শাহ্ আলম ভূঁইয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক, নান্দাইল :
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশুল্লী ইউনিয়নের পাছমুশুল্লী গ্রামের মো.শফিকুর রহমান শখের বশে কৃষি ভিত্তিক বই পড়ে ও ইউটিউব দেখে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবার ১বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে রীতিমতো কৃষি অফিসসহ সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শফিকুর রহমান অবসর জীবনে পৈতৃক কৃষি জমিতে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।
আমন ও বোরো চাষের মধ্যবর্তী সময়ের ফসল হিসেবে পতিত জমিতে তিনি সূর্যমুখী ফুলের বাগান করেন। সূর্যমুখী চাষের পর একই জমিতে তিনি বোরো-২৯ জাতের ধান রোপন করবেন।
সূর্যমুখী বাগানে সারি সারি লাগানো ফুলগাছ। হলুদ ফুল আর সবুজ গাছের অপরূপ দৃশ্য। দেখলেই দুচোখ জুড়িয়ে যায়। সবুজ পাতার ভেতর থেকে মাথা উঁচু করে প্রকৃতিতে নিজের সৌন্দর্য জানান দিচ্ছে সূর্যমুখী ফুলগুলো। ইতোমধ্যে নান্দাইল সহ আশপাশে এলাকার ভ্রমণপিপাসু মানুষের পছন্দের স্থানে পরিণত হয়েছে এই বাগানটি।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রকৃতির মাঝে নিজের সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিচ্ছে সূর্যমুখী ফুলগুলো। সবুজ গাছে ফুটে আছে শত শত সূর্যমুখী ফুল।প্রতিনিয়ত মিষ্টি হলুদ রঙের সূর্যমুখী দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর- দূরান্ত থেকে আসছেন অনেকে। মিষ্টি হলুদ রঙে সূর্যমুখী ফুলগুলো যেন মনোমুগ্ধকর এক অসা নান্দনিক প্রকৃতিকে সাজিয়েছে।
স্থানীয় সংবাদকর্মী সহ উৎসুক জনতা সূর্যমুখী ফুলের বাগানের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার পর প্রতিনিয়ত দর্শনার্থী ও সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ বাগানটিতে এসে ভিড় করছে। বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিমায় সূর্যমুখী ফুলকে পাশে নিয়ে, কেউ কেউ গোটা পরিবার পরিজন নিয়েও এসে ছবি তুলছেন।
সূর্যমূখী বাগানের মালিক প্রকৌশলী মো. শফিকুর রহমান বলেন,২০১৮ সালে চাকরি থেকে অবসর নেই। তারপর থেকেই গ্রামের বাড়িতে ঘনঘন আসা যাওযা শুরু করি। এ সুযোগে পৈত্রিক জমিতে কৃষিকাজে নিজেকে নিয়োজিত করি। আর তাই বই পড়ে ও ইউটিউব দেখে শখের বশে সূর্যমুখী চাষ করেছি। আগামীতে আরো বেশি করে সূর্যমুখী চাষ করবো আশা রাখি।
তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চীনের আমদানি হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী চাষ করেছি। বীজ বপন করেছি ৮০০ গ্রাম। প্রতিটি গাছে ফুল এসেছে। ফলনও হয়েছে চমৎকার। একদিকে যেমন ফুলের সৌন্দর্য মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অপর দিকে এ ফুলের বীজ বেঁচেও লাভবান হওয়া যায়। সে চিন্তা মাথায় রেখে তিনি এ বাগান করেছেন বলে জানান।
নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দু’বার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। বীজ বপনের ৬২ দিনের মাথায় প্রথম ফুল এসেছে বাগানে। ১১৫ দিনে মাড়াই করতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন। তাঁর সর্বসাকুল্যে খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধী অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সূর্যমুখীর তেল। এটি অন্যান্য সাধারণ তেলের চেয়ে একটু আলাদা। কোলেস্টেরলমুক্ত প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়াতে অনন্য ভূমিকা রয়েছে। রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চেয়ে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ। সূর্যমুখী তেল হাড় সুস্থ ও মজবুত করে। শরীরের ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কপারের চাহিদা পূরণ করে।
ভিটামিন ‘ই’ সমৃদ্ধ এ তেল শরীরের নানা রকম ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। সূর্যমুখী তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ দূর করে। এক কথায় সূর্যমুখী তেল মানব দেহের মহৌষধ হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।
এক মণ বীজে প্রায় ১৮ কেজি তেল পাওয়া যায়। সূর্যমুখী ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়।
মো. শফিকুর রহমান জানান, স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শ ছাড়াই সূর্যমুখী আবাদ করেছি। বিক্রির ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হবে। তবে বিক্রি করতে না পারলে নিজেরা তেল বানিয়ে ফেলব।
সূর্যমুখী বাগান দেখতে আসা আবু সাঈদ নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘সূর্যমুখী ফুল চাষ হয়েছে পাঁচ মুশুল্লী গ্রামে। খবর পেয়ে আমি দেখে এসেছি। ফুলে ফুলে আচ্ছাদিত বাগানটি দেখে মন ভরে গেল। কয়েকজন ভ্রমণপিপাসু ছাত্রী জানান, কিশোরগঞ্জ থেকে তারা এসেছেন বাগানটি দেখতে। অসংখ্য ছবি তুলে তারা অনেক আনন্দ উপভোগ করেছেন।
নান্দাইল উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, নান্দাইলে সূর্যমুখী ফুল চাষের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামীতে সূর্যমুখী চাষ বৃদ্ধি পাবে।
নান্দাইল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো.রেজাউল করিম বলেন, এবছর নান্দাইলে ১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে।পাছমুশুলী গ্রামের শফিকুর রহমান সূর্যমুখী চাষ করেছেন।সবগাছে ফুল এসেছে। আমরা কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেব। সূর্যমুখী ফুলের বীজ বিক্রির জন্যও সহায়তা করা হবে।