমন অনেক শিক্ষনীয় তথ্য থাকতে পারে যা মানুষের সব সময় দরকার হয়। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাদের এবিষয়ে সচেষ্ট হওয়া জরুরি। শিক্ষাই পারে মানুষ কে পূর্ণ নৈতিক ও আদর্শ চরিত্রের অধিকারী করে তুলতে। শিক্ষাগ্রহণ, মানুষকে শিক্ষিত করে তোলে এবং আলোর পথে পরিচালিত করে। হ্যাঁ এটা স্বীকার্য যে, কষ্ট না করলে কেষ্ট মিলে না – শিক্ষার কোনো বয়স নেই, তাই যে কেউ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। তাই সব সময় শিক্ষাকে সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখা দরকার।
সম্রাট নেপোলিয়ান বোনাপার্ট বলেছেন – “তোমরা আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাত্ত আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিব” মায়ের হাত ধরে যখন শিশু পদাচারণা করে তখন তারা অনেক অসহায় থাকে। মা হলেন শিক্ষার মাধ্যম। শিক্ষার কখনো শেষ বা মৃত্যু হয়না, শিক্ষা মানুষের উৎকর্ষসাধন করে এবং লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহার্য করে।
শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের আত্মœচেতনাবোধ জাগ্রত করে। মানুষের ভিতরকার সত্ত্বা তুলে ধরে জ্ঞান পিপাসু করে তোলে। তাই শিক্ষা এমনই এক জিনিস যা মানুষকে জ্ঞান, সাহিত্য, চিত্তের উৎকর্ষ সাধনসহ মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশের জন্য, চরিত্র গঠণ ও মানবীয় মূল্যবোধ তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করে তোলে।
শিক্ষা মানুষের চরিত্র গঠনে সবসময় বিশেষ অবদান রাখে। বিখ্যাত মনিষী এ্যরিস্টটল বলেছেন “হৃদয় গঠন ব্যতীত শুধু মনের গঠন প্রকৃত গঠন নয়।” শিক্ষার মাধ্যমেই এক জন ব্যক্তির হৃদয় গঠিত হয়। শিক্ষার মাধ্যমেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা যায়। এ শিক্ষাকে কার্যকর করে তুলতে ভাল পরিকল্পনা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষাক্রমের ধারণা, কৌশলগত পদ্ধতি প্রয়োগ করে গুণগত মান সম্মত নিশ্চিত করতে পারে। এর মধ্য দিয়েই জাতিকে শিক্ষিত ও প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষা – দীক্ষায় পারদর্শী করে তোলে ।
শিক্ষার মূল উপদান ৪টি (১)শিক্ষক (২) শিক্ষার্থী (৩) শিক্ষার পরিবেশ (৪) বিদ্যালয়। এ উপাদানগুলো যখন মানসম্মত হবে তখন শিক্ষার মানও ভালো হবে। যদি তার একটিও খারাপ বা মানসম্মত না হয় তখন ফলাফল তো খারাপ হবেই সেখানে সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, কর্মসূচি গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। তাই সামঞ্জস্য বিধান করতে শিক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক। জীবনের বাস্তবতা ও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ গ্রহণে শিক্ষার্থী তথা গোটা মানব সমাজ তৎপর ও অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে পারে।
লেখক পরিচিতি: প্রধান শিক্ষক, নলুয়াকুড়ি কুমারী মারীয়া নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভালুকা, ময়মনসিংহ।