মজিবুর রহমান, কেন্দুয়া (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি :
নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় বৃক্ষপ্রেমিক ওয়াসিম এবার বাণিজ্যিকভাবে বারোমাসি বারি আম-১১ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। চারা রোপনের প্রায় দেড় বছরের মাথায় আম তুলতে পেরে খুশি তিনি।
সুত্র জানায়,বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত নতুন জাতের আম বারি- ১১। এই জাতের আম গাছ সারাবছরই ফল দিবে। তাই বারি-১১ আমকে বারোমাসি জাতের আম নামকরণ করা হয়েছে। এই আমের ধরণটা লম্বাটে ( লম্বায় ১১.৩ সেমি ) হয়। আর প্রতিটি আমের গড় ওজন ৩০০-৩৫০ গ্রাম হয়।
বারোমাসি এই আম বাণিজ্যিক ভাবে চাষের উদ্যোগ নেন নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের ব্রাহ্মণজাত গ্রামে বৃক্ষপ্রেমিক হিসেবে পরিচিত আনোয়ার জাহিদ মল্লিক ওরফে ওয়াসিম।
গত দেড় বছর আগে প্রায় ৪০ শতক ভূমিতে নতুন জাতের বারি-১১ জাতের আমের চারা রোপন করেন। চারা রোপনের পর থেকেই ক্ষতিকর রাসায়নিক সার,বালাইনাশক,হরমোন ইত্যাদি বাদ দিয়ে নিরাপদ ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে তিনি জৈব পদ্ধতিতে আম বাগানে পরির্চযা শুরু করেন।
একই জমিতে আম চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন ধরনের রবি শষ্য ও শাক-সবজি এবং উন্নতজাতের বাঙ্গী উৎপাদন করছেন। আমের ফলন হয়েছে আশানুরূপ। বিক্রি করছেন ১৩০ টাকা কেজি ধরে। প্রতিদিন ভোর হলেই লোকজন আম নিতে বাগানে এসে ভিড় করছেন।
ওয়াসিম এলাকায় একজন বৃক্ষপ্রেমিক হিসেবে পরিচয় রয়েছে। তার রয়েছে মাল্টা বাগান, উন্নতজাতের বারি-৪ আম বাগান ও লেবুর বাগান। তাছাড়াও প্রায় ১২০ শতক জমির ওপর তার বসতবাড়িটি যেন একটি ফলবাড়ি। প্রায় ১৭০ প্রজাতির ফলের গাছ রয়েছে তার বাড়িতে। এরমধ্যে ৪৫ প্রজাতির আম,৮৫টি কাঁঠাল,৮টি জাম, ৬টি কমলা, লিচু ৫টি, পেয়ারা ১০টি, ড্রাগন ৬টি, লটকন ৪০টিসহ পেঁপে, সুপারি, গোলাপ জাম, নারিকেল, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, ট্যাংফল, কামরাঙ্গা, অরবড়ই, নাশপাতি, কুল, তেঁতুল, ডেফল, চালতা, সফেদা, আশফল, বিলম্বু, আঙ্গুর, আনারস, কলা, বেল, থাই জাম্বুরা, করমচা, জামরুল, আমড়া, আনার, ডালিম, বেদানা, চেরিফল, মহুয়া ফল, রামভূটান, কতবেল, আমলকি, শরিফা, আতাফল,তৃর্ণ ফল,এভোকাডো ফল,করোসল ফল,বিভিন্ন প্রজাপতির আপেল, ট্রভেরী পেয়ারা,মালবেরী,বিভিন্ন প্রজাপতি আনার,পার্সিমন ফল,শরীফা ফল ইত্যাদি।
তাছাড়া ভেষজ জাতীয় রয়েছে হরতকি, বহেরা,পাথরকুঁচি, ডায়াজেট, এ্যালোভেরা, পান বিলাপ, তুলসী, লজ্জাবতী, উলটকমল, আলোবোকেরা, লবঙ্গসহ নানা প্রজাপতির বনজ ও ঔষধি গাছও রয়েছে প্রচুর। ওয়াসিম বাবার একমাত্র ছেলে। লেখাপড়া শেষ করে কেন্দুয়া বাজারে ‘মেসার্স মল্লিক কৃষি কেন্দ্র’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ইতিমধ্যে ব্যবসায়ও বেশ সুনাম অর্জন করেছেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই ফলের গাছ লাগানো ও কৃষি কাজের প্রতি প্রবল শখ তার। এই শখেই তিনি এখন এলাকার একজন বৃক্ষপ্রেমিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
ওয়াসিম জানান, দেড় বছর আগে প্রায় ৪০ শতক জমিতে বারি-১১ জাতের আম চাষ করেছিলাম। গাছ তেমন বড় না হলেও আশানুরূপ মূকুল ও আম ধরেছে। আমার বাগানে ক্ষতিকারক কোন মেডিসিন বা সার ব্যবহার করিনা। নিরাপদ ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে জৈব পদ্ধতিতে আম বাগানে পরির্চযা করেছি। আমে প্রচুর মিষ্টতা আছে। প্রতিটি আমের ওজন ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম ওজন হয়েছে। ১৩০ টাকা কেজি ধরে আম বিক্রি করছি। আম সুসাধু হওয়ায় ভালই চাহিদা হয়েছে। প্রতিদিন ভোর হতেই মানুষ আম নিতে বাগানে আসে। তিনি বলেন, বারি-৪ জাতের আম বাগান করেছি। এ বছরে প্রথম ফলেছিল। আমে প্রচুর মিষ্টি হওয়ায় ২/৩ দিনেই মধ্যেই বাগানেই সব আম বিক্রি করেছি। এবার মাল্টাও ভাল ফলেছে। ১৫/২০ দিন পরে তা বিক্রি শুরু করবো। তার বাড়িতে ১৭০ জাতের দেশী-বিদেশী ফলের গাছ রয়েছে। সারাবছরই কোন না কোন ফল তার বাড়িতে থাকে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ফল বিক্রি করে লাভাবান হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি অফিসার শাহ জাহান কবীর বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত নতুন জাত বারি-১১ আম। এটি এমনি একটি আমের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে যা সারা বছর ফল দিবে। বারি আম ১১ বারোমাসি জাতের আম অর্থাৎ সারা বছরই ফল দেব। দেখবেন একই গাছে পাকা আম, ছোট আম ও মুকুলও আছে। এই আম যেই চাষ করবেন তিনিই লাভবান হবে। ওয়াসিম মাল্টা ও আম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন বলে তিনি জানান।