সাইফুল ইসলাম তালুকদার, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা :
দাম লিটার প্রতি ৩৮টাকা বৃদ্ধি করার পরও ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ভোজ্য তেল সয়াবিনের সঙ্কট কাটেনি। ঈদের ১৫দিন পূর্ব থেকে ভোক্তা ও বিক্রেতাদের মাঝে তেলের মূল্য নিয়ে বাক বিতন্ডার মাঝে উচ্চ মূল্যে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছিল। ১লিটারের বোতলের গায়ে ১শ ৬০টাকা লেখা থাকলেও বিক্রি হচ্ছিল ১শ ৮০ থেকে ১শ ৯০টাকায় এবং ৫লিটারের বোতল ৭শ ৬০টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছিল ৮শ টাকায়। এমতাবস্থায় ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসন ঈদের আগের দিন বিভিন্ন বাজার ঘুরে বোতলের গায়ের নির্ধারিত রেটে তেল বিক্রির নির্দেশ দেন। গায়ের রেট অনুযায়ী তেল বিক্রির পর থেকে বাজারের তেলের সংকট দেখা দেয়। সারা বাজার ঘুরে ভোক্তারা বোতল জাত ১ লিটার তেলও খোঁজে পাচ্ছেননা।
উপজেলা সদর চর হোসেনপুর গ্রামের গৃহিণী ফেরদৌস আরা বলেন, চারদিন ধরে দোকানে দোকানে ধর্না দিয়েও কোথাও এক লিটার তেল পাচ্ছিনা। সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে দিনের রান্না বান্না তেল ছাড়া কোনটাই সম্ভব নয়।
ঈশ্বরগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট মনোহারী ব্যবসায়ী বাবলু সাহা ও মহেশ রায় জানান, সয়াবিন তেলের ব্যবসা নিয়ে আমরা মহা বিপদে আছি। নতুন রেট অনুযায়ী ১লিটার তেলের দাম নির্ধারন করা হয়েছে ১শ ৯৮টাকা। খোলা তেল প্রতি লিটারের মূল্য নির্ধারন করা হয়েছে ১শ ৮০টাকা। পাইকারী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ১লিটার খোলা তেলের বর্তমান বাজারদর ১শ ৮৪টাকা যা সরকারী রেটের চেয়েও ৪টাকা বেশি। এমতবস্থায় সরকারী রেট অনুযায়ী খোলা তেল বিক্রি করা সম্ভব নয়। অপরদিকে বাজারে বহুল প্রচলিত তীর ব্র্যান্ডের বোতলজাত তেলের সাথে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির আটা, ময়দা, চা-পাতা ইত্যাদি পণ্য সামগ্রী ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। বোতলের সাথে এসব পণ্য সামগ্রী ক্রেতাকে দিতে চাইলেই ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মাঝে বাক বিতন্ডের সৃষ্টি হচ্ছে। বাজার তেলের এই অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যবসায়ীরা খোলা তেল বিক্রি করতে সাহস পাচ্ছেন না। ফলে বাজারে তেলের সঙ্কট আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে।
অপর এক ব্যবসায়ী জীবন চাকলাদার জানান, আমার দোকানে গত ১০দিন ধরে কোন প্রকার সয়াবিন তেল নেই। বিভিন্ন কোম্পানির এসআরদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেও কোন সাড়া পাচ্ছি না।
ঈশ্বরগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবু বকর ছিদ্দিক দুলাল ভুঁইয়া জানান, সয়াবিন তেল দৈনন্দিন জীবনে একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। তেল ছাড়া রান্না বান্না একেবারেই অচল। এক সপ্তাহ ধরে বাজারে তেল না থাকায় ভোক্তারা পড়েছেন মহাবিপাকে। জন দূর্ভোগ লাঘবে জরুরী ভিত্তিতে বাজারে তেল সরবরাহে সরকারী পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
এব্যাপারে সিটি গ্রুপের স্থানীয় ডিলার শাহিন মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ২০ দিন ধরে আমার গুদামে তেল নেই। কবে নাগাদ তেল পাবো কোম্পানি থেকে কিছু জানানো হয়নি। এমনও হতে পারে এক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।
বসুন্ধরা সয়াবিন তেলের স্থানীয় ডিলার ওমর ফারুক জানান, নতুন রেট অনুযায়ী কোম্পানির কাছে তেল চেয়ে মাত্র ২টন তেলের বরাদ্দ পেয়েছি বলে কোম্পানি থেকে জানানো হয়েছে। বাজারে তেলের জন্য হাহাকার চলছে। আমার কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ টন তেল প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে যে বরাদ্ধ পেয়েছি তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। বারাদ্ধকৃত তেল কবে নাগাদ পাওয়া যাবে তাও বলা যাচ্ছে না।
ফ্রেশ সয়াবিন তেলের স্থানীয় ডিলার দুলাল মিয়া জানান, নতুন বাজার দর অনুযায়ী ৫ টন তেলের জন্য ব্যাংকে ডিডি করেছিলাম। নেটওয়ার্ক বিপর্যয়ের কারণে কোম্পানিতে ডিডি পাঠানো সম্ভব হয়নি। কোম্পানিকে ডিডি পাঠানোর পর ডিও ইস্যু করতে সপ্তাহখানেক সময় লেগে যেতে পারে। এমতাবস্থায় আরও ১৫ দিন কেটে গেলে হোটেল-রেস্তোরাঁ বাসা বাড়িতে রান্না বান্না কিভাবে চলবে এ নিয়ে খোদ প্রশাসনসহ সাধারন মানুষের মাঝে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাঃ হাফিজা জেসমিন জানান, সরকারী ভাবে মূল্য নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই। পাইকারী বাজারে খোলা তেল সরকারী রেটের চেয়ে বেশির বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।