গফরগাঁওয়ে ‘ভেঙে ফেলা’ ড্রাম চিমনীর ইটভাটা এক দিনের মধ্যে ফের চালু

প্রকাশিত: ৭:৪৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২১

ষ্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চামুরথা গ্রামে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ভেঙে ফেলা ড্রাম চিমনীর অবৈধ, অনুমোদনহীন ‘এমবিবি’ নামক ইটভাটা একদিন না যেতেই নতুন করে ইট পোড়ানো শুরু করেছে।

লোকালয় এবং তিন ফসলী জমিতে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে স্থাপিত অবৈধ ও অনুমোদনহীন এই ইটভাটায় গত ১ ফেব্রুয়ারি সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্টেট মোঃ তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালায়।

ভ্রাম্যমান আদালত ইটভাটার মালিক পক্ষকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে এবং ইটভাটাটি ‘ভেঙে’ ফেলার অংশ হিসেবে ইটভাটার ড্রামচিমনী ভাটা থেকে ফেলে দেয় ।

কিন্ত সোমবার বিকালেই এমবিবি নামক ইটভাটার মালিকপক্ষ ড্রামচিমনীটি পুনরায় স্থাপন করে এবং মঙ্গলবার সকাল থেকেই ইটভাটাটি চালু করে দেয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহের বিভাগীয় পরিচালক ফরিদ আহমদে ও উপপরিচালক মিহির লাল সরকারের নেতৃত্বে একটি টিম চলতি মৌসুমে কমপক্ষে দুইবার এই ইটভাটায় অভিযান চালিয়েছে। কিন্ত ইটভাটাটি বন্ধ করতে পারেনি।

ইটভাটার মালিকপক্ষের দাবী প্রশাসনের লোকজনের সাথে কথা বলেই তারা ইটভাটাটি চালু রেখেছে । প্রশাসনের লোকজন বলছে অবৈধ, অনুমোদনহীন ইটভাটা কোন অবস্থাতেই চলতে দেওয়া হবে না।
স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, ফলফলাদির গাছ, সবুজের ফসলের মাঠ নিয়ে শীলা নদীর পাড়ে চামুরথা গ্রামটিতে হাজারখানেক পরিবার বাস করে।

এরই মধ্যে মোঃ হাবিবুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি যৌথ মালিকানায় দুই বছর আগে গ্রামের শামছুল হক ফাজিল মাদ্রাসার পাশে, লোকালয়ে, তিন ফসলি জমিতে এমবিবি নামক অবৈধ, অনুমোদনহীন ড্রাম চিমনীর ইটভাটাটি স্থাপন করে। এরপর থেকেই গ্রামটিতে এখন ঝড়ে যাচ্ছে আম, লিচু, পেয়ারা ও ডাবের গুটি। নষ্ট হচ্ছে শাকসবজি ও ফসলের জমি। মাঝে মধ্যেই মারা যাচ্ছে কবুতরসহ গৃহপালিত হাসঁ-মুরগি। শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন গ্রামের বৃদ্ধ ও শিশু এবং ইটভাটার পারশ্ববর্তী শামছুল হক ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। ইটভাটার পাশে শীলা নদীতে মাছের আধার কমে গেছে।

চলতি মৌসুমে এমবিবি ইটভাটাটি চালুর উদ্যোগ নিলে স্থানীয় এলাকাবাসী বাঁধা দেয়। তারা জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বিহীন এই অবৈধ ইটভাটাটি বন্ধের জন্য পরিবেশ অদিদপ্তরে বার বার ধর্না দেয়। এ নিয়ে দৈনিক যায়যায়দিনসহ বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়।

এ পরিস্থিতিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এই ইটভাটায় বার বার অভিযান চালিয়ে মালিক পক্ষকে ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দিলেও প্রভাবশালী মালিকপক্ষ তা কানে তোলে নি। গত ১ ফেব্রুয়ারি সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্টেট মোঃ তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান ইটভাটাটি ‘ভেঙে’ ফেলার অংশ হিসেবে ইটভাটার ড্রামচিমনী ভাটা থেকে ফেলে দেয় । পাগলা থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এই অভিযানে অংশ নেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী একাধিক গ্রামবাসি জানায়, ইটভাটার মালিকপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনের লোকজনও তাদের ঘাটাতে চায় না। ইটভাটাটি পুরোপুরি বন্ধ করে না।
আবার ইটভাটা চালু করা প্রসঙ্গে মালিক মোঃ হাবিবুল্লাহ বলেন, কর্মকর্তারা ইটভাটায় এসেছিলেন । জরিমানাও করেছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না।

পরিবেশ অধিদপ্তর, ময়মনসিংহের উপপরিচালক মিহির লাল সরকার বলেন, বার বার অভিযানের পর এই ইটভাটা চালু করা হয়েছে। এখন মামলা ছাড়া উপায় নেই।