মোঃ মিজানুর রহমান আকন্দ (ফুলপুর, ময়মনসিংহ) :
ময়মনসিংহের ফুলপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে অপরিকল্পিত স্লুইস গেট নির্মাণ জনদুর্ভোগের ৭ বছরেও সুরাহা হয়নি।
জানা যায়, উপজেলার ফুলপুর ইউনিয়ন ও আশপাশ এলাকাকে বন্যা মুক্ত রাখার নামে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরাধীন পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৩ সনে জাইকার অর্থায়ন ও এলজিইডির বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দে বাখাই- বাঁশতলা সড়কের বাতিকুড়া গ্রামের বটখালি খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশনের জায়গায় ২৭ ফুট দৈর্ঘ্যরে ব্রিজসহ স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়।
এতে উজান থেকে পানি প্রবেশের জায়গায় বাধ নির্মাণ না করে উল্টো পানি বের হওয়ার পথে মাত্র ৫/৬ ফুট দৈর্ঘ্য প্রস্থের ৪টি গেট রাখা হয়। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর পরই ২০১৫ সনে নাকানন্দি ও কুড়িয়া নদীসহ উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি এসব স্লুইস গেটের ছিদ্র দিয়ে বের হওয়ার সংকুলন না হয়ে এলাকায় ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে অনেক রাস্তাসহ ভেঙে পানি বের হয়ে অপর একটি খালের সৃষ্টি করে। আগে এলাকাবাসি বাঁশের সাঁকো দিয়ে খাল পারাপার হতে পারলেও পরে তাও বন্ধ হয়ে যায়।
এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে গত ২০১৫ সনের ৩ আগস্ট ‘ফুলপুরে স্লুইস গেট নির্মাণে লুটপাটের অভিযোগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে ২০১৬ সনে প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ ২০ হাজার টাকার প্রকল্প ব্যয় বরাদ্দে আগের স্লুইস গেটে সংযুক্ত করে প্রায় ২৯ ফুট দৈর্ঘ্যরে অপর একটি স্লইস গেটসহ ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। এতে পানি বের হওয়ার জন্য ৫/৬ ফুট দৈর্ঘ্য প্রস্থের মাত্র ৩ টি গেট রাখা হয়।
পরের বছরও স্লুইস গেটের ছিদ্র দিয়ে পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে প্রায় ৫শ’ ফুট রাস্তাসহ ভেঙে অপর একটি খালের সৃষ্টি করে। ফলে এলাকবাসিকে রাস্তা ছেড়ে মাঠ দিয়ে খাল পারাপার হতে হচ্ছিল। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপির সহায়তায় ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম গর্ত ভরাটসহ স্লুইস গেটের সংযোগ সড়ক পুনঃনির্মাণ করেন। এতে জনদুর্ভোগ সাময়ীক লাগব হলেও কিছুদিন পর বন্যায় আবারও অনেক রাস্তা ভেঙে ভেসে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি করে।
এভাবে প্রতিবছরই বন্যায় রাস্তা নিশ্চিত ভাঙনের ফলে শুকনো মৌসুমে হালকা মেরামতের মাধ্যমে লোকজন যাতায়াত করছেন। বর্ষা মৌসুমে যানচলাচল বন্ধ রেখে নৌকায় বা হেটে পানি পেরিয়ে চলাচল করছেন। অপরিকল্পিত স্লুইচ গেট নির্মাণের ফলে এভাবেই চলছে বছরের পর বছর ধরে জনদুর্ভোগ। প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দের প্রকল্পটি এলাকাবাসির গলার ফাঁস হয়ে দাড়িয়েছে।
বাতিকুড়া গ্রামের সুরুজ আলী খাসহ অনেকেই জানান, শুধু অর্থের হরিলুট করতেই এ ধরনের প্রকল্প করা হয়েছে। ভেঙে ব্রিজ করে দিলেই আমাদের রক্ষা হবে। আব্দুল কাদির জানান, যান চলাচলে আধাকিলোমিটার দুরের পাকা রাস্তায় যেতে ৫ কিলোমিটার ঘোরতে হচ্ছে।
বাঁশতলা গ্রামের সিরাজ আলী জানান, এখন ভেঙে এক খালের পরিবর্তে তিন খাল হচ্ছে। আগে বাঁশের সাঁকোতে পারাপার হলেও এখন নৌকায় যেতে হচ্ছে।
ফুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, স্লুইস গেট সংক্রান্ত বিষয় হওয়ায় পাশে ব্রিজ বা স্লুইস গেটের ছিদ্রগুলো ভেঙে বড় করে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করারও বৈধতা মিলছে না।
বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে দীর্ঘদিন ধরে সুরাহার চেষ্টা করছি। উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মামুন-অর-রশিদ জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। অচিরেই কাজ শুরু হতে পারে।