জাহাঙ্গীর হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার : লোকে বলে মাছে-ভাতে বাঙালি। কিন্তু জন্মের পর থেকে ২১ বছর ধরে ভাত না খেয়ে দিব্যি বেঁচে আছে মাহিদ হাসান লাভলু নামে এক যুবক। লাভলুর বাড়ি শেরপুরের নকলা উপজেলার বানেশ্বর্দী ইউনিয়নের বাউশা কবুতরমারী গ্রামে।
তার পিতার নাম আলম মিয়া ও মাতা লাল ভানু। বর্তমানে সে শেরপুর সরকারি কলেজে গণিত বিষয়ে স্নাতক শেষ বর্ষে লেখাপড়া করছে।
লাভলুর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সুস্থ্য ও স্বাভাবিকভাবেই জন্ম হয় মাহিদ হাসান লাভলুর। জন্মের পর তার কোনো সমস্যাই ছিল না। কিন্তু সমস্যা শুরু ৬ মাস বয়সে প্রথম মুখে ভাত দেওয়ার সময়। শিশু লাভলুর মুখে প্রথমবার ভাত দিতেই সে ভীষণ কান্নাকাটি শুরু করে মুখের ভাত বমি করে ফেলে দেয়। এরপর অনেক চেষ্টা করেও তাকে আর ভাত খাওয়াতে পারেনি পরিবারের লোকজন। ভাতের বিকল্প হিসেবে তাকে দুধ, কলা খাওয়ানো শুরু করে তার পরিবার। ৫/৬ বছর পর্যন্ত শুধু দুধ, কলা খেয়েই বেড়ে ওঠতে থাকে লাভলু। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে খাবারের চাহিদাও বাড়ছিল তার। সেজন্য বয়স ৫/৬ বছর পর থেকে তাকে ডিম, ডাল, ডারবি বুট ও ছোলা খেতে দেওয়া হয়।
লাভলুর মা জানান, তাকে জন্মের ৬ মাস পর চাল দিয়ে রান্না করা নরম খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ভাত খাওয়ানোর জন্য তাকে মারধর করেও কোন ফল হয়নি । বর্তমানে তার বয়স ২১ বছর । এখন তাকে তার মতো করেই খাবার খেতে দেওয়া হয়। লাভলুর মা আরো জানায়, দিনে ৩ বেলা রান্না করার সময় লাভলুর জন্য আলাদাভাবে রান্না করতে হয়।
লাভলুর বাবা জানায়, ছেলের সমস্যার কথা ভেবে অনেক কষ্টে টাকা যোগাড় করে ডাক্তার দেখিয়েছি, পরীা-নিরীা করিয়েছি। কিন্তু কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। ভাত না খাওয়ায় প্রত্যেকদিন ডিম, ছোলা, ডাল এসব খাবারের পেছনে আমার অনেক খরচ হয়। একসময় রিক্সা চালাতাম ও দিনমজুরের কাজ করতাম পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য। পরবর্তীতে লাভলুর টিউশনির টাকা দিয়ে মোটামোটিভাবে সংসার চলে যাচ্ছিল। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে এখন স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকায় ছেলের টিউশনির ছাত্র-ছাত্রী কমে গেছে। বর্তমানে টিউশনি থেকে সে যা পায় সে টাকা তার খাবারের পেছনেই খরচ হয়ে যায়। তাই সংসারে এখন সবসময় অভাব অনটন লেগেই থাকে।
লাভলু জানায়, ভাত দেখলেই আমার খারাপ লাগে। ছোলা আমার প্রধান খাবার। এতেই আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমার স্বাস্থ্য ভাল, শরীরে কোনো সমস্যা নেই। শক্তিও আছে প্রচুর। এইচএসসি পাশ করার পর থেকেই সংসারের অভাব মেটাতে টিউশনি শুরু করি। পরিবারের চাহিদা মেটাতে টিউশনির টাকা কি যথেষ্ট এমন প্রশ্নের জবাবে লাভলু জানায়, করোনাকালীন সময়ের আগে অনেক ছাত্র-ছাত্রী ছিল। রোজগারও ছিল বেশি। কিন্তু বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি জটিল হওয়ার কারণে ছাত্র-ছাত্রী কমে গেছে। তাই একটু কষ্ট করেই চলতে হচ্ছে। তবে লাভলুর ইচ্ছা যদি একটা চাকরি পাই তাহলে মা-বাবাকে নিয়ে বাকি জীবনটা হয়ত কোনভাবে পার করে দিতে পারব।
বানেশ্বর্দী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাজাহারুল আনোয়ার মহব্বত বলেন, ছেলেটির কথা তিনি শুনেছেন। পরিবারটি খুব অসহায়। তাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতা করা হবে।