কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারী অনুষদের মেডিসিন কনফারেন্স হলে মানবদেহ ও প্রাণি সম্পদের ব্রুসেলোসিস রোগ: মলিকুলার নির্ণয়. চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণ কর্মশালা (Livestock and Human Brucellosis: Molecular diagnosis, treatment and control) ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে । কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন এর অর্থায়নে এবং ভেটেরিনারী অনুষদের মেডিসিন বিভাগের আয়োজনে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষিবিশ^বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ এর ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান ।
গেস্ট অব অনার ছিলেন ভেটেরিনারি অনুষদ ডীন প্রফেসর ড. মকবুল হোসেন, ডা. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস, নির্বাহী পরিচালক, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন, ফার্মগেট। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক ও প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর প্রফেসর ড. মোঃ সিদ্দিকুর রহমান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রফেসর ড. শ্যামল কুমার পাল, পিন্সিপাল, নেত্রকোণা মেডিকেল কলেজ, নেত্রকোণা, ডা. মোঃআবু সাইদ সরকার, পরিচালক, ময়মনসিংহ ডিভিশনাল লাইভ স্টক অফিস, ডা. মোঃ মেহেদী হাসান প্রোগ্রাম স্পেশালিষ্ট, কেজিএফ ও লে. কর্ণেল পিযুষ, কমান্ডিং অফিসার, মিলিটারী ফার্ম, ত্রিশাল। সভাপতি ছিলেন প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুব আলম, প্রধান, মেডিসিন বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মেডিসিন বিভাগের সহযোগী প্রফেসর ড. আজিমুন নাহার।
প্রফেসর ড. মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ১৯৬৭ সালে গরুতে, ১৯৮৩ সালে মানুষ ও ছাগলে, ১৯৯৭ সালে মহিষে, ২০০৭ সালে ভেড়াতে, ২০১২ সালে শূকরে এবং ২০১৮ সালে ঘোড়াতে ব্রুসেলোসিস সনাক্ত করা হয়েছে। এই রোগ প্রাণীর গর্ভাবস্থায় শেষ দিকে গর্ভপাত ঘটায়, মৃত ও দুর্বল বাচ্চার জন্ম দেয়। জরায়ু প্রদাহ জনিত কারনে প্রাণীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে, আক্রান্ত পশুর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংস্পর্শে, আক্রান্ত পশুর স্বল্প জ্বাল দেয়া দুধ, মাংস খাওয়ার মাধ্যমে। ব্্রুসেলোসিস রোগে আক্রান্ত মানুষের দুর্বলতা, পেশি ও গিরায় ব্যাথা, ঘনঘনজ্বর দেখা দেয়। তাছাড়া গর্ভবতী মা থেকে শিশুতে এবং আক্রান্ত মায়ের দুধ পান করলেও শিশুতে এই রোগ সংক্রামিত হতে পারে।
তিনি আরওব লেন , ব্রুসেলোসিস রোগ প্রতিরোধের জন্য উন্নত দেশ সমূহে এস ১৯ এবং আর বি ৫১ নামক দুইটি টীকা বহুল ব্যবহৃত আছে, কিন্তু এর বেশ কিছু অসুবিধাও পরিলক্ষিত আছে। আবার অনেক সময় গর্ভবতী প্রাণিতে গর্ভপাত ও ঘটতে পারে এই টীকা ব্যবহারের ফলে। তাছাড়াও ব্রুসেলা অ্যাবরটাস এর প্রায় ৮টি ভ্যারাইটি এই রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। সম্প্রতি গবেষণালদ্ধ ফলাফল থেকে জানা যায় যে আমাদের দেশে ব্রুসেলা অ্যাবরটাস বায়োভার ৩ এই রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। তাই বিদেশ থেকে এই টীকা আমদানি করার পূর্বে আমাদের দেশীয় জীবাণুর স্ট্রেইন দ্বারা ঘটিত ব্রুসেলা রোগ প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশে ্রুসেলা বায়োভার সনাক্ত করে সেখান থেকে হিটকিল্ডভ্যাক্সিন তৈরী করা হয়েছে। বাংলাদেশে এটিই ব্্রুসেলোসিস রোগ প্রতিরোধের জন্য টীকা তৈরির প্রথম পদক্ষেপ।
