শাহ্ আলম ভূঁইয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক, নান্দাইল থেকে :
ময়মনসিংহের নান্দাইলে বিভিন্ন বাজারে খড়ের আঁটির হাট বসেছে। আমন মৌসুমে বর্তমানে ধান কাটা শুরু হয়েছে। আর কৃষকরা এই ধানের খড় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলার কানারামপুর বাজারে ধানের খড় বিক্রি করতে এসেছেন কুতুবপুর গ্রামের আবু বকর সিদ্দিক (৫০) ও গালাহার গ্রামের রাসেল মিয়া (৩৫)। এতে কৃষকদের মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির হাঁসি। সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন কৃষকেরা।
প্রতিটি ছোট খড়ের আঁটি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।বড় খড়ের আটি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। প্রতিদিন ১শ থেকে ২শ খড়ের আঁটি বিক্রি হয়। আর প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ হাজার টাকার খড়ের আটি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে কৃষক। এক মাসে প্রায় ৭০ হাজার টাকার খড় বিক্রি করছেন কৃষক আবু বকর সিদ্দিক ও রাসেল মিয়া।
কৃষক আবু বকর সিদ্দিক বলেন,‘এ বছর ৫০ শতাংশ জমিতে আমন ধান লাগাইছি।এই জমি থেকে প্রায় ৮শ খড়ের আঁটি পাইছি। প্রতিটি আটি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছি।এই পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার খড় বিক্রি করে অনেক লাভবান হইছি। আরো প্রায় ১০ হাজার টাকার খড় বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি জানান। ’
গালাহার গ্রামের কৃষক রাসেল মিয়া বলেন, ‘এবছর খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা অনেক লাভবান। খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় ধান চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এই পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার মতো খড় বিক্রি করছি।’
সরেজমিন উপজেলার কানারামপুর, বীরকামট খালী, হাটশিরা, দেওয়ানগঞ্জ, খারুয়াসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, কৃষক বাজারে ভ্যানগাড়ি করে খড়ের আটি নিয়ে বিক্রি করছেন। গরুর খামারি ও কৃষক এই খড় কিনে নিচ্ছেন।
উপজেলার বীরকামট খালী দক্ষিণ বাজারে কথা হয় কৃষক নূরুল ইসলাম ও মিলন মিয়ারসাথে। তারা জানান,খড় বিক্রি করে অনেক লাভবান হয়েছেন।
কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, আমি ৯ হাজার টাকার খড় বিক্রি করছি। একই গ্রামের মিলন মিয়া ৮ হাজার টাকার খড় বিক্রি করেছেন। এই খড় বিক্রি করেই আমাদের ধান চাষের খরচের টাকা উঠছে। তাই এখন ধানের চেয়ে খড়ের কদর বেশি।
তিনি বলেন,অথচ কয়েক বছর আগে খড়ের কোন মূল্যই ছিলনা।ক্ষেত থেকে নিয়ে যেত অনেকেই।ক্ষেতেই পচে নষ্ট হতো। এখন খড় কেউ আর বিনামূল্যে দিতে রাজি না। খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা ধান চাষে লাভবান।’
কৃষক মোশারফ হোসেন,মোতালেব বলেন, ’আমরা আমন ধান কাটার পর ক্ষেতেই খড় বিক্রি করছি।এক কাঠা জমির খড় ১ হাজার টাকা বেচছি। ’
উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ২২ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, ‘চলতি আমন মৌসুম আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এবছর খড়ের চাহিদাও অনেক বেশি। আর তাই দামও বেশ চড়া। কৃষকেরা এখন ধানের খড়ের প্রতি খুবই যত্নশীল হয়েছেন। অনেকে খড় বিক্রি করেই ধান চাষের খরচ তুলছেন। এখন তারা ধান চাষে আরও বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।’