মতিউর রহমান সেলিম, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
দূর থেকে চোখে পড়ে ধানের সোনালী শীষের ভূবনে কনক্রিটের সেতু। এ যেনো ধানের ক্ষেতে সেতু! ত্রিশ লাখ টাকার কনক্রিটের সেতু নির্মিত হলেও দুই পাশের সংযোগ কোনো রাস্তা নেই। সেতুর দুই পাশেই ধানের ক্ষেত। এমন এক সেতুর দেখা মিলেছে ময়মনসিংহের ত্রিশালে।
যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করতে নদী বা খালের ওপর নির্মিত হয় কনক্রিটের সেতু। যা ব্যবহার করে উপকৃত হয় সকল শ্রেণির মানুষ। অথচ সড়ক না থাকলেও উপজেলার আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের নারায়নপুর গুজিয়াম গ্রামে একটি সেতু নির্মিত হয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের পাশেই ডুসের খালের ওপর নির্মিত হয়েছে কনক্রিটের ওই সেতুটি।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের অর্থায়নে নির্মিত হয় একটি সেতুটি। উপজেলার আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের নারায়নপুর গুজিয়াম গ্রামের তাজুল খলিফার বাড়ির পাশে ডুসের খালের ওপর ওই সেতু নির্মানে ব্যয় হয় প্রায় ৩০ লাখ ৩ হাজার টাকা।
চলতি বছরের ২০ মে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বাস্তবায়নে নির্মিত ওই সেতুর উদ্বোধন করেন স্থানীয় সাংসদ হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন মাদানী। সেতুটিতে লাগানো ফলক থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে দেখা মিলে বানার নদীর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ডুসের খালের ওপর নির্মিত সেতুটির। সেতুর কাছে যাওয়ার কোন রাস্তা না পেয়ে স্থানীয় রুস্তম আলী নামে এক ব্যক্তির বসতবাড়ির উঠোন হয়ে যেতে হলো সেতুটিতে।
দুর থেকে বুঝা যায় ধান ক্ষেতের মাঝখানে যেন ঠাঁই দাড়িয়ে একটি সেতু। কাছে গিয়েও সড়কের কোন অস্তিত্ব চোখে পড়েনি। সেতুর পূর্ব পাশের প্রবেশপথ জুড়ে লাউ গাছের গুঁড়ি। যানবাহন বা মানুষের চলাচলের কোন চিহ্ন না পাওয়া গেলেও স্থানীয় মোজাম্মেল হোসেন নামে এক কৃষক সেতুটির পশ্চিম দিকে সড়কের অবস্থান দেখাতে গিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললেন, ওই সিম গাছের গুঁড়ির নিচ দিয়েই আছে রাস্তা।
স্থানীয় আবুল কালাম, ইসমাইল হোসেন, রুস্তম আলী ও আবুল হোসেনসহ অনেকে জানান, কৃষিপন্য বাজারজাত করতে রাস্তা ও ব্রিজ দুইটাই জরুরি। কিন্তু চলাচলের রাস্তা ছাড়া ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওই সেতু তাদের কোনো কাজেই আসছে না।
স্থানীয় আমিরাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান ভুট্টো বলেন, সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও রাস্তা করা যায় নি। রাস্তার জন্য প্রকল্প জমা দেয়া আছে।
সড়কহীন সেতু নির্মাণের বিষয়টি জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, চলতি মৌসুমের ধান কাটা শেষ হলেই সেতুর দু’পাশে রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি ত্রিশালে যোগদানের আগেই ওই প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। সরেজমিন ওই সেতু আমার দেখা হয়নি। তবে সড়কহীন সেতুর কোন প্রয়োজন ছিলনা।