কেন্দুয়ায় আম চাষেও সফল ওয়াসিম

প্রকাশিত: ৭:০৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ৫, ২০২১

কেন্দুয়া (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি :
নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় বৃক্ষপ্রেমিক ওয়াসিম এবার বাণিজ্যিকভাবে বারি আম-৪ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। চারা রোপনের প্রায় দেড় বছরের মাথায় আম তুলতে পেরে খুশি তিনি।

সুত্র জানায়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত দেশের প্রথম শংকর জাতের বারি আম-৪। দেশি নাবি জাত আশ্বিনার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রোরিডা থেকে সংগৃহীত রঙিন আমের সংমিশ্রনে উদ্ভাবন করা হয় বারি আম-৪ জাত। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৯৩ সালে বারি আম-৪ উদ্ভাবন করে।

২০০৩ সালে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে এ আমের চাষ শুর হয়। গত দেড় বছর আগে নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের ব্রাহ্মণজাত গ্রামে বৃক্ষপ্রেমিক হিসেবে পরিচিত আনোয়ার জাহিদ ওরফে ওয়াসিম প্রায় ২৫ শতক ভূমিতে বারি-৪ জাতের আমের চারা রোপন করেন। চারা রোপনের পর থেকেই ক্ষতিকর রাসায়নিক সার,বালাইনাশক,হরমোন ইত্যাদি বাদ দিয়ে নিরাপদ ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে তিনি জৈব পদ্ধতিতে আম বাগানে পরির্চযা শুরু করেন।

একই জমিতে আম চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন ধরনের রবি শষ্য ও শাক-সবজি উন্নতজাতের লেবুও উৎপাদন করছেন। আমের ফলন হয়েছে আশানুরূপ। বিক্রি করছেন ১০০ টাকা কেজি ধরে। প্রতিদিন ভোর হলেই লোকজন আম নিতে বাগানে এসে ভিড় করছেন। ওয়াসিম এলাকায় একজন বৃক্ষপ্রেমিক হিসেবে পরিচয় রয়েছে। তার রয়েছে মাল্টা বাগান, উন্নতজাতের ১২ বাসি আম বাগান,লেবুর বাগান।

তাছাড়াও প্রায় ১২০ শতক জমির ওপর তার বসতবাড়িটি যেন একটি ফলবাড়ি। প্রায় ১৭০ প্রজাতির ফলের গাছ রয়েছে তার বাড়িতে। এরমধ্যে ৪৫ প্রজাতির আম,৮৫টি কাঁঠাল,৮টি জাম, ৬টি কমলা, লিচু ৫টি, পেয়ারা ১০টি, ড্রাগন ৬টি, লটকন ৪০টিসহ পেঁপে, সুপারি, গোলাপ জাম, নারিকেল, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, ট্যাংফল, কামরাঙ্গা, অরবড়ই, নাশপাতি, কুল, তেঁতুল, ডেফল, চালতা, সফেদা, আশফল, বিলম্বু, আঙ্গুর, আনারস, কলা, বেল, থাই জাম্বুরা, করমচা, জামরুল, আমড়া, আনার, ডালিম, বেদানা, চেরিফল, মহুয়া ফল, রামভূটান, কতবেল, আমলকি, শরিফা, আতাফল,তৃর্ণ ফল,এভোকাডো ফল,করোসল ফল,বিভিন্ন প্রজাপতির আপেল, ট্রভেরী পেয়ারা,মালবেরী,বিভিন্ন প্রজাপতি আনার,পার্সিমন ফল ইত্যাদি।

তাছাড়া ভেষজ জাতীয় রয়েছে হরতকি, বহেরা,পাথরকুঁচি, ডায়াজেট, এ্যালোভেরা, পান বিলাপ, তুলসী, লজ্জাবতী, উলটকমল, আলোবোকেরা, লবঙ্গসহ নানা প্রজাপতির বনজ ও ঔষধি গাছও রয়েছে প্রচুর। ওয়াসিম বাবার একমাত্র ছেলে। লেখাপড়া শেষ করে কেন্দুয়া বাজারে ‘মেসার্স মল্লিক কৃষি কেন্দ্র’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ইতিমধ্যে ব্যবসায়ও বেশ সুনাম অর্জন করেছেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই ফলের গাছ লাগানো ও কৃষি কাজের প্রতি প্রবল শখ তার। এই শখেই তিনি এখন এলাকার একজন বৃপ্রেমিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।

ওয়াসিম জানান, দেড় বছর আগে প্রায় ২৫ শতক জমিতে বারি-৪ জাতের আম চাষ করেছিলাম। গাছ তেমন বড় না হলেও প্রচুর মূকুল ধরে ছিল। সম্প্রতি সময়ে হিটশকে প্রভাবে অনেক মূকুল ঝড়ে যায়। এরপরেও যে পরিমান ছিল তাতে ফলন ভালই হয়েছে। নিরাপদ ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে জৈব পদ্ধতিতে আম বাগানে পরির্চযা করেছি। আমে প্রচুর মিষ্ট হয়েছে। প্রতিটি আমের ওজন ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজন হয়েছে। ১০০ টাকা কেজি ধরে আম বিক্রি করছি। আম সুসাধু হওয়ায় ভালই চাহিদা হয়েছে। প্রতিদিন ভোর হতেই মানুষ আম নিতে বাগানে এসে ভিড় করে। এছাড়া আমার একটি বারমাসি আম,মাল্টা,লেবুর বাগান রয়েছে। আমার বাড়িতে ১৭০ জাতের দেশী-বিদেশী ফলের গাছ রয়েছে।

সারাবছর কোন না কোন ফল আমার বাড়িতে থাকে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ফল বিক্রি করে লাভাবান হচ্ছি। কেন্দুয়া উপজেলা সেচ্চাসেবক লীগের আহবায়ক জাকির হাসান বলেন,ওয়াসিমের বাগানের আম খেয়েছি। বাজারের আমের চেয়ে এই আমের স্বাদেই আলাদা।