মজিবুর রহমান, কেন্দুয়া (নেত্রকোণা) থেকে :
বল সুন্দরী কুল চাষ করে এলাকায় সাড়া জাগিয়েছেন কেন্দুয়া পৌরশহরের ভাটিরকোনা আইথর গ্রামের বাসিন্দা ও কেন্দুয়া বাজারের ব্যবসায়ী আবু হারেছ। প্রতিদিন তার কুল বাগান দেখতে উৎসুক মানুষ ভিড় করছে। তাক লাগানো ফল বল সুন্দরী কুলের হাসি এখন আবু হারেছের মূখে।
সরজমিনে ভাটিরকোনা আইথর গ্রামে গিয়ে জানা গেছে,আবু হারেছ কেন্দুয়া বাজারে একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। বাড়ির পেচনে তার নিজেস্ব ৩ একর জমিতে ২০১৫ সালে গড়ে তুলেছে মৎস্য ও গরুর খামার। ফিসারী পুকুর পাড়ে উন্নতজাতের বিভিন্ন ফল চাষ করছেন। সম্প্রতি ইউটিউব দেখে কমলা চাষে আগ্রহী হন। গত বছর মে মাসে চুয়াডাঙ্গা থেকে চারা সংগ্রহ ৩০ শতক জমিতে উন্নতজাতের কমলা ও বল সুন্দরী কুল চাষ করেন। চারা রোপণের ৮ মাসের মধ্যেই কুল গাছে ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। বল সুন্দরী কুল দেখতে ঠিক আপেলের মতো। ওপরের অংশে হালকা সিঁদুর রং। রসালো ও সুমিষ্ট একটি ফল। খেতেও সুস্বাদু। বাউকুল ও আপেল কুলের সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবিত এই কুল চাষে ঝুঁকছে সৌকিন ফলচাষীরা। আপেলের মতো বড় আকারের কুলগুলোর হাসি যেন হারেছের মূখে। গাছে ফলন হয়েছে ব্যাপক। হিমেল হাওয়ায় দুলছে গাছের পাতা আর ফল। গাছে পাতা থেকে ফল বেশি। প্রতিটি গাছে অন্তত ২৫/৩০ কেজি কুল ধরেছে। কুলের ভাড়ে গাছ মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। ফলন দেখে অন্যরাও আগ্রহী হচ্ছেন। ইতিমধ্যে অনেকেই কুল চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে হারেছের সাথে যোগাযোগ ও পরামর্শ নিচ্ছেন। প্রতিদিন বাগান দেখতে মানুষ ভিড় করছে। ৮০ টাকা কেজি দরে কুল বিক্রি করছেন। এদিকে গ্রামীণ জনপদে এধরণের ফলের বাগান গড়ে উঠলেও চোখে পড়ে না স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্তা ব্যক্তিদের। কৃষি উদ্যোক্তারা বা চাষীরা পায় না কোন পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের সুযোগ।
কৃষি উদ্যোক্তারা আবু হারেছ জানান, আমার ব্যবসার পাশাপাশি ২০১৫ সালে মৎস্য ও গরুর খামার গড়ে তুলি। পুকুর পাড়ে উন্নত জাতের আমসহ নানান ফলের গাছ রোপন করি। এগুলো গাছে ফল ধরেছে। ইউটিউব দেখে কমলাচাষে আগ্রহী হই। কমলার বাগান দেখতে গত বছর চুয়াডাঙ্গা যাই। সেখান থেকে গত বছর মে মাসে কমলার চারা পাশাপাশি বল সুন্দরী কুলের চারা এনেছি। কমলার বাগানে সাথী ফসল হিসেবে বল সুন্দরী কুল চাষ করি। বল সুন্দরী কুল এত ফলন হবে আগে তা ভাবতে পারিনি। জানুয়ারীর মাস থেকেই কুল বিক্রয় করছি। বল সুন্দরী কুল অনেক মিষ্টি। আমাদের গ্রামীণ বাজারে এত মিষ্টি বরই পাওয়া যায় না। বল সুন্দরী কুল চাষে তেমন ঝামেলা নেই। কীটনাশকও লাগে না। যেকেউ ইচ্ছা করলে এই ফলের বাগান গড়ে তুলতে পারবেন। কৃষকরা ধান চাষের চেয়ে কুল চাষে কয়েকগুণ লাভবান হবে। আগামীতে এই বাগানে কমলাও ফলবে এমন আশা প্রকাশ করছেন তিনি। তিনি ডাগন চাষের জন্য ইতিমধ্যে আরো ৩০ শতক জমি উপযুক্ত করেছেন। এতে খুব শিঘ্রই চারা রোপন করা হবে। তার এই বাগানে এ পর্যন্ত কৃষি বিভাগের কোন লোক যায়নি বলেও জানান তিনি।
আদর্শ ফল চাষী আনোয়ার জাহিদ মল্লিক জানান,গত বছর হারেছ ভাই সহ আমি ও নাজমুল হক নামে অল্প পরিসরে বল সুন্দরী চাষ করি। ইনশাল্লাহ ব্যাপক ফলন হয়েছে। এই ফলটি খুবই মিষ্টি ও সুস্বাধু থাকায় চাহিদা রয়েছে। এই ফল চাষে অনেকেই আগ্রহী দেখাচ্ছেন। ইতিমধ্যে কয়েকজন জমি উপযুক্ত করে ফেলছেন। আমাদের এলাকার বল সুন্দরী কুল আগামীতে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশে বিভিন্ন শহরে ও বাজারে যাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। এসব কৃষি উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ সরকারি সহযোগিতা ফেলে কেন্দুয়ায় ফল বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো.শাহজাহান কবীর জানান, বল সুন্দরী কুল কেন্দুয়ায় কেউ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন তা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।