শাহ্ আলম ভূঁইয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক, নান্দাইল :
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার পাছমুশুল্লী গ্রামের মো.শফিকুর রহমান ৮ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করে রীতিমতো বাজিমাত করে ফেলেছেন। গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শফিকুর রহমান অবসর জীবনে পৈতৃক কৃষি জমিতে এ আবাদ করেছেন।
আমন ও বোরো চাষের মাঝামাঝি সময়টাতে পতিত জমিতে সরিষা চাষের একটি প্রচলন তৈরি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। যা সম্ভব হচ্ছে স্বল্প জীবনকালের ধান ও সরিষার জাত উদ্ভাবনের ফলে।ফলে একই জমিতে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন হচ্ছে।
এই পদ্বতি অনুসরণ করেই নিজের মেধা ও বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে শফিকুর রহমান প্রথমবার ৮ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করে বাজিমাত করেছেন। তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কৃষি অফিসসহ সবাইকে। কৃষি অফিসের পরামর্শ ছাড়াই তিনি সরিষা চাষ করে সফল হয়েছেন। সরিষা উঠিয়ে একই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করবেন বলে জানান তিনি।
আমন ধানের পরে পতিত জমিতে স্বল্প সময়ে সরিষার আবাদ করেন তিনি। ৮ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। প্রতিকূলতা সহিষ্ণু স্বল্প জীবনকালের উচ্চ ফলনশীল বিনা সরিষা-৯ এবং বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করেন এবং ভালো ফলনও পান তিনি।
প্রতি বিঘা জমি থেকে ৩-৪ মণ সরিষা উৎপাদনের আশা করছেন তিনি। রোপা আমন-সরিষা-বোরো শস্য এই শস্য বিন্যাসের মাধ্যমে তিনি সরিষা আবাদ করেন।বীজ বপনের ৮৫ দিনের মধ্যেই ক্ষেত থেকে সরিষা সংগ্রহ করা যায়।
প্রকৌশলী শফিকুর রহমান বলেন, বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধিতে সরিষার ভালো দাম পাওয়া, উন্নত জাতের কারণে স্বল্প সময়ে অধিক ফলনের পাশাপাশি খরচ ও স্বল্প পরিশ্রমের কারণে সরিষা চাষের সিদ্ধান্ত নেই। তাছাড়া বাজার ভালো থাকায় প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করা যায় তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা দরে। সরিষা আবাদে সময় ও সেচের প্রয়োজন কম হয়। আবার বীজের কোনো সমস্যা হয় না। সব মিলিয়ে কম খরচে বেশি লাভের জন্য সরিষা এখন সেরা ফসল।
সরেজমিন দেখা যায়, আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যে সরিষার ক্ষেতে শফিকুর রহমান বাড়ির কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে সরিষা কাটা-মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ সরিষা গাছ তুলছেন,কেউ আটি বাঁধছেন আবার কেউ বাঁধা আটি বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। বাড়িতে অন্যরা মাড়াই কাজে ব্যাস্ত। সরিষা নিয়ে এযেন এক মহা আনন্দ।
ক্ষেত থেকে সরিষা গাছ তুলছেন রিয়ান, মারিয়া, সজিব এবং সুমনাসহ অন্যরা। তারা জানায়, জেঠার খেতের সরিষা আমরা তুলছি। আমাদের খুব আনন্দ লাগছে।
শফিকুর রহমান আরও জানান, ৮ বিঘা জমি থেকে প্রায় ৩০ মণ সরিষা পাবেন বলে তিনি আশাবাদী। মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে সরিষা চাষ লাভজনক এবং তিনি নিজেকে সফল বলে মনে করেন।
প্রতিবিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা। প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করা যায় ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকা দরে। প্রতি বিঘাতে গড়ে ৩ মণ সরিষা উৎপাদন হলে বিঘা প্রতি ৬-৮ হাজার টাকা লাভ করা যায়।এছাড়া জমিতে সরিষার আবাদ করলে ওই জমিতে সরিষার পাতা পড়ে জমির খাদ্য চাহিদা অনেকাংশে মিটিয়ে থাকে।
সরিষার তেলের রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। সরিষার খৈল পশুখাদ্য ও জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধিও কাজে ব্যবহার হয়। সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
স্বল্প খরচ আর কম সময়ে সরিষা চাষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।নান্দাইলেও এর ব্যতিক্রম নয়। উন্নত জাতের সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন নান্দাইলের চাষিরা। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে সরিষা চাষ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. রেজাউল করিম জানান, এ বছর উপজেলার ১টি পৌরসভাসহ ১৩টি ইউনিয়নে ৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।সরিষার মধ্যে রয়েছে, টরি ৭,বারি ১৪, ১৭,বিনা ৪,৯ ও স্থানীয় সরিষা। গত মৌসুমে ৮৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছিল। কৃষি অফিসের তদারকি এবং কৃষকদের প্রনোদনা দেওয়ার কারণে এইবার ১০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ বেশি হয়েছে।
প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় ৬ শত কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণে বীজ সহায়তা হিসেবে ১২০ জন কৃষককে বীজ প্রদান করা হয়েছে। বীজ সহায়তার আওতায় আরো ২০০ জন কৃষককে বীজ প্রদান করা হয়েছে। তবে মো.শফিকুর রহমানের মতো ব্যক্তিগণ জায়গা পতিত না রেখে উনার মতো অন্যরাও কৃষি কাজে এগিয়ে এলে কৃষি ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক উন্নতি হবে বলে মনে করি।