সাভার ডেইরি ফার্ম, মিলিটারি ফার্মগুলোর গাভী গুলোকে ব্রুসেলোসিস রেপিডকিট ও রোজ বেক্সগল টেষ্ট এর মাধ্যমে ব্রুসেলোসিস আক্রান্ত প্রাণী গুলোকে সনাক্ত করা হয়। সনাক্তকৃত প্রানগিুলোকে ল্যাবরেটরিতে এলাইজা ও পিসি আর এর মাধ্যমে সঠিক ভাবে যাচাই করা হয়। গবেষণায় ব্রুসেলোসিস আক্রান্ত গাভীকে চিকিৎসার মাধ্যমে পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে যাবাংলাদেশে প্রথম।
বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি বহুলাংশেই পশুপালন কেন্দ্রিক, এটি একটি বহুল পঠিত বাক্য। কিন্ত বর্তমানে শুধু গ্রামীণ অর্থনীতিই নয়, শহরাঞ্চলেও ব্যাক্তিগত উদ্যেগে পশুপালন খুবই জন প্রিয় হয়ে উঠেছে। আমাদের এই বহুল সম্ভাবনাময় প্রানি সম্পদ খাতকে নানাবিধ রোগব্যাধি থেকে রক্ষা করা এবং এর সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর জন্য কাজ করা আমাদের দায়িত্ব।
ব্রুসেলোসিস রোগটি পশুসম্পদের ক্ষতি সাধন করে আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট ক্ষতি সাধনের পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থের জন্যেও হুমকির কারণ। তাই প্রতিকার নয় বরং প্রতিরোধই এই রোগের ভয়াবহতা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে, এমনকি পাশ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে এই রোগ প্রতিরোধের জন্য টীকা ব্যবহার করলেও আমাদের দেশে এই ব্যাপারে তেমন কোন উদ্যেগ গ্রহণ করা হয়নি।তাছাড়া অন্যান্য দেশে আক্রান্ত পশুকে মাটিতেপ ুতে ফেলা হয় এবং আমাদের দেশে এর কোন চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি।
উল্লেখ্য মূল প্রবন্ধক বিশিষ্ট ভেটেরিনারিয়ান প্রফেসর ড. মোঃ সিদ্দিকুর রহমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের বিশেষ গবেষনা অনুদানের চেক ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এর কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন স্বর্ণ পদক গ্রহণ করেছেন।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান ও প্রফেসর ড. ইয়াজ উদ্দিন আহম্মেদের কাছ থেকে যথাক্রমে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স স্বর্ণ পদক ও বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণ পদক গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ কৃষিবিশ^বিদ্যালয় থেকে “সেরা প্রকাশনা পুরস্কার-২০১২” অর্জন করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে “লাইভস্টক ডেভেলপমেন্ট এ্যাওয়ার্ড-২০১৯” ও মাননীয় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে “কাশিয়ানী উপজেলার কৃতি সন্তান সম্মাননা পদক-২০২০” গ্রহণ করেছেন।
কৃষিবিদ প্রফেসর ড. মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বাকৃবি ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালের পরিচালক ও ২ বার মেডিসিন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি ২ জন উপসচিব, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১জন কর্ণেল, ২জন লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ও ১ জন মেজর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রায় ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীর গবেষণা পরিচালনা করেছেন।
তিনি ২৩টি বই, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত ১৩০টি গবেষণা প্রবন্ধ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ১০৭টি কনফারেন্স পেপার ও ৭৫টি পপুলার আর্টিকেল এর লেখব। তিনি ১৯৯৬ সালে বাকৃবি মেডিসিন বিভাগে লেকচারার হিসাবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০০৮ সালে যথাক্রমে সহকারী প্রফেসর, সহযোগী প্রফেসর ও প্রফেসর পদ লাভ করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষিবিশ^বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ এর মেডিসিন বিভাগে জেষ্ঠ্যতম প্রফেসর হিসেবে কর্মরত।