আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে শ্রীলঙ্কার এক নাগরিককে নির্মমভাবে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা করেছে একদল উন্মত্ত জনতা। শুক্রবার পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে রোমহর্ষক এই ঘটনা ঘটেছে বলে খবর দিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পাঞ্জাবের এই ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।
শিয়ালকোটের রাজকো ইন্ডাস্ট্রিজ নামের শ্রীলঙ্কার একটি কারখানার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন প্রিয়ান্থা কুমারা। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শুক্রবার তার কারখানায় হামলা চালায় একদল উত্তেজিত জনতা। সেখানে শত শত মানুষ তাকে প্রথমে বেধড়ক মারপিট, পরে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান প্রিয়াঙ্কা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শিয়ালকোটের ওয়াজিরাবাদ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শত শত মানুষ। এক পর্যায়ে তাদের এই বিক্ষোভে যোগ দেন প্রিয়াঙ্কার কারখানার কর্মীরাও। শত শত মানুষের এই বিক্ষোভ দেখে ভয়েই কারখানার ছাদে চলে যান তিনি। কিন্তু তাতেও রক্ষা হয়নি; সেখান থেকে তাকে টেনে-হেঁচড়ে নিচে নামিয়ে বেধড়ক মারপিট করা হয়।
অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের অনেকেই প্রিয়াঙ্কাকে নিচে নামিয়ে আনার সময় ব্লাসফেমিবিরোধী বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন। এ সময় অনেককে বলতে শোনা যায়, ‘তিনি (প্রিয়াঙ্কা) আজ পালাতে পারবেন না। এ সময় সহকর্মীরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও পারেননি। বরং তার পা ধরে টেনে-হেঁচড়ে ভবনের নিচে নেওয়া হয়।’
বিক্ষোভকারীরা লঙ্কান এই ব্যবস্থাপককে ভবনে নিচে নামিয়ে আনার পর কিল-ঘুষি, লাথি, পাথর নিক্ষেপ, লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তাকে হত্যা করে। পরে তার শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
শ্রীলঙ্কান নাগরিক প্রিয়াঙ্কা কুমারা গত ১০ বছর ধরে শিয়ালকোটের রাজকো ইন্ডাস্ট্রিজে কাজ করছিলেন। তাকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় শুরু হয়েছে।
শিয়ালকোটের পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, লঙ্কান মালিকানাধীন ওই কারখানার ভবন সংস্কারের সময় দেয়াল থেকে পুরোনো সব পোস্টার তুলে ফেলা হয়েছিল। সেখানে সম্ভবত নবী মোহাম্মদ (সা.) এর পোস্টারও ছিল। এই পোস্টার সরিয়ে ফেলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা কারখানায় হামলা চালিয়ে ব্যবস্থাপককে পিটিয়ে এবং পুড়িয়ে হত্যা করেছে।
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত অর্ধ-শতাধিক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে শিয়ালকোট পুলিশ।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান লঙ্কান নাগরিককে পিটিয়ে হত্যার এই ঘটনাকে পাকিস্তানের জন্য লজ্জাজনক একটি দিন হিসেবে অভিহিত করেছেন। একই সঙ্গে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
টুইটে তিনি বলেছেন, ‘আমি তদন্ত কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করছি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাকে আইনের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে ভুল হবে না। গ্রেফতার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
লঙ্কান পার্লামেন্টে নিন্দা
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে বলেছেন, ‘তিনি লঙ্কান ব্যবস্থাপকের ওপর নৃশংস এবং ভয়াবহ হামলায় হতবাক হয়েছেন। তার স্ত্রী এবং পরিবারের জন্য আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা এবং লঙ্কান জনগণ আত্মবিশ্বাসী যে, প্রধানমন্ত্রী (ইমরান খান) এই ঘটনায় জড়িত সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করতে তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন।
শ্রীলঙ্কার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ ফাস্ট বলছে, শনিবার দেশটির সংসদেও ওই ব্যবস্থাপককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানানো হয়েছে। সংসদে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতে পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।