ফুলবাড়িয়ায় ঘুষ না দেয়ায় ১ হাজার ফলদ গাছ কেটে সাফ করে ফেললো বনবিভাগ
বাসন্তি রেমার পর এবার শাহিদার কপালটাও পুড়লো
কবীর উদ্দিন সরকার হারুন, ফুলবাড়িয়া :
গরিব ঘরের ম্যাইয়া আমি, কালো বইলা বাবা মায় বিয়া দেয় পাশের গ্রামের রফিকুল মিয়ার সাথে। স্বামীর সংসারে যাবার পর থেকেই আমার উপর চলে নির্যাতন, একটা ছেলে হওনের পর আর অত্যাচার সইতে না পাইরা ১৮ বছর আগে কোলের পোলাটা লইয়া স্বামীর বাড়ি থেইকা ফিরা আসি বাপের বাড়ি সন্তোষপুরে।
জীবনে বহু কষ্ট কইরা একবেলা খাইয়া না খাইয়া আমি থাকছি । সরকারের বন বিভাগ থেইকা কিছু জমি সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী হিসাবে পাইছিলাম।
সেই জমিতে শরীরের রক্ত পানি কইরা সরকারের গাছ যেমন আগলাই রাখছি তেমনি নীজের সংসার চালাইতে শবজি, ফলমূলের আবাদ কইরা আমার একমাত্র পোলা শাহজানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াইছি। পোলার দিকে চায়া আমি আর বিয়া করি নাই।
মানুষ আমার সততায় দুই বার আমারে ওয়ার্ড সদস্য নির্বাচিত করেছে। আমি কোনদিন অন্যায় করি নাই, অন্যায় পশ্রয় দেই নাই।
ফরেষ্টর আশরাফুল আলম খান আমারে কয়েক বছর ধইরাই ৫০ হাজার টাকা দিতে বলতাছে, আমি দিতে রাজি হই নাই, গতকাল শনিবার সকালেও টাকা চাইছে মোবাইলে আমার কাছে সে, আমি টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় শনিবার বিকেলেই আমার সামনেই ফলদ গাছ গুলো তার লোক দিয়ে কেটে ফেলে। আমি কত কাকুতি মিনতি করেছি।
তবুও কলা ও পেপে গাছ গুলো কেটে সয়লাব করে। আমার লাখ টাকার ক্ষতি করছে সে, আমার জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন টুকুও শেষ করলো ভাই আমি এর বিচার চাই। অশ্রু সিক্ত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন শাহিদা আক্তার (৪০)।
বনবিভাগ বাসন্তী রেমার কলা বাগান শেষ করার পর এবার শাহিদা আক্তারে ১ হাজার ফলদ কলা পেপে বৃক্ষ কেটে সয়লাব করে দিল ফরেষ্টর।
৫০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়ে না পাওয়া আক্রোশে বিনা নোটিশে চোখের পলকে প্রায় ১ হাজার ফলদ গাছ কেটে সাফ করে ফেলেছে ।
এমন অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার নাওগাও ইউনিয়নের সন্তোষপুর বনবিট তথা বন কর্মকর্তা আশরাফুল আলম খানের বিরুদ্ধে।
গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার নাওগাঁও ইউনিয়নের ৭,৮,৯নং ওয়াার্ডের সংরতি মহিলা আসনের নারী ওয়ার্ড সদস্য শাহিদা আক্তার সন্তোষপুর বন বিভাগের সামাজিক বনায়নের আওতায় উপকার ভোগী হিসেবে ১০ কাঠা জমিতে আনারস, কলা, পেঁপে আবাদ করে আসছিলো।
পাশাপাশি সামাজিক বনায়নের গাছ লাগানো ছিলো তার জমিতে। অভিযোগ উঠেছে গতকাল শনিবার বিকেলে বন কর্মকর্তাসহ সহকারিদের সাথে নিয়ে দা দিয়ে অতর্কিতভাবে শাহিদার বাগানে প্রবেশ করে এবং এলোপাথাড়ি কুপিয়ে কমপে এক হাজার গাছ কেটে সাফ করে ফেলে বাগানের।
তিগ্রস্থ শাহিদা আক্তার দাবি করেন, ২০১২ সালে তার প্লট থেকে সরকারি এলটমেন্টে গাছ কাটার পর সামাজিক বনায়নের নতুন চারা লাগানোর পাশাপাশি সে তার জমিতে পেপে,আনারস,কলার আবাদ করেন।
কয়েক বছর ধরেই সস্তোষপুর বনবিট কর্মকর্তা আশরাফুল আলম খান শাহিদাকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন এই বলে যে, প্রতি মৌসুমে কমপে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ না দিলে ফল গাছের চারা লাগানোসহ ফলের চাষ করতে দেবে না বন বিভাগ ।
শাহিদা বন কর্মকর্তার কথায় রাজি না হওয়ায় গতকাল শনিবার বিকেলে ফরেষ্টরের সহায়তায় বন বিভাগের লোকজনসহ বাগানের সমস্ত গাছ কেটে সাফ করে ফেলে নিমিষেই।
গাছ কাটার পর বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার পাশাপাশি বন কর্মকর্তা শাহিদার বিশ্ববিদ্যালয় পড়য়া ছেলে শাহজাহানসহ পরিবারের সকল সদস্যদের বন মামলায় জড়ানোর হুমকি ও দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ করেন শাহিদা।
এ ঘটনায় পুরো এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টির পাশাপাশি গ্রামের মানুষের মধ্যে বন মামলার হুলিয়ার আতংক বিরাজ করায় রোববার দুপুরে নাওগাও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে শাহিদাসহ স্থানিয় এলাকাবাসী কালুর বাজারে মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বিনা নোটিশে ফরেষ্ট অফিসের এই ন্যাক্কার জনক ঘটনাটি সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন সরকারের কাছে ।
শনিবার সকাল থেকে শাহিদার বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে আসা বিল্লাল মিয়া অভিযোগ করেন, আমিসহ আরেক জন মিলা শাহিদা আফার জমিনে নিরানির কাজ করতে আছিলাম।
বিকাল দিকে ফরেষ্টর কয়েকজন লোক নিয়া আাইসা এই জমিনের গাছ কুবাইতে (কোপাতে) থাকে। আমরা কিছু বললে বলে কোন কথা বলবি না।
চোখের সামনে গাছগুলারে কাইটা শেষ কইরা ফেলাইছে।
নাওগাও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই বিট অফিসার আসার পর থেকে প্রতিটা সামাজিক বনায়নের উপকার ভোগীর কাছ থেকে টাকা পয়সা ঘুষ নিতো।
টাকা নিয়ে এমন অনেক প্লট আছে যাদের জমিতে কোন গাছ খুজে পাবেননা আপনি, মানে লাগায়নি । গতকাল বিকেলে যে তান্ডব ফরেষ্টর চালিয়েছে তা দেখে আনি হতবিম্ব।
শাহিদা শুধু একজন কৃষক নয় বরং আমার ইউনিয়নের একজন সংরতি মহিলা আসনের ওয়ার্ড সদস্য বটে তাই অবিলম্বে বনবিভাগের কাছে তার ফসলের তিপূরণ দাবি করছি এবং ফরেস্টরের অপসারনসহ দৃষ্টামূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে সস্তোষপুর বিট অফিসার আশরাফুল আলম খান কে মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি এবং বিভাগী বন কর্মকর্তার মুঠোফোন নম্বর চাইলে তিনি নম্বর না দিয়ে উত্তপ্ত হয়ে পড়েন।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, এই সংবাটি আমি আগে শুনিনি তবে বনের জায়গায় কেউ কোন ফসল করতে চাইলে তার উদ্ধারের জন্যে বন বিভাগ সকল ব্যবস্থাই নিতে পারে।