রফিক বিশ্বাস, তারাকান্দা : প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবিলার পর তারাকান্দা উপজেলায় এখন আমন ধান কাটার ধুম। সঙ্গে ধান কাটা, মাড়াই এবং শুকানোর কাজ চলছে পুরোদমে। মাঠের সোনালি ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। তবে প্রত্যাশিত দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বছর আমন চাষে প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবিলা করতে হয়েছে কৃষকের। কিন্তু এখন আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নির্বিঘ্নে ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজ করতে পারছেন কিষান-কিষানিরা।
গড়পাড়া গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, সময়মতো কাজ শেষ করার জন্য বাড়ির নারীরা এখন সহযোগিতা করছেন। অগ্রহায়ণ মাসে গ্রামজুড়ে চলে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। এ সময়টায় গ্রামের মানুষ খুব ব্যস্ত থাকলেও নতুন ধানের ঘ্রাণে কোনো কাজে ক্লান্তি আসে না।
তারাকান্দা উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সব গ্রামেই এখন কিষান–কিষানিরা ধান কাটা আর মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত। তাঁদের দম ফেলার সুযোগ নেই। অনেক ঘরে চলছে নতুন ধানের পিঠা-পুলি তৈরির কাজ। এক দিকে শীতের আগমন, অন্যদিনে গ্রামগুলোতে চলছে নবান্নের উৎসব।
গোপালদারিকেল গ্রামের একটি মাঠে ধান কাটছিলেন পাঁচজন কৃষক। তাঁদের মধ্যে মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর এ সময়টা আমাদের জন্য খুব আনন্দের হয়। নতুন ধান ঘরে ওঠে, আত্মীয়রা বেড়াতে আসে। ধান কাটা শেষে আমরাও বেড়াতে যাই। নানা পদের পিঠা তৈরি হয়।’
পাশেই ধান কাটছিলেন কৃষক নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ধান কাটার কাজ পুরোপুরি শেষ না হলে বাড়িতে পিঠা তৈরি হয় না। এখন নারী-পুরুষ সবাই ধান কাটা, মাড়াই ও ধান সিদ্ধ করতে ব্যস্ত।’
রামগুলো ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠে সোনালি রঙের পাকা আমন ধান। কোনো কোনো খেতে কৃষক ধান কাটছেন। আবার কোনো কোনো খেতের ধান এখনো পুরোপুরি পাকেনি।’
আশ্বিয়া গ্রামের কৃষক কাইয়ুম তালুকদার বলেন, সকালের কুয়াশার মধ্যেই ধান কাটতে শুরু করেন। যতক্ষণ দিনের আলো থাকবে, ততক্ষণই কাজ করছেন।’ ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে বাড়ির নারী ও শিশুরাও ব্যস্ত রয়েছে বলে তিনি জানান।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ধান কাটার আনন্দের মধ্যেও কয়েক বছর ধরে শঙ্কায় দিন কাটাতে হচ্ছে কৃষকের। ধানের দাম কমে যাওয়ায় কষ্টের কাঙ্ক্ষিত সুফল তাঁরা পাচ্ছেন না। চলতি বছরও একই অবস্থা রয়েছে। জাত ভেদে প্রতি মণ ধান ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকার নির্ধারিত প্রতি মণ ধানের দাম ১ হাজার ৮০ টাকা।
চরপাড়া গ্রামের কৃষক হেলাল সরকার বলেন, ‘প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অগ্রহায়ণ মাসে পুরো ধান কাটা শুরু হলেও আগাম জাতের বিভিন্ন ধান কার্তিকের মাঝামাঝি সময়ে কাটা শুরু হয়েছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা বলেন, ‘এ বছর ১০টি ইউনিয়নে ২১ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় ভালো ফলন হয়েছে।’ এতে কৃষকেরা খুশি বলে জানান তিনি।