স্টাফ রিপোর্টার :
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেছেন, সিটি হিসাবে ১২তম হলেও সুন্দর আধুনিক ও টেকসই উন্নয়নের দিক দিয়ে এক নম্বরে যেতে চাই। জনগণের চাহিদা অনেক, দ্রুত ও টেকসই উন্নয়নে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে শুণ্য থেকেই উঠতে চাই। বর্তমান সরকারের লমাত্রা পুরণে আন্তরিকভাবে চেষ্ঠা করব। কেউ কারচুপি, অপচয়, অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের (মসিক) অবকাঠামো উন্নয়নে এক হাজার ১৫৭৫ কোটি টাকার বড় প্রকল্পের অনুমোদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মেয়র টিটু এ সব কথা বলেন।
সিটি কর্পোরেশনের শাহাব উদ্দিন মিলনায়তনে ১৪ ডিসেম্বর সোমবার শহীদ বুদ্ধিজীবিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, রাস্তা প্রসস্তকরন, ড্রেনেজব্যবস্থা উন্নয়ন, ২০তলা নগরভবন নির্মান, বাসট্যান্ড, ট্রাক টার্মিনাল, বর্জব্যবস্থা, কবরস্থান, শশনঘাট, বিনোদন পার্ক, শিশু পার্কসহ বিভিন্ন উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহন করছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন।
তিনি আরো বলেন, এ বৃহৎ প্রকল্পটি ২০২৪ সালে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি বলেন, ময়মনসিংহের সার্বিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত আন্তরিক। আগামী দিনে ময়মনসিংহের আরও উন্নয়নের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক মনোভাবও রয়েছে। নতুন এই সিটির কাজগুলো ভালোভাবে সম্পন্ন করার জন্য তাকে (মেয়র টিটু) নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
মসিক মেয়র জানান, জনগনের চাহিদা ও গণদাবি পুরণে সংবাদকর্মীদের ভুমিকা ছিল। তাই ২০১৮ সালে দেশের ১২তম ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন সম্প্রসারিত এলাকায় উন্নয়নের কোনো ছোয়া পড়েনি। নগর উন্নয়ন কর্তৃপরে সাথে মাস্টারপ্লান ও পরিকল্পনা করে টেকসই উনন্নয়নে কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
নাগরিকসেবা নিশ্চিতে সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডে সমহারে উন্নয়ন করা হবে। নগর ভবন সম্পর্কে তিনি বলেন, নগরীর কাচা বাজার সংলগ্ন এলাকায় ২০ তলা নগর ভবন নির্মাণে ড্রইং, ডিজাইন এক মাসের মধ্যে পাশ হবে। এর পরই নগর ভবন নির্মাণে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হবে।
তিনি আরো জানান, বিশাল এই বৃহৎ প্রকল্পটি সল্প সময়ে প্রদান করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সিটি এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত নগরী গঠনে সহায়ক হবে। এ জন্য নগরীর দখল হয়ে পড়া খালগুলো উদ্ধার করে নান্দনিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে। খাল উদ্ধার সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় খাল উদ্ধারে চলতি বছরের শুরুতেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। করোনার কারণে তা আটকে গেছে। সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণের মাধ্যমে যানজট অনেকটা নিরসন হবে এবং উন্নততর যোগাযোগ গড়ে উঠবে। সড়ক নর্দমা উন্নয়ন, সংস্কার ও রণাবেণ ব্যবস্থাকে দ, কার্যকরকরণ এবং মান নিয়ন্ত্রণসহ যান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য অনেকটা হ্রাস পাবে।
মেয়র আরো বলেন, একটি পরিচ্ছন্ন নগর উপহার দিতে রাত্রীকালীন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেয়া হয়। আগামী জানুয়ারী থেকে এই রাত্রীকালীন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরো জোরদার করা হবে। মডেল হিসাবে প্রথমমত কয়েকটি ওয়ার্ডকে বেছে নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে পুরো এলাকায় রাত্রীকালীন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেয়া হবে। রাত্রীকালীন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু থাকার পরও কতক নগরবাসি দিনে দুপুরে যেভাবে খুশি সেভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলছে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা দখল করে নির্মাণ সামগ্রী এবং ফুটপাত অবৈধভাবে দখলে রেখেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ অবৈধদের উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
নগরীর দুটি বাস্ট্যান্ডের কারণে সৃষ্ট যাানজট সম্পর্কে তিনি বলেন, পাটগুদাম ব্রীজ মোড়ের যানজট নিরসনে বৃহৎ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ব্রীজমোড়ের বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে সম্প্রসারিত এলাকার চায়না মোড়ের কাছে (চায়না মোড়- শম্ভুগঞ্জ পুরাতন বাসস্ট্যান্ড) বাসস্ট্যান্ড করা হবে। এছাড়া ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড সরানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।
হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্সসহ ৫টি সেবা অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে। ঘরে বসেই তারা সেবা নিতে পারছে। এতে নাগরিকদের হয়রানী অনেকাংশে কমে এসেছে। করোনা প্রতিরোধে নানা কার্যক্রম এবং করোনাকালীন সময়ে অসহায়, অভাবগ্রস্থ এবং দিন এনে দিন খাওয়া লোকজনদের মাঝে এক হাজার মেঃ টন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া নিজস্ব তহবিল থেকে ৭০ হাজার মানুষকে খাদ্য (চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য) বিতরণ করা হয়েছে।
করোনার দ্বিতীয় ধাপ মোকাবেলায় সিটি কর্পোরেশনের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে বলেও তিনি জানান। মেয়র আরো বলেন, সিটি কর্পোরেশনের প থেকে আগামীদিনের দেশ গড়ার কারিগর মেধাবী শিার্থীদের আরো বিকশিত করতে সংবর্ধনা ও অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে। সবেেশষে মেয়র ইকরামূল হক টিটু নগরবাসির দীর্ঘ প্রত্যাশা পুরণে অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও সাংবাদিকদের সহযোগীতা কামনা করেছেন।
মেয়র টিটু আরো বলেন, পানীয় জলের সমস্যা নিরসনে ১৩টি গভার নলকুপসহ ২৪ কিমি পানির লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ২৪ কিমি সড়কে ৮ হাজার ৭শত এলইডি লাগানো হয়েছে। একই সাথে শিা নগরী ময়মনসিংহের বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় যাত্রী ছাউনি, কয়েকটি সড়কে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির ল্েয বৃরোপন করা হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ রফিকুল ইসলাম মিঞা জানান, ১৫৭৫ কোটি ব্যয়ে নগরীর ২শত কিমি সড়ক কার্পেটিং, পৌনে ৩ শত কিমি আরসিসি সড়ক নির্মাণ, সাড়ে ৬ কিমি সিসি সড়ক নির্মাণ, ৩২০ কিমি আরসিসি ড্রেন নির্মাণ, ১০ কিমি আরসিসি পাইপ ড্রেন নির্মাণ, আড়াই কিমি সড়কের ফুটপাত নির্মাণ, সোয়া ১৪ কিমি পাইপ ড্রেনসহ ফুটপাত নির্মাণ, ৩৮ কিমি সড়কের রিটেইনিং ওয়াল/আরসিসি প্যালাসাইডিং নির্মাণ, সোয়া কিমি সড়কের রোড ডিভাইডার নির্মাণ।
এ ছাড়াও ৩টি ব্রিজ নির্মাণ, ১৩টি কালভার্ট নির্মাণ এবং নগরীর বিভিন্ন সড়কের ওপর ৬টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া রাস্তা নির্মাণের সাথে স¤পৃক্ত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও মেশিনারিজ কেনা হবে। এসব যন্ত্রপাতির মাধ্যমে গুণগত মানসম্পন্ন নির্মাণকাজ করা যাবে। এ ছাড়াও যন্ত্রপাতি ভাড়া দিয়ে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আয় সম্ভব হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, সচিব রাজিব কুমার সরকার, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ রফিকুল ইসলাম মিঞা, জনসংযোগ কর্মকর্তা শেখ মাহাবুল হোসেন রাজীব, প্যানেল মেয়র-২ আলহাজ¦ মাহবুবুর রহমান দুলাল, প্যানেল মেয়র-৩ শামীমা রহিম সহকারী সচিব আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, খাদ্য ও স্যানিটেশন কর্মকর্তা দীপক মুজমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।