ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
জ্ঞানবুদ্ধি হবার পর থেকেই আরিফ দেখে আসছে অকারনেই প্রতিনিয়ত তার মায়ের ওপর অমানবিক নির্যাতন করেন তার বদমেজাজী বাবা।
কলেজ পড়ুয়া ওই ছেলেটি বাবাকে বহুবার বুঝিয়েও ব্যর্থ হয়। বুধবারও ওই একই ঘটনার পুনঃরাবৃত্তি ঘটলে রাগে-ক্ষোভে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে আরিফ দা দিয়ে কুপিয়ে বাবা আলী হোসেন (৪৭) কে হত্যা করে। বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার মোক্ষপুর ইউনিয়নের মোক্ষপুর গ্রামে। ওই ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মোক্ষপুর ইউনিয়নের মোক্ষপুর গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে আলী হোসেন। প্রায় ২৫ বছর আগে একই উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের মাগুরজোড়া গ্রামের হালিমা আক্তারকে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পর থেকেই চুন থেকে পান খসলেই (অকারণে) কৃষক আলী হোসেন তার স্ত্রী হালিমার ওপর অমানবিক নির্যাতন করতেন। সন্তাদের স্কুলে না পাঠিয়ে ফসলের মাঠে কাজ করাতে চান। স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে, অনেক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে হালিমা তার বড় ছেলে আরিফ হোসেনকে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেন।
আরিফ গেল বছর পার্শ্ববর্তী ভালুকা উপজেলার ধলিয়া বহুলী উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছে। জ্ঞানবুদ্ধি হবার পর থেকেই কলেজ পড়–য়া ওই ছেলেটি দেখে আসছে অকারনেই প্রতিনিয়ত তার মায়ের ওপর অমানবিক নির্যাতন করেন তার বদমেজাজী বাবা। কলেজ পড়ুয়া ওই ছেলেটি ৫ সন্তানের জনক বাবা আলী হোসেনকে বহুবার বুঝিয়েও ব্যর্থ হয়।
বুধবার সকালে সন্তানরা ঘুম থেকে উঠতে দেরি করায় আলী তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকলে স্ত্রী হালিমা তার প্রতিবাদ করে। হালিমাকে বেদম মারধর করে আলী হোসেন। এতে হালিমার কপাল ফেটে চৌচির হয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। আরিফ ও তার এক চাচাত বোন, মাকে উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা শেষে পুরান ভিটে দাদার বাড়িতে নিয়ে যায়। সারাদিন নিজ বাড়ি ফেরেনি বলে সন্ধ্যার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে আবারও মারতে গেলে রাগে-ক্ষোভে ক্ষিপ্ত হয়ে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে বাবা আলী হোসেনকে রক্তাক্ত করে।
স্বজন ও প্রতিবেশিরা আলীকে উদ্ধার করে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আলী হোসেনের লাশ উদ্ধার করে ত্রিশাল থানা পুলিশ। এদিকে হত্যাকান্ডের পর বাড়ি থেকে গাঁ-ঢাকা দেয় আরিফ।
ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে নিহতের ভাই আবুল কাসেম বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে দুপুরে নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত আলী হোসেন বাড়ি গিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলে বুঝা যায়, স্ত্রীকে নির্যাতন ও সন্তানদের ওপর অত্যাচারের ফলে ওই হত্যাকান্ডে স্বজনদের মাঝে শোকের চাইতে ক্ষোভই বেশি বিরাজ করছে।
নিহতের ভাই, ভাতিজাসহ প্রতিবেশিরা জানান, খুবই বদমেজাজী ছিলেন আলী হোসেন। আরিফের মা তার বাবার অত্যাচার সহ্য করেও বহু কষ্টে আরিফকে এইচএসসি পাশ করাতে পারলেও বাকি চার সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে পারেনি। স্কুল থেকে বের করে এনে বইখাতা ছিড়ে ফেলে দিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই স্ত্রী হালিমাকে মারধর করতো আলী।
নিহতের স্ত্রী হালিমা খাতুন জানান, বিয়ের পর থেকেই আমার স্বামী আমার ওপর অমানবিক নির্যাতন করতো। বুধবার সকালেও আমাকে পিটিয়ে কপাল ফাটিয়ে দেয়, সন্ধ্যার দিকে আবারও মারতে গেলে, বড় ছেলে আরিফ মায়ের ওপর এমন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাবাকে দা’দিয়ে কোপায় করে।
এ ব্যাপারে ত্রিশাল থানার ওসি মাইন উদ্দিন জানান, ওপর অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রাগে-ক্ষোভে ক্ষিপ্ত হয়ে আরিফ দা দিয়ে তার পিতা আলী হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। আরিফ পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।