ময়মনসিংহে র‌্যাবের অভিযানে চার জঙ্গি আটক ॥ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার

প্রকাশিত: ৪:৪৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : ময়মনসিংহে র‌্যাবের সাথে জঙ্গিদের গোলাগুলির সময় অস্ত্রসহ ৪জঙ্গিকে আটক করেছে র‌্যাব। ৪ সেপ্টেম্বর শনিবার ভোর রাতে নগীর খাগডহর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে এ ঘটনা ঘটে।

আটককৃতরা হলো, জুলহাস উদ্দিন ওরফে কাদেরী ওরফে মেহেদী (৩৪), রোবায়েদ আলম ওরফে ধ্রুব ওরফে রুব, মোঃ আলাল ওরফে ইসহাক ও আবু আইয়ুব ওরফে খালিদ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ টি বিদেশী পিস্তল, ১ টি ম্যাগাজিন, ৩ রাউন্ড গোলাবারুদ, ৮ টি বোমা সদৃশ্য বস্তু, ৪ টি ব্যাগ, দরজা ও লক ব্রেকিং বিভিন্ন সরঞ্জামাদি এবং একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা জব্দ করে র‌্যাব।

র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন শনিবার দুপুরে র‌্যাব-১৪ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

তিনি আরো জানান, গোয়েন্দাসূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ ও জামালপুরে জঙ্গিদের বিভিন্ন গতিবিধি নজরে আসে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার মধ্য রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৪ এর অভিযানে ডাকাতি প্রস্তুতিকালে জেএমবি’র সক্রিয় চার সদস্যকে আটক করে অভিযানকালে জঙ্গিদের সাথে র‌্যাবের গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে।


প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা তাদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র এহসার সদস্য। এই স্তরের সদস্যরা বিভিন্ন জঙ্গি অপারেশনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে থাকে। তারা সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডাকাতির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় বলে জানায়। এ বিষয়ে জামালপুরের একটি গোপন আস্তানায় বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারা অপরাধ সংগঠনে বাছাইকৃত ১০-১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ জঙ্গি দল গঠন করে ময়মনসিংহের কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও, স্বর্ণালঙ্কার দোকান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে একটি টার্গেট নির্ধারণ করেছে। জল ও স্থলপথের সমন্বয় ঘটিয়ে ঘটনাস্থলে আগমনের পরিকল্পনা করা হয়। এক্ষেত্রে পরিকল্পনায় নৌকা, মাইক্রোবাস ও বাইক ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত ছিল। লুটকৃত অর্থ ময়মনসিংহের একটি এলাকার অপর একটি দলের কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা ছিল।

আটককৃতদের বরাত দিয়ে র‌্যাব আরো জানায়, গত ৩১ আগস্ট ২০২১ জামালপুরের মাদারগঞ্জের একটি আস্তানায় তারা জড়ো হয়। পরবর্তীতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে জামালপুরের জামতলা চর এলাকা থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকাযোগে যাত্রা শুরু করে। গোপনীয়তা বজায় রাখতে পথিমধ্যে তারা বিভিন্ন চরে যাত্রা বিরতি করে। শনিবার মধ্য রাতে ব্রহ্মপুত্র নদী দিয়ে ময়মনসিংহের খাগডহর এলাকায় পৌছায়।
এই ডাকাতির নেতৃত্বে ছিল গ্রেফতারকৃত জঙ্গি জুলহাস। তার নেতৃত্বে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে দায়িত্ব পালনের পরিকল্পনা করেছিল। আটককৃত রোবায়েদ এর সিটিটিভি ও তথ্য প্রযুক্তির বিষয়াদি দেখভাল করার দায়িত্ব ছিল।

তিনি আরো জানান, জঙ্গি জুলহাস ২০০৫ সালে মুক্তাগাছা থেকে আলিম পাশ করে। ২০০২ সালে জামালপুরে একটি মাদ্রাসায় দাখিল অধ্যায়ণরত অবস্থায় এক ট্রেইলার মাষ্টারের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। পরে মুক্তাগাছায় অধ্যায়ণরত অবস্থায় সে জেএমবি’তে যুক্ত হয়। সেসময় মুক্তাগাছার একজন আঞ্চলিক নেতার অধীনে সে বায়াত গ্রহণ করে। উক্ত বায়াত গ্রহণে ১০ জন জেএমবি সদস্য অংশগ্রহণ করে। উক্ত ১০ জেএমবি সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা গ্রেফতারও হয়েছে। অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছে। বায়াত প্রদানকারী আঞ্চলিক নেতা বাংলা ভাইয়ের একজন ঘনিষ্ঠ সহচর।

উক্ত নেতার মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত জুলহাস এর বাংলা ভাই ও শীর্ষ জঙ্গি নেতা সালাউদ্দিন সালেহীন এর সাথে পরিচয় ঘটে। বাংলা ভাই ও জঙ্গি নেতা সালাউদ্দিন সালেহীন বিভিন্ন সময়ে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলে অবস্থানকালীন সময়ে বর্ণিত জঙ্গি বিভিন্ন সহায়তা করত। সে ২০০৭ হতে ২০০৯ সাল পর্যন্ত জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় ২ বছর কারা অন্তরীণ ছিল। সে নিজ এলাকায় জঙ্গিবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও সেখানে শিক্ষকতা শুরু করে। উক্ত মাদ্রাসার দুইজন শিক্ষক জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্টতা থাকায় গ্রেফতার হয়। গ্রেফতার এড়াতে ২০১২ সালে আত্মগোপনে চলে যায়। ফলে মাদ্রাসাটি বন্ধ হয়ে যায়। সে টাঙ্গাইলে ও সিরাজগঞ্জ এলাকায় ছদ্মনামে বিভিন্ন মাদ্রাসা, মসজিদে ইমামতি ও শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থেকে জঙ্গি কার্যক্রমে সক্রিয় ছিল।

জঙ্গি রোবায়েদ ময়মনসিংহের একটি কলেজ হতে অনার্স সম্পন্ন করে। অধ্যায়ণরত অবস্থায় এক সহপাঠীর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। অতঃপর সে জেএমবি’তে যোগদান করে। ২০১৩ সালে ময়মনসিংহে একটি নাশকতা মামলায় বেশ কয়েকদিন কারা অন্তরীণ ছিল। এছাড়াও সে ২০১৫ সালে ঢাকার একটি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ইংরেজীতে এমএ সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে সে কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রোগ্রামের উপর প্রশিক্ষণ নেয়। সে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা ও টেকনাফে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত ছিল। সে শিক্ষকের ছদ্মবেশেও উক্ত এলাকা ও প্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদ প্রচার করত। সে জেএমবি সাইবার দলের সাথে সম্পৃক্ত থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। সে করোনাকালীন সময়ে অনলাইন দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে বেশ কয়েকজনকে জঙ্গিবাদে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
জঙ্গি আইয়ুব উত্তরবঙ্গের একটি বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএসসি (অনার্স) সম্পন্ন করে। ২০১৯ সালে উত্তরবঙ্গের সাইবার দলের প্রধানের মাধ্যমে জেএমবি’তে অন্তর্ভুক্ত হয়। সে উত্তরাঞ্চলের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মধ্যে জেএমবি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়।

জঙ্গি আলাল ওরফে ইসহাক ২০১০ সালে জুলহাসের মাধ্যমে জেএমবি’তে অন্তর্ভুক্ত হয়। আটককৃতদের বিরুদ্ধে ল্যাব বাদি হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছে।