স্টাফ রিপোর্টার : এ বছর ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলার আমন ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬ লক্ষ ৪ হাজার ৫৬২ হেক্টর জমি। কিন্তু চাষ করা হয়েছে ৬ লক্ষ ৫ হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমি এবং আবাদি জমির অগ্রগতি ১০০.২%। এছাড়াও ৪ হাজার ৮৬১ হেক্টর অনাবাদি জমিতে ফল বাগান ও সবজির চাষ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
রোপা আমনের আবাদ ময়মনসিংহে হাইব্রিড ১৫ হাজার ৫০০ হেক্টর, জামালপুরে ২৮ হাজার ২৫০ হেক্টর ,শেরপুরে ৩৪ হাজার ৮৩২ হেক্টর এবং নেত্রকোনায় ৯ হাজার হেক্টরসহ মোট চার জেলায় ৮৭ হাজার ৫৮২ হেক্টর জমি। উচ্চফলনশীল (উফশী) ধান চার জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো মোট ৪ লক্ষ ৪৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমি এবং স্থানীয় পর্যায়ে ৬৯ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমি। ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর এবং নেত্রকোনায় এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন মোট হাইব্রিড ১ লক্ষ ৪ হাজার ৬৪ হেক্টর, উচ্চফলনশীল ৪ লক্ষ ৪০ হাজার ২৪৭ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ৬১ হাজার ৫৪৩ হেক্টর জমি।
রোপা আমন ধানের জাতসমূহ নিয়মিত বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ অঞ্চলে নিচু থেকে মাঝারি নিচু জমির পরিমাণ মোট জমির শতকরা ২০ ভাগ। বর্ষাকালে আকস্মিক বন্যায় সম্পূর্ণ তলিয়ে যায় এবং এর মেয়াদ সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহ হয়। ফলে ধানের ফলন বন্যার তীব্রতা ভেদে আংশিক থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকগণ নতুন বীজতলা তৈরি করে অথবা পুরাতন বীতজলার বয়স্ক চারা রোপণ করে থাকেন। দ্বিতীয়বার চারা রোপণে কৃষকের অর্থ ও শ্রম যেমন ব্যয় হয় তেমনি দেরিতে রোপণে ফলনও কম হয়। অনেক কৃষক চারার অভাবে কিংবা আর্থিক সংকটে পড়ে চারা রোপণ করতে পারেন না, ফলে তাদের জমি পতিত থেকে যায়। প্রতিবছর সরকারের একটি বিরাট অংকের টাকা কৃষি পুনর্বাসনে খরচ হয়ে থাকে। বন্যার পানিতে ডুবেও বেঁচে থাকার ক্ষমতাসম্পন্ন উচ্চফলনশীল ধানের জাত এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম। তাই অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাথে যৌথ সহযোগিতায় Stress Tolerant Rice for Africa and South Asia (STRASA) প্রকল্পের আওতায় বন্যার পানিতে ডুবেও বেঁচে থাকতে পারে এমন ধানের জাত ‘ব্রি ধান৫২’ উদ্ভাবন করেছে। এ জাতটিতে বন্যার পানিতে ডুবন্ত অবস্থায় বেঁচে থাকার বৈশিষ্ট্য বা জীন সাব১ ((SUB1 ) বিদ্যমান রয়েছে। ফলে এটি বন্যার পানিতে কমপক্ষে ১৪ দিন পর্যন্ত ডুবে থেকেও হেক্টর প্রতি ৪ টন ফলন দিয়ে থাকে। বন্যা না হলে জাতটি স্বাভাবিক ফলন হেক্টর প্রতি ৪.৫-৫.০ টন প্রদান করবে। তবে এই বিভাগে এ বছর আকস্মিক বন্যা না হওয়া এবং আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকায় আমন জাতের ধান চাষে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অবদান রাখছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামানিক বলেন, সরকার যেহেতেু কৃষিবান্ধব তাই কৃষিতে ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার আধুনিকীকরণের মাধ্যেমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, কৃষিমেলা ও প্রদর্শনী এবং আমনসহ অন্যান্য শস্যের উপরে সরকার প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। সামগ্রিকভাবে বিদেশি পিঁয়াজের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে এবং সংকট মোকাবিলায় বীজ ও সার সরবরাহ বাড়ানো এবং প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
অতিরিক্ত পরিচালক আরও বলেন, ময়মনসিংহ অঞ্চলের অনাবাদি চরাঞ্চলে বালুর পরিমাণ যেখানে অনেক বেশি সেখানে জৈব সারের কীট তৈরি করে মাটি চাষের উপযোগী করা হচ্ছে। সেখানে মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া ও চিনা বাদামের ফলন বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়াও পাহাড়ী এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে পানির স্বল্পতা থাকায় অন্যান্য ফলন বাড়ানো যায় না বলে সেখানে ভূট্টা চাষ বাড়ানোর পদ্ধতি নিয়ে পরিকল্পনা আছে। কারণ ভ্ট্টুা চাষে পানির পরিমাণ কম লাগে।
অনাবাদি জমিতে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গ্রীন ম্যানুরিং করা হচ্ছে। যেখানে ধৈঞ্চা চাষ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে তাতে করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে। হাওর ও চরাঞ্চলে যে সমস্ত জায়গা খালি পরে আছে সেখানে রবি শষ্য ফলন বৃদ্ধির গবেষণা চলছে। বিভিন্ন মৌসুমে কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আগাম সবজির ফলন বাড়াচ্ছে। যেমন: রঙিন ফুলকপি, গ্রীন তরমুজ।
উল্লেক্ষ্য এ মৌসুমে ময়মনসিংহ বিভাগে বোরো ও আউশ ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। ময়মনসিংহ অঞ্চল বরাবরই কৃষিতে দেশের খাদ্যের বড় একটা যোগান দিয়ে থাকে